পদ্মায় বাড়ছে পানি, ডুবছে ফসল
পদ্মার পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের ১৫টি চরের প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে শত শত বিঘা জমির ফসল। মঙ্গলবার (২ জুলাই) মানিকের চরে তলিয়ে যাওয়া বাদাম রক্ষা করার চেষ্টা করতে দেখা যায় বাবুল শেখ নামের এক কৃষককে।
জানা গেছে, মানিকের চরে শতাধিক পরিবার বসবাস করে। তারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অপর ১৪টি চরেরও একই অবস্থা। এসব কৃষকের আয়ের উৎস কৃষি। বর্তমানে চারদিকে পানি। জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। এরমধ্যে বাবুল শেখ পানিতে তলিয়ে যাওয়া বাদাম রক্ষা করার চেষ্টা করছিলেন।
জানা যায়, পদ্মার ১৫টি চরে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস করে। পরিবার রয়েছে প্রায় ৩ হাজার। মানিকের চরের প্রায় প্রতিটি পরিবারই অন্যের জমি বাৎসরিক ভাড়া নিয়ে বাড়ি করে বসবাস করে।
স্থানীয় বাদাম চাষি বাবুল শেখ বলেন, মানিকের চরে ৬ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এরমধ্যে তিন বিঘার বাদাম উঠাতে পারলেও আরো তিন বিঘার বাদাম উঠানোর আগেই পদ্মায় পানিতে ডুবে গেছে।
এগুলোর মধ্যে থেকে কিছু উঠানোর চেষ্টা করছেন। শ্রমিক সংকটের কারণে চোখের সামনে ডুবে যাওয়া বাদাম তুলতে পারেননি বলে জানান তিনি। তবে স্থানীয় শ্রমিকরা জানান, রাসেল ভাইপার সাপের ভয়ে তারা কাজ করতে চায়নি। ফলে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে কৃষকরা। তবে তিন বিঘা জমির বাদাম এখন পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।
চরের আরেক কৃষক আজগর আলী বলেন, আমি, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে অন্যের কাছে থেকে জমি ভাড়া নিয়ে দুটি ঘর তৈরি করে বসবাস করছি। এরপর পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ছাগল ও গরু নিয়ে বিপদে আছি। এখন কৃষি কাজ নেই। কোনো কোনো সময়ে জাল দিয়ে মাছ ধরে বিক্রি করে, যে টাকা হয় এই দিয়ে কোনো রকম সংসার চলছে।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের মেম্বার জালাল উদ্দিন বলেন, পদ্মার চরের মধ্যে মানিকেরচর দিয়ারকাদিরপুর, টিকটিকিপাড়া চরসহ চকরাজাপুর ও কালিদাসখালির অংশ নিয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। এই ওয়ার্ডে পরিবার তিন শতাধিক। ভোটার এক হাজার ৩৫। চরের মধ্যে আমার ওয়ার্ড নিচু ও অধিকাংশ ফসলি জমি। জমিতে রোপন করা বাদাম ও পাটের ব্যাপক ক্ষতি হবে। অধিকাংশ জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিযুল আযম বলেন, পদ্মার চরে প্রায় ৩ হাজার পরিবার রয়েছে। তারা এখন পানিন্দি রয়েছে। চরের অধিকাংশ বাড়ির পাশে পানি এসেছে। ৪৭৩ হেক্টর জমির মধ্যে অর্ধেক বাদাম উঠাতে পারেনি চাষিরা। সেই বাদাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এরমধ্যে অনেকেই পানির নিচে ডুব দিয়ে বাদাম উঠাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, কিছু নামলা বাদাম চাষিরা জমি থেকে উঠাতে পারেনি। সেগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। এর সাথে কিছু পাটও রয়েছে। বাদামের চাস হয়েছে ৪৭৩ হেক্টর এবং পাটের আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৭৮০ হেক্টর।
সোনালী বার্তা/এমএইচ