এনবিআরের ফয়সালের কত সম্পদ?শ্বশুর ও শাশুড়ির নামে ১৯ কোটি টাকা জমা

মাহমুদ ফয়সাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব তার শ্বশুর ও শাশুড়ির নামে ১৮টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এসব ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১৯ কোটি টাকা জমা এবং পরে তার বড় অংশ উত্তোলনের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)।
জানা গেছে, ফয়সাল ২০০৫ সালে বিসিএস (কর) ক্যাডারে সহকারী কর কমিশনার হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে এনবিআরের আয়কর বিভাগের প্রথম সচিব (ট্যাক্সেস লিগ্যাল অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছর ফয়সালের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে গত বৃহস্পতিবার ফয়সাল ও তার আত্মীয়স্বজনের নামে সম্পদের বিবরণী আদালতের কাছে তুলে ধরে সংস্থাটি।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফয়সাল ও তার স্ত্রীর নামে থাকা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে ৫ কাঠার দুটি প্লট, শ্বশুরের নামে থাকা ঢাকার রমনা এলাকায় একটি ফ্ল্যাট, খিলগাঁওয়ে শাশুড়ির নামে ১০ কাঠার প্লট জব্দ এবং ৮৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন।
আদালতে জমা দেওয়া দুদকের নথি থেকে জানা যায়, ফয়সালের শ্বশুরের নাম আহম্মেদ আলী। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। তার শাশুড়ি মমতাজ বেগম পেশায় গৃহিণী।
দুদক আদালতে জানিয়েছে, ফয়সাল তার অপরাধলব্ধ আয় লুকানোর জন্য স্বজনদের নামে ৭০০টির মতো ব্যাংক হিসাব খুলেছিলেন। এর মধ্যে ৮৭টি ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে দুদক।
দুদক আরও বলছে, ফয়সাল ও তার ১১ স্বজনের নামে ১৯টি ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৮৭টি হিসাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করা হয়েছে। তার শ্বশুর-শাশুড়ির ব্যাংক হিসাবে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে।
দুদক বলছে, শ্বশুর ও শাশুড়ির নামের ব্যাংক হিসাবে যে অর্থ লেনদেন হয়েছে, তা ফয়সালেরই অপরাধলব্ধ আয়। ফয়সাল ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ নিজের ও স্ত্রীর নামে রাখার পাশাপাশি স্বজনদের নামেও রেখেছেন।
দুদকের নথিতে ফয়সাল, তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন, ফয়সালের ভাই কাজী খালিদ হাসান, শ্বশুর আহম্মেদ আলী, শাশুড়ি মমতাজ বেগম, শ্যালক আফতাব আলী, খালাশাশুড়ি মাহমুদা হাসান, মামাশ্বশুর শেখ নাসির উদ্দিন, আত্মীয় খন্দকার হাফিজুর রহমান, ফারহানা আফরোজ ও রওশন আরা খাতুনের ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
আদালতে জমা দেওয়া দুদকের তথ্য বলছে, ফয়সালের নামে ছয়টি ব্যাংক হিসাবে ৫ কোটি ২১ লাখ টাকা জমা হয়। ফয়সালের স্ত্রী আফসানা জেসমিনের পাঁচটি ব্যাংক হিসাবে জমা হয় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ফয়সালের শ্বশুর আহম্মেদ আলীর আটটি ব্যাংক হিসাবে জমা হয় ১১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। তার নামের আটটি ব্যাংক হিসাবের দুটি ২০০৭ ও ২০১০ সালে খোলা। বাকিগুলো খোলা হয় ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে। ফয়সালের শাশুড়ি মমতাজ বেগমের নামে ১০টি ব্যাংক হিসাবে ৭ কোটি টাকা জমা হয়। তার নামের ব্যাংক হিসাবগুলোর মধ্যে একটি ২০০৯ সালে খোলা হয়। বাকিগুলো খোলা হয়েছে ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে। ফয়সালের শ্যালক আফতাব আলীর ৬টি ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জমার তথ্য পেয়েছে দুদক।
বিভিন্ন সময়ে এসব টাকা জমা হয়েছে। পরে তার বড় অংশ তুলে নেওয়া হয়েছে। জমা ও উত্তোলনের পর ফয়সাল, তার স্ত্রী, শ্বশুর ও তার স্বজনদের ১৯টি ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাবে রয়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকা। তাদের নামে রয়েছে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র।
সোনালী বার্তা/এমএইচ