যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কি অ্যাসাঞ্জেরই জয় হলো
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে দীর্ঘদিনের আশ্রয়। সেখান থেকে কারাবাস। অবশেষে মুক্তি। লাখ লাখ মার্কিন গোপন নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দেওয়া ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের জীবনের ঘটনাবহুল গল্প এটা। যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে গেছেন তিনি। তবে তা এক বা দুই বছর নয়, প্রায় দেড় দশক।
গতকাল সোমবার কারামুক্ত হওয়ার পর যুক্তরাজ্য ছেড়েছেন অ্যাসাঞ্জ। উইকিলিকস এক এক্স পোস্টে বলেছে, মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অ্যাসাঞ্জ সমঝোতা চুক্তিতে পৌঁছেছেন। ফৌজদারি অপরাধের দোষ স্বীকার করায় ৫২ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জ কারামুক্ত হয়েছেন।
আসুন, জেনে নিই অ্যাসাঞ্জের কাজ ও তাঁর দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের আদ্যোপান্ত।
২০১০
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ও উইকিলিকস ২০১০ সালের জুলাইয়ে বিশ্বজুড়ে শোরগোল ফেলে দেয়। ওই সময় থেকে আফগানিস্তান আর ইরাক যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ গোপন সামরিক-কূটনৈতিক নথি ফাঁস করতে শুরু করেন অ্যাসাঞ্জ। এসব নথিতে যুদ্ধকালীন মার্কিনদের বন্দী নির্যাতনের খবরও ছিল।
২০১০ সালের নভেম্বরে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সুইডেনে দুই নারীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়। জারি করা হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। অভিযোগ অস্বীকার করেন অ্যাসাঞ্জ। বলেন, ওই ঘটনা ছিল সম্মতিসূচক যৌনসম্পর্কের। পরে লন্ডনে গ্রেপ্তার হন অ্যাসাঞ্জ। জামিনও পান।
২০১১
যুক্তরাজ্যের আদালত ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জানিয়ে দেন, অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে পাঠাতে আইনত কোনো বাধা নেই। আপিল করেন অ্যাসাঞ্জ। বলেন, সুইডেন তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে এবং পরে উইকিলিকস সম্পর্কিত মামলায় মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাঁর বিচার করবে।
২০১২
সুইডেনে ফেরত পাঠানো এড়াতে ২০১২ সালের জুনে অ্যাসাঞ্জ লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন। আবেদন করেন রাজনৈতিক আশ্রয়ের। ইকুয়েডরের তৎকালীন বামপন্থী প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেরা আবেদন মঞ্জুর করেন। ফলে অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাজ্যের বাইরে পাঠানোর পথ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। ২০১৭ সালের মে মাসে সুইডেনের কৌঁসুলিরা অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের তদন্তের ইতি টানেন।
ওই বছরেরই ডিসেম্বরে ইকুয়েডর সরকার অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেওয়া অ্যাসাঞ্জকে নিজেদের নাগরিকত্ব দেয়। তবে যুক্তরাজ্য সরকার এ উদ্যোগ আটকে দেয়।
২০১৮
ক্ষমতার পালাবদলে তখন ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো। তিনি রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মোরেনো জানিয়ে দেন, লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে থাকা অ্যাসাঞ্জকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়া তাঁর দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। এর মধ্য দিয়ে অ্যাসাঞ্জের সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়।
ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট মোরেনো ২০১৯ সালের এপ্রিলে জানান, লন্ডনে দূতাবাসে থাকা অ্যাসাঞ্জ রাজনৈতিক আশ্রয়ের শর্ত ‘গুরুতরভাবে লঙ্ঘন’ করেছেন। অ্যাসাঞ্জের নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করে নেন তিনি।
এক দিনের মধ্যে ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে অ্যাসাঞ্জকে বের করে গ্রেপ্তার করে লন্ডন পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যর্পণের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে।
ওই বছরের মে মাসে অ্যাসাঞ্জকে ৫০ সপ্তাহের কারাদণ্ড দেন যুক্তরাজ্যের আদালত। ২০১০ সালে নেওয়া জামিনের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে এবার সাজা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাসেঞ্জের প্রত্যর্পণের আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। সুইডেনের কৌঁসুলিরাও অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের পুরোনো তদন্ত নতুন করে শুরু করেন।
২০১৯ সালের মে মাসে মার্কিন বিচার বিভাগ অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গোপন নথি ফাঁস করার ষড়যন্ত্রের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে, অ্যাসাঞ্জের ১৭৫ বছরের বেশি কারাদণ্ড হওয়ার কথা।
কারাগারে যাওয়ার পর অ্যাসাঞ্জ ভিডিও লিংকের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো আদালতে হাজিরা দেন। একই বছরের নভেম্বরে সুইডেনের কৌঁসুলিরা অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত বন্ধ করে দেন। বলা হয়, তাঁর বিরুদ্ধে ‘শক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য’ কোনো প্রমাণ নেই।
সোনালী বার্তা/এমএইচ