টিপু-প্রীতি হত্যা সাক্ষ্য টিপুর স্ত্রীর, জানালেন হুমকি পাওয়ার কথা
মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতি হত্যা মামলার বিচার শুরুর দিনে সাক্ষ্য দিতে এসে টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি আসামিদের কাছ থেকে হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আলী হোসাইনের আদালতে বৃহস্পতিবার মামলার বাদী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত কাউন্সিলর ডলির জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা শুরু করেন।
তবে এদিন জেরা শেষ না হওয়ায় আগামী ১৮ জুলাই পরবর্তী শুনানির তারিখ রেখেছে আদালত। আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, স্বাভাবিকভাবেই জবানবন্দি দেয়ার সময় ফারহানা ইসলাম ডলি বেশ আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও যেসব আসামি কাঠগড়ায় ছিলেন, তিনি (ডলি) তাদেরকে চেনে বলে ভাষ্য দেন। যদিও তিনি এজাহারে আসামিদের পরিচয় অজ্ঞাত বলেছিলেন। এ আইনজীবী আরো বলেন, জবানবন্দিতে বাদী জানান, অভিযোগপত্রে যেন নাম না আসে সেজন্য চার আসামি তাকে হুমকি দেন, এ কারণে থানায় জিডি করেন কয়েকবার।
আলোচিত এ মামলায় গত ২৯ এপ্রিল বিচারক আলী হোসাইন অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে ৩৩ আসামির বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়ে ২১ মে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন ঠিক করে দেন। তবে বিচারক ছুটিতে থাকায় ওইদিন সাক্ষ্য দিতে না পেরে আদালত থেকে ফিরে যান বাদী ডলি। ওইদিন সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২০ জুন পরবর্তী তারিখ রাখা হয়েছিল।
এদিন সাক্ষ্য শুরুর দিনে আদালতে হাজির হন জামিনে এবং কারাগারে থাকা আসামিরা।
অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ছাড়াও, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও জাতীয় পার্টির একাধিক পদধারী নেতা এবং সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর রয়েছেন।
২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাতে ঢাকার শাজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়।
খিলগাঁও রেল গেইটের কাছে মোটরসাইকেলে আসা এক ব্যক্তি যানজটে আটকে পড়া টিপুর গাড়ির কাছে এসে তাকে গুলি করে।
হামলাকারীর এলোপাতাড়ি গুলিতে গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা কলেজছাত্রী প্রীতিও মারা যান। এ হত্যাকা- ওই সময় আলোচনা তৈরি করে।
ওই রাতেই টিপুর স্ত্রী স্থানীয় নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করেন।
এ ঘটনায় পরের বছর ৫ জুন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার।
সেখানে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ‘সত্যতা’ পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়। তবে ‘এক্সএল সোহেল’ নামে এক সন্দেহভাজনের পরিচয় নিশ্চিত করতে না পারায় তাকে বাদ দিয়ে আসামি করা হয় ৩৩ জনকে।
অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মারুফ আহমেদ মনসুর, জিসান আহম্মেদ মন্টু, মানিক ওরফে জাফর, সুমন সিকদার মুসা, মাসুম মোহাম্মদ আকাশ, শামীম হোসাইন, তৌফিক হাসান ওরফে বাবু, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মারুফ রেজা সাগর, ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরিফুর রহমান ওরফে সোহেল।
এছাড়া মতিঝিল থানা জাতীয় পার্টির নেতা জুবের আলম খান রবিন, হাফিজুল ইসলাম হাফিজ, হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সোহেল শাহরিয়ার, মাহবুবুর রহমান টিটু, নাসির উদ্দিন মানিক, মশিউর রহমান ইকরাম, ইয়াসির আরাফাত সৈকত, আবুল হোসেন মোহাম্মদ আরফান উল্লাহ ইমাম খান, সেকান্দার শিকদার আকাশ, মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম মাতবর, আবু সালেহ শিকদার, কিলার নাসির, ওমর ফারুক, মোহাম্মদ মারুফ খান, ইশতিয়াক আহম্মেদ জিতু, ইমরান হোসেন জিতু, রাকিবুর রহমান রাকিব, মোরশেদুল আলম পলাশ, রিফাত হোসেন, সোহেল রানা, ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক নেতা আমিনুল, সামসুল হায়দার উচ্ছল এবং ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামানেরও বিচার হবে এ মামলায়।
এই ৩৩ জনের মধ্যে জিসান আহমেদ মন্টু, মো. মানিক, মো. রিফাত, মো. সোহেল রানা, মো. আমিনুল, মো. কামরুজ্জামান পলাতক।
আসামিদের মধ্যে মুসা, শুটার আকাশ ও নাসির উদ্দিন মানিক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সোনালী বার্তা/এমএইচ