তারা একদিনের কসাই

ব্যক্তি জীবনের পেশা ভিন্ন হলে কোরবানির দিনে কসাই বনে যান এক শ্রেণির শ্রমজীবী মানুষ। এ একদিনের জন্য তারা পুরোদস্তুর কসাই হয়ে যান। পারিশ্রমিক বেশি এবং পেশাদার কসাইয়ের সংকটে অনেক অপেশাদার এ দিন কসাইয়ের কাজটি বেছে দেন। বিনিময়ে তারা আয় করেন বেশ ভালো পরিমান অর্থ। কোরবানির পশুর দামের ভিত্তিতে এ কসাইরা তাদের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করেন । পশুর দামের বিপরীতে ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে তারা পারিশ্রমিক নেন। রাজধানীবাসীর কাছে তারা ‘একদিনের কসাই’ হিসেবে পরিচিত।
দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকে কোরবানির সময় কসাইয়ের কাজ করার জন্য প্রতিবছর দল বেধেঁ ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় অবস্থানরহ অনেক রিক্সাচালকসহ শ্রমিক শ্রেণিরাও তাদের সাথে যুক্ত হন। মোটামুটি অভিজ্ঞ একজন কসাইয়ের সাথে ৪/৫ জন করে সহযোগী থাকেন। তারা কোরবানির একাধিক পশুর মাংস তৈরি করে দেয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। এক একটি কসাইয়ের দল তিন/চারটি গরুর দায়িত্ব নেন। আগের কোরবানিতে কাজ করে গেছে এমন বাসায় অনেকে পরের বছরও দায়িত্ব পালনে অগ্রাধিকার পান। তারা কোরবানির দুই/তিন আগে পশুর হাটে বসে বা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজেদের কাজ চূড়ান্ত করেন। এসব কসাইয়ের কাছে গরু জবাই করার ছুরি, চাপাতি থেকে শুরু করে সব ধরনের জিনিসপত্র রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- কসাই হিসেবে চুক্তিবদ্ধ মজুরির পাশাপাশি মাথার চামড়া, সিং, চর্বিসহ গরুর কম গুরুত্বপূ্র্ণ কিছু মাংস ও হাড়গোড় তারা বিনামুল্যে পান। পরে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে সেগুলো বিক্রি করেন।
রংপুর থেকে আবদুল মালেকের নেতৃত্বে ছয়জনের একটি দল ঢাকায় এসেছে। সারাবছর অন্য কাজ করলেও কোরবানির দিন কসাইয়ের কাজ করার জন্য তারা ঢাকা এসেছেন।
সারা বছর কী কাজ করেন– জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকায় কৃষিকাজ, মাটি কাটাসহ যখন যে কাজ পান সেটাই করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ শহরে এসে রিকশাও চালান বলে তিনি জানান।
মালেকের মত কয়েক হাজার লোক একদিনের কসাইয়ের কাজ করতে ঢাকায় এসেছেন। রাজধানীর আবতাবনগরের গরুর হাটের সামনে কথা হয় সুমনসহ কয়েকজন মৌসুমী কসাইয়ের সাথে। তারা জানান, এখানে তারা কাজ ঠিক করতে এসেছেন। বাড্ডা এলাকায় একটি গরুর কাজ ঠিক হয়েছে। ওই এলাকায় বাসা এমন আরো দুই/একজনের সাথে চুক্তি করার জন্য চেষ্টা করছেন। কোন গরু বিক্রি হলে যারা কিনছেন তাদের সাথে এ জন্য কথাবার্তা বলছেন।
আয় কেমন জানতে চাইলে সুমন বলেন, সারা বছর ঢাকায় রিকশা-ভ্যান চালাই। গত পাঁচ বছর ধরে ঈদের দিন কসাইয়ের কাজ করি। রিকশা চালিয়ে যে টাকা আয় হয় এ কাজ করলে একটু বেশি আয় হয়। তবে খরচও আছে। কষ্টও আছে। অনেক সময় হাত পা কেটে যায়।
পেশাদার কসাইরা বলছেন, ঢাকায় কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ গরু-ছাগল ও মহিষ কোরবানি হয়। কিন্তু পেশাদার কসাই আছেন ১-৩ হাজার। পেশাদার কসাইরা সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পশু কাটার কাজ করতে পারেন। বাকি কাজ করে থাকে অপেশাদার কসাই। তাদের অনেকের ন্যূনতম প্রশিক্ষণ না থাকায় সময় যেমন বেশি লাগে, তেমনি অনেক সময় পশুর চামড়াও নষ্ট করে ফেলেন।
জুরাইনের একটি মাংস দোকানের কসাই সাইফুল্লাহ বলেন, তাদের কাজের অর্ডার ঈদের ১৫ দিন আগে থেকে বুকিং হয়ে যায়। এদিন ছোট গরু হলে ৪-৫টা কাজ করতে পারি। আর বড় গরু হলে ৩টা পর্যন্ত করা যায়। আসলে সবাই চায় সকাল-সকাল কাজ শেষ করতে। তাই চাইলেও বেশি গরুর কাজ নিতে পারি না। তবে ঢাকায় অনেকে ঈদের পরের দিনও কোরবানি দিয়ে থাকে। সবমিলিয়ে এসময় ৭-৮টা গরুর কাজ করতে পারি।
কেমন টাকা নেন– জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাদের কাজ করি সবাই পরিচিত। সাধারণ গরুর দামের প্রতি হাজারে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা নিই। এখানে একটু কম-বেশি হয়।