তাইওয়ান ইস্যুতে ফের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র-চীন
চলমান তাইওয়ান দ্বন্দ্বের মধ্যেই ৫ বছর পর আবারও পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। গত মার্চে অনানুষ্ঠানিকভাবে আধা-সরকারি এ আলোচনা শুরু করে দেশ দুটি।
এসময় বেইজিংয়ের প্রতিনিধিরা মার্কিন প্রতিনিধিদের জানিয়েছে, তারা তাইওয়ানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্রের আশ্রয় নেবে না।
আলোচনায় অংশ নেওয়া দুই মার্কিন প্রতিনিধির বরাতে রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ানকে নিজ ভূখণ্ডের অংশ বলেই দাবি করে আসছে চীন। তবে দেশটির এমন দাবি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে যাচ্ছে তাইপে সরকার। এমন আবহে তাইওয়ানকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে চীন কখনোই শক্তি প্রয়োগ ত্যাগ করেনি। বরং গত চার বছর ধরে দ্বীপের চারপাশে সামরিক তৎপরতা ক্রমান্বয়ে আরও বাড়িয়েছে।
চীন-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক এ আলোচনায় চলমান তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। তাদের আশঙ্কা, তাইওয়ানের বিরুদ্ধে সংঘাতে পরাজয়ের মুখোমুখি হলে চীন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে বা ব্যবহারের হুমকি দিতে পারে।
তবে চীনের পক্ষ থেকে ‘এমন কিছুই করা হবে না‘ বলে মার্কিন প্রতিনিধিদের পুরোপুরি আশ্বস্ত করেন চীনা প্রতিনিধিরা। তাদের দাবি, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করেই চীন বাহিনী তাইওয়ানের বিরুদ্ধে প্রচলিত লড়াইয়ে জয়ী হতে পারবে।
‘ট্র্যাক টু’ নামক এ দ্বিপাক্ষিক আলোচনার আয়োজক মার্কিন স্কলার ডেভিড সান্তোরো রয়টার্সকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
‘ট্র্যাক টু’ আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত সাবেক কর্মকর্তা এবং শিক্ষাবিদ হয়ে থাকেন, যারা সরকারের অবস্থানের ওপর কর্তৃত্ব নিয়ে কথা বলতে পারেন। যদিও তারা সরকারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন।
অন্যদিকে দুই দেশের মধ্যকার সরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আলোচনা ‘ট্র্যাক ওয়ান’ নামে পরিচিত।
সাংহাই হোটেলের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত দুই দিনের এ আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কর্মকর্তা ও স্কলারসহ ৫-৬ জনের একটি প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনের প্রতিনিধিত্ব করেন। বেইজিংও তাদের স্কলার এবং বিশ্লেষকদের একটি প্রতিনিধি দল পাঠায়, যাদের মধ্যে ছিলেন বেশ কয়েকজন সাবেক পিপলস লিবারেশন আর্মি অফিসার।
‘ট্র্যাক টু’ আলোচনা ‘ফলপ্রসূ’ হতে পারে জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, মার্চে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কেউই অংশ নেয়নি। যদিও এ বিষয়ে তারা অবগত ছিল। রয়টার্সের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তবে আলোচনার বিষয়ে চীনা প্রতিনিধিদলের সদস্য এবং বেইজিংয়ের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলেও তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
এদিকে হাওয়াইভিত্তিক প্যাসিফিক ফোরাম থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক পরিচালনাকারী মার্কিন স্কলার ডেভিড সান্তোরো যদিও সর্বশেষ এ আলোচনার সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ‘হতাশা’ বিরাজ করছিল বলে বর্ণনা করেছেন। তবুও দুটি প্রতিনিধি দলের মধ্যে কথা চালিয়ে যাওয়ার যথেষ্ট কারণ দেখছেন তিনি। তাই এ নিয়ে ২০২৫ সালে আরও আলোচনা আয়োজনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানান সান্তোরো।
গত মার্চের এ আলোচনায় জড়িত না থাকলেও, হেনরি স্টিমসন সেন্টার থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের পারমাণবিক নীতি বিশ্লেষক উইলিয়াম আলবার্ক বলেছেন, ‘ট্র্যাক টু’ আলোচনাটি মার্কিন-চীনা ‘ঠাণ্ডাযুদ্ধ’ সম্পর্কের সময়ে কার্যকর ছিল।
তার মতে, যখন পারমাণবিক অস্ত্র একটা ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন চীনের সঙ্গে কোনো ধরনের প্রত্যাশা ছাড়াই আলোচনা চালিয়ে যাওয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ।
পরমাণু অস্ত্র নিয়ে ‘ট্র্যাক ওয়ান’ পর্যায়ের আলোচনা গত নভেম্বরে সংক্ষিপ্তভাবে পুনরায় শুরু করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। তবে অবিশ্বাসগত আচরনে একে অপরকে অভিযুক্ত করার কারণে সেই আলোচনা স্থগিত হয়ে যায় এবং শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা সরকারিভাবে প্রকাশ্যে চীনের প্রতিক্রিয়ায় হতাশা প্রকাশ করে।
পেন্টাগন অনুমান করে যে, বেইজিংয়ের পারমাণবিক অস্ত্রাগার ২০২১ ও ২০২৩ সালের মধ্যে ২০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। সেইসঙ্গে তারা তাইওয়ানে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়েও উদ্বেগ জানিয়ে আসছে।
সোনালী বার্তা/এমএইচ