সংসদে পাশ হলো ‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বিল-২০২৪’
গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে ব্যাংকের পাশাপাশি অ-ব্যাংক পরিশোধ সেবাদানকারীদের আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে ‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বিল-২০২৪’ মঙ্গলবার সংসদে পাস হয়েছে। বিলটি পাসের সময়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে একাধিক এমপি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে বিশৃঙ্খলার সমালোচনা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের কথা এলে সকলের মধ্যে আতঙ্ক চলে আসে। হরহামেশাই বড় কোম্পানীগুলোর সুদ মওকুফ করে দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারছে না।
মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বিলটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপণ করেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
তবে সদস্যদের সমালোচনার কোনই জবাব দেননি অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ হবে আমলযোগ্য, অজামিনযোগ্য এবং অ-আপসযোগ্য।
বিলে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি ‘অগ্রিম পরিশোধ দলিল’ ইস্যু, ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া জনসাধারণ থেকে যেকোনো প্রকার বিনিয়োগ গ্রহণ, ঋণ প্রদান, অর্থ সংরক্ষণ বা আর্থিক লেনদেন উদ্ভব হয়, এরূপ কোনো অনলাইন বা অফলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করা যাবে না। এসব বিধান অমান্য করলে সাজা হবে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক-কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো পরিশোধ ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ, পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনা বা ইলেকট্রনিক মুদ্রায় পরিশোধ সেবা দিতে পারবে না।
একইভাবে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নেওয়া ছাড়া কোনো পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনা বা পরিশোধ সেবা দিতে পারবে না। এই বিধান লঙ্ঘনের সাজা হবে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ-সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়, এখন বাংলাদেশে পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা-সংক্রান্ত কোনো আইন নেই। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ অনুযায়ী, বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস রেগুলেশনস-২০১৪ এবং রেগুলেশনস অন ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার-২০১৪-এর আওতায় সব পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত পৃথক কোনো আইন না থাকায় ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ইলেকট্রনিক লেনদেন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিশোধ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণেও বর্তমানে কোনো আইন নেই। ফলে গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে ব্যাংকের পাশাপাশি অ-ব্যাংক পরিশোধ সেবাদানকারীদের আইনি কাঠামোর আওতায় নিয়ে আসা জরুরি। এ কারণে এই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।
বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র সদস্য পংকজ নাথ বলেন, চার শিল্প প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। নিয়ম না মেনে চারটি প্রতিষ্ঠানের ছয় হাজার ৪৯৭ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করা হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদন প্রয়োজন ছিল।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক জনতা ব্যাংক ধুঁকে ধুঁকে মরছে। বেসরকারি ব্যাংক এনবিএল-এর কি অবস্থা তাও জানি। সুদ মওকুফের বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের তথ্য ধরে তিনি বলেন, সুদ কখন মওকুফ হয়। প্রাকৃতিক ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাসে ধ্বংস, ঋণগৃহীতার মৃত্যু বা দৈব-দুর্বিপাকে কারণে। কিন্তু কিছুই হয়নি। দুর্যোগও হয়নি। খাত বিবরণ করে, খোঁড়া অজুহাত দিয়ে তাদের সুদ মওকুফের সুযোগ দেওয়া হয়। আর একটি রাষ্ট্রায়াত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক ধুঁকে ধুঁকে মরছে। এই লোকগুলোকে চিহিৃত করতে না পারলে প্রধানমন্ত্রীর মহতি উদ্যোগ ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, একটা বিতর্কিত ব্যক্তির নাম প্রতিদিন আলোচনা হচ্ছে দুর্নীতির কারণে। এক ব্যক্তি রাষ্ট্রের তিন, চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে একটি সরকারি ব্যাংকে থেকে, এনবিআরের পরিচালক, আপিলাত ট্র্যাইবুনালের চেয়ারম্যান। তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল ১৫ বছর আগে। কে তাকে সুপারিশ করল এনবিআরের পরিচালক বানাতে? কে তাকে করল ট্রাইবুনাল চেয়ারম্যাান ও সোনালি ব্যাংকের পরিচালক? শর্ষের মধ্যেই ভূত। এই ভূত প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ সরাতে পারবে না।
জাতীয় পার্টির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, পিকে হালদার টাকা নিয়ে ভারতে চয়ে গেছে। অনেক কোম্পানী আজ দেউলিয়া অবস্থায়। যারা লিজিং কোম্পানীতে টাকা রেখে নি:স্ব তারা ফেরত পাবে কী না, তা এই আইনে আছে কী না তা বোধগম্য নয়। আইন হচ্ছে কিন্তু তার প্রয়োগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক তার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে না। ব্যাঙের ছাতার মত ব্যাংক হয়ে গেছে। ১০/২০টি ব্যাংক আজ বন্ধের অবস্থায় আছে। তাদের আর্থিক অবস্থা নাজুক।
স্বতন্ত্র সদস্য হামিদুল হক খন্দকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীরা ক্লাস বাড় দিয়ে আন্দোলন করছে। তারা সার্বজনীন পেনশনে যুক্ত হতে চাচ্ছেন না। কারো উপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেয়া সমীচীন হবে। সরকারকে বলবো বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য। তিনি বলেন, আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের কথা এলে সকলের মধ্যে আতঙ্ক চলে আসে।
সোনালী বার্তা/এমএইচ