শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৮ পূর্বাহ্ন

পেঁয়াজ সংরক্ষণে ‘মডেল ঘর’ কতটা কাজে দেবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৭১ Time View
Update : শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪

পেঁয়াজ সংরক্ষণে তৈরি করা মডেল ঘর রাজবাড়ীর কৃষকদের মাঝে সাড়া ফেলেছে। কৃষি অধিদপ্তর থেকে করে দেওয়া এসব ঘরে দীর্ঘদিন পেঁয়াজ সংরক্ষণের পাশাপাশি বেশি দামে বিক্রির আশা করছেন চাষিরা।

জেলার কালুখালী উপজেলায় ২০টি এবং বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৩০টি মডেল ঘর নির্মাণ করে কৃষকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান রাজবাড়ীর কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. আকমল হোসেন।

মডেল ঘর পাওয়া বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের চরবহরপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি আব্দুল গফুরের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছিলেন, “প্রতিবছর পাঁচ থেকে ছয়শ মণ পিজ পাই। ঘরে থুয়ার জাগা না থাহায় পচে যায়, সে সময় লস যায় আমাদের। তার জন্নি ভুঁই থেকে পিজ উঠানোর পরই বেচে দিতাম। তাড়াতাড়ি বেচার কারণে লস হত।

এ বছর কিছু বেচে দিছি আর কিছু রাখে দিছি সরকারের দেওয়া ঘরে। প্রতি বছর যে চিন্তা থাকত পিজ কনে রাখব, কী করব? এই চিন্তা দূর হয়ছে এখন। ঘর প্যায়া মেলা সুবিধা হাইছে।

এই ঘরে শুনিছি ৩০০ মণ পিজ রাহা যাবি। এক মাচায় একশ মণ রাকছি, আরও পঞ্চাশ মণ রাখতে পারব। ঘর করে দিয়ে সরকার ভালো সুবিধাই দিছে আমাদের।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানিয়েছে, আব্দুল গফুরের মত পেঁয়াজ সংরক্ষণের চিন্তা দূর হয়েছে কালুখালী ও বালিয়াকান্দি উপজেলার ৫০ চাষির। বাড়ির উঠান বা ফাঁকা জায়গায় মাত্র এক শতাংশ জমিতে টিন-বাঁশ, লোহা ও কংক্রিটের সমন্বয়ে তৈরি করা এ ঘরে ছয়টি তাপ নিয়ন্ত্রণ ফ্যান ও তিন স্তরের মাচা রয়েছে।

চার লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা প্রতিটি ঘরে সংরক্ষণ করা যায় সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মণ পেঁয়াজ। প্রতিটি ঘরে আলাদা আলাদা স্তরে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবেন অন্তত পাঁচ কৃষক। এ ঘরে নয় মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ ভালো থাকে।

বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের রাজধরপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি আলিমুজ্জামান বলেন, “সরকার এই ঘর দেওয়াতে আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। আগে মৌসুমের শুরুতেই পেঁয়াজ বিক্রি করে দিতাম। এখন মডেল ঘরে পেঁয়াজ রেখে দিছি।

নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে পেঁয়াজ বিক্রি করলে ভালো দাম পাব। ঘরে তিনটি মাচায় ফ্যান রয়েছে। ৩০০ মণ পেঁয়াজ রাখছি। এতে আমাদের অনেক উপকার হয়েছে।

একই গ্রামের কৃষক মো. সরোয়ার বলেন, “এই ঘরে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রাখা সম্ভব না। সিজনে এক একজন কৃষক পাঁচ থেকে ছয়শ মণ পেঁয়াজ পান। তবে এই ঘরে ৩০০ মণ পর্যন্ত রাখা যায়। যারা ঘর পেয়েছে তারা এর সুফল পাবেন।

সেখানে সংরক্ষণ করা পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন তারা। আর আমরা যারা ঘর পাই নাই সরকারের কাছে দাবি আমাদেরও যেন ঘর দেওয়া হয়।

চরবহরপুর গ্রামের আরেক পেঁয়াজ চাষি জানান, তার মত অনেক কৃষক সরকারের দেওয়া এই ঘর পাননি। যারা পেঁয়াজ রাখার ঘর পাননি তারা সরকারের কাছে ঘরের দাবি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ঘরগুলো দেখতে খুব সুন্দর। অল্প জায়গায় অনেক বেশি পেঁয়াজ রাখা যায়। একটি ঘরে পাঁচজন চাষি মিলে ৩০০ মণ পেঁয়াজ রেখেছেন। পরে সুবিধা মত সময়ে তারা পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবেন। তবে দুই উপজেলায় ৫০টি ঘর যথেষ্ট না।

বালিয়াকান্দি উপজেলায় প্রায় প্রতিটি কৃষক পেঁয়াজ চাষ করেন; সে হিসেবে এই উপজেলায় আরও ঘর নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।

রাজবাড়ী কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা রাজিব খান বলেন, “মডেল ঘরে পেঁয়াজ রেখে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন; যা এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রত্যেক কৃষককে তো আর ঘর তৈরি করে দেওয়া যাবে না।

ঘরগুলো তৈরির আরেকটি উদ্দেশ্য হল, কৃষকরা যেন এই ঘর দেখে নিজেরাই তৈরি করতে করেন। এতে যেমন পেঁয়াজ নষ্ট হবে না পাশাপাশি তারা সুবিধামত সময়ে ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন।

কৃষি কর্মকর্তা আকমল হোসেন বলেন, পেঁয়াজ সংরক্ষণে সারাদেশে ৩০০টি মডেল ঘর নির্মাণ করা হয়েছে; যার মধ্যে রাজবাড়ীর দুই উপজেলায় ৫০টি। আরও ৬০০টি ঘর নির্মাণের নির্দেশ নিয়েছে সরকার।

প্রতি বছর উৎপাদন করা পেঁয়াজের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। যে কারণে বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। আর এতে ডলার খরচ হয়।

এসব ঘর নির্মাণের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণের পাশাপাশি আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনা সরকারের প্রধান লক্ষ্য বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

সোনালী বার্তা/এমএইচ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর