রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন

পায়রা বন্দরকে কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীনের সহায়তা চায় বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১৪৮ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফর উপলক্ষে জোরেশোরে প্রস্তুতি চলছে। রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। অপরদিকে বেইজিং চায় তাদের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উদ্যোগে ঢাকার আরও বেশি সম্পৃক্ততা।

পায়রা বন্দরকে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে (সাউদার্ন ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ বা সিডি) চীনের সহায়তা চায় বাংলাদেশ। এর পাশাপাশি ঋণ ও বাজেট সাপোর্ট নিয়ে আলোচনা চলছে। আশা করা হচ্ছে, বেশ কিছু প্রকল্পের বিষয়ে আসন্ন সফরে ঐক্যমত্যে পৌঁছাবে দুই দেশ। অপরদিকে বেইজিং চাইছে, তাদের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভে (জিডিআই) বাংলাদেশের অংশগ্রহণ এবং দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের অবস্থানের প্রতি ঢাকার ইতিবাচক মনোভাব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এখনও আসলে আলাপ-আলোচনা চলছে। আজকেও একটা (চাইনিজ) টিম আছে। তারা বোধহয় ইআরডির সঙ্গে আলোচনা করছে।

সাউদার্ন ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ

জাপানের সহায়তায় মাতারবাড়ী-মহেশখালী ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (মিডি) বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ। এর আওতায় মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরকে কেন্দ্র (হাব) করে চিটাগাং অঞ্চলের উন্নতির পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, একইভাবে পায়রা বন্দরকে কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নতির জন্য চীনের সহায়তা চায় বাংলাদেশ। এটি অত্যন্ত বড় কাজ এবং এটি হলে গোটা অঞ্চলটি উপকৃত হবে বলে আশা করা যায়।

এ বিষয়ে চীনেরও আগ্রহ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এরইমধ্যে বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত পায়রা বন্দর এবং আশেপাশের এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আমাদের পক্ষ থেকে জুন মাসে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনায়ও বিষয়টি নিয়ে আলাপ হয়েছে।

গোটা বিষয়টি পরিকল্পনা পর্যায়ে আছে এবং এটির ফিজিবিলিটি স্টাডি নিয়ে কাজ করতে হবে বলে তিনি জানান।

সরকারের দায়িত্বশীল এই কর্মকর্তা বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে দুই দেশ যে একসঙ্গে কাজ করবে, সেটি সফরের যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ চায় বাংলাদেশ।

দক্ষিণ চীন সাগর

দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের একটি অবস্থান আছে। এ বিষয়ে ঢাকার ইতিবাচক মনোভাব আশা করে বেইজিং।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বাংলাদেশের একটি অবস্থান আছে এবং সেটি সম্পর্কে চীনও জানে। আমরা চাইবো, সেটির আলোকে বিষয়টিকে বিবেচনা করতে।’

উল্লেখ্য, দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে—শান্তিপূর্ণ উপায়ে এবং আলোচনার মাধ্যমে যেকোনও ধরনের সংঘাত নিরসনের পক্ষে ঢাকা।

কী থাকতে পারে যৌথ বিবৃতিতে

যেকোনও শীর্ষ সফরের পর একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়, যেখানে সফরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যেটি প্রকাশ্যে বলা সম্ভব, সেটির উল্লেখ থাকে। যেহেতু সফরটি চীনে হবে, সে কারণে বেইজিং যৌথ বিবৃতির প্রথম খসড়া তৈরি করে সেটি বাংলাদেশের বিবেচনার জন্য পাঠিয়েছে। ওই বিবৃতিতে কী কী বিষয় উল্লেখ থাকবে, সেটি নিয়ে আলোচনা চলছে। যৌথ বিবৃতিতে যে বিষয়গুলো উল্লেখ থাকতে পারে, সেগুলো হচ্ছে:

দুই দেশের সম্পর্ক: ২০১৬ সালে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে কৌশলগত বা স্ট্র্যাটেজিক স্তরে নেওয়া হয়েছে। এবারের সফরে এই সম্পর্ককে আরও উন্নীত করার ঘোষণা আসতে পারে।

রাজনৈতিক যোগাযোগ: কৌশলগত সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অন্যান্য ইস্যুতে সম্পর্ক দৃঢ় করার বিষয়টি থাকতে পারে।

জিডিআই: বাংলাদেশ ও চীন জিডিআই সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে।

এক চীন নীতি: বাংলাদেশ এক চীন নীতি বিশ্বাস করে এবং তাইওয়ান, তিব্বত ও শিনজিয়াং অঞ্চল চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

৫০ বছরপূর্তি: ২০২৫ সালে বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি হবে। এ উপলক্ষে বছরব্যাপী রাজনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধি ও দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ হবে বলে উল্লেখ থাকতে পারে।

মেরিটাইম সহযোগিতা: দুই দেশের মধ্যে আরও মেরিটাইম সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়।

পানি সহযোগিতা: বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্রহ্মপুত্র নদীর তথ্য-উপাত্ত চীনকে সরবরাহ।

বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ: ২০১৬ সালে বিআরআই-তে বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে। এ বিষয়ে দুই দেশ কীভাবে আরও কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকতে পারে।

বাণিজ্য: দুই দেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরুর বিষয়টি যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ থাকতে পারে। চীনা ব্যবসায়ীদের আরও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, চীনের জন্য বরাদ্দ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কার্যক্রম শুরু, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশকে সহায়তার বিষয়টিও উল্লেখ থাকতে পারে।

কারেন্সি সহযোগিতা: টাকা ও রেনমিনবিতে লেনদেন করা যায় কিনা, সেটির সম্ভাব্যতা যাচাই করার বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের আলোচনার বিষয়।

শিক্ষা: বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও বেশি সংখ্যক কনফুসিয়াস সেন্টার খোলা, চীনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পড়ার জন্য বৃত্তি প্রদানের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি উল্লেখ থাকতে পারে।

 

কী কী প্রকল্প চূড়ান্ত হবে সেটি নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনা করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

তিনি বলেন, বিভিন্ন লাইন মিনিস্ট্রির বিভিন্ন প্রজেক্ট আছে এবং সেগুলো নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা চলছে। এই মুহূর্তে আসলে বলা যাচ্ছে না যে, কোনটা কোনটা চূড়ান্ত করবো।

মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর যে দিকনির্দেশনা সেটি হচ্ছে যে প্রজেক্টগুলো ইমপ্যাক্টফুল হবে, আমাদের জন্য ভালো হবে ও কুইক রিটার্ন হবে, আমরা সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেবো। অর্থাৎ কে কী দিতে চায় তার চেয়ে আমাদের প্রায়োরিটি কী আছে, স্বার্থ কোনটাতে ভালো, সেগুলো আমাদের বিবেচনা করতে হবে এবং সেভাবেই আমরা আগাচ্ছি।

চীনের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা, বিভিন্ন ধরনের বাজেট সাপোর্টসহ আরও অন্যান্য মেকানিজম নিয়ে আলোচনা চলছে। চীন থেকে ঋণ ও বাজেট সাপোর্ট একটা ইস্যু বলে তিনি জানান।

সোনালী বার্তা/এমএইচ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর