শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:১০ পূর্বাহ্ন

ডেঙ্গু আক্রান্তে-মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১৩৩ Time View
Update : শুক্রবার, ২১ জুন, ২০২৪

ফের বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। চলতি বছর সাড়ে ৬ মাসে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৩৬ জন। প্রাণহানিতে পুরুষের চেয়ে নারী বেশি। রাজধানীর তুলনায় ঢাকার বাইরে রোগী দ্বিগুণ শনাক্ত হচ্ছে। এডিস মশাবাহিত এই রোগ গত বছরের চেয়েও ভয়ঙ্কররূপে ফেরার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় রোগীর ভোগান্তি এড়াতে আগাম প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

দেশের খ্যাতিমান মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, এবার ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। যারা কয়েকবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন তারাই বেশি মারা যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, সকলের সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। জ্বর হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার তাগিদ দেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত বছর ২০শে জুন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ৩৬ জনের। চলতি বছরের একই তারিখ পর্যন্ত প্রাণহানি হয়েছে ৪১ জনের। গত বছর উল্লিখিত তারিখ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগী ছিল ৫ হাজার ৫৬৪ জন। এবার ভর্তি হয়েছে ৩ হাজার ৩০৪ জন। দেশে রেকর্ড সংখ্যক ২০২৩ সালে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় এবং মারা যায় ১ হাজার ৭০৫ জন।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, কৃত্রিম সংকট মোকাবিলা করতে চাহিদার চেয়ে বেশি স্যালাইন উৎপাদন হওয়া প্রয়োজন। এ কারণে উৎপাদন বাড়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সব হাসপাতালে স্যালাইন কিনে মজুত রাখতে হবে। মার্চ থেকে অক্টোবরকে ডেঙ্গুর মৌসুম ধরা হয়। এ সময়ে সারা দেশে প্রতি মাসে স্যালাইনের চাহিদা থাকে প্রায় ৫০ লাখ লিটার। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে না। এই সময়ে এ ধরনের স্যালাইনের মাসিক চাহিদা থাকে প্রায় ৩০ লাখ লিটার।

চলতি বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি কেমন হতে পারে-এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, এবার গতবারের চেয়েও ভয়ঙ্কর রূপে ফিরবে ডেঙ্গু। ঢাকার বাইরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি বেশি খারাপ হবে। রোগটি প্রতিরোধে ঢাকায় নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও ঢাকার বাইরে তো কিছুই করা হয় না। তাই সেদিকে নজর দেয়া জরুরি।

সম্প্রতি ডেঙ্গু প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, সব রোগের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে যাতে রোগটি কারও হওয়ার আগেই প্রতিরোধ করা যায়। যাতে মানুষের ডেঙ্গু না হয়। সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। মশা নির্মূলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমি নির্দেশনা দিয়েছি যাতে ডেঙ্গুকালীন সময়ে কোনোভাবেই স্যালাইন সংকট দেখা না দেয় এবং স্যালাইনের দামও না বাড়ে। এ ছাড়া হাসপাতালগুলোকে খালি রাখার ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দিয়েছি।

গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ২৭ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এবছর ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩০৪ জনে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। এরমধ্যে নারী ২১ জন এবং পুরুষ ২০ জন। মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজধানীতে ২৯ জন এবং ঢাকার বাইরে বরিশালে ৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে ডেঙ্গুতে। চলতি বছরের এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩ হাজার ১৩৪ জন।

ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৯৯৩ জন এবং নারী ১ হাজার ৩১১ জন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে ঢাকা মহানগরে ১ হাজার ১৬৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ২ হাজার ১৪০ জন রয়েছেন।

অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৫৫৫ জন এবং মারা গেছেন ১৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ৩৩৯ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩১১ জন এবং মারা গেছেন ৫ জন, এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫০৪ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে আক্রান্ত রোগী ৬৪৪ জন এবং মারা গেছেন ১২ জন, জুন (২০ তারিখ পর্যন্ত) আক্রান্ত রোগী ৪৫১ জন এবং মারা গেছেন ৫ জন।

দেশের প্রতিটি হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নার স্থাপনের বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর। তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি।

ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকি রাজধানীর ১৮টি ওয়ার্ড: রাজধানীতে মৌসুম শুরুর আগেই বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রভাব। রাজধানী ঢাকার দুই সিটির ১৮টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে বেশি। বহুতল ভবন ৪২ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা ও পিউপা পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার আওতাধীন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীনে গত ১৭ই থেকে ২৭শে এপ্রিল পর্যন্ত চালানো প্রাক-বর্ষা জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডগুলো হলো- ১২, ১৩, ২০, ৩৬, ৩১, ৩২, ১৭, ৩৩ নং ওয়ার্ড। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো ৪, ১৩, ৫২, ৫৪, ১৬, ৩, ৫, ১৫, ১৭ ও ২৩ নং ওয়ার্ড।

সোনালী বার্তা/এমএইচ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর