কুড়িগ্রামে বন্যায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি
উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে ব্রহ্মপুত্র নদের তিনটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় এর নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারাও বন্যার কবলে পড়েছেন। এ অবস্থায় সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম বাড়িয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), কুড়িগ্রামের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, অব্যাহত পানি বৃদ্ধি পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী ও নাগেশ্বরীর নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। একই সময়ে এই নদের পানি উলিপুরের হাতিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ধরলার পানিও কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। সকাল ৯টায় এই নদী বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পানি বৃদ্ধির ফলে এর নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো পরিবার। উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চর বালাডোবা, বতুয়াতলি মূসার চর, ব্যাপারিপাড়া নতুন চর এবং পূর্ব ও পশ্চিম মশালের চর এবং উপজেলার হাতিয়া ও সাহেবের আলগা ইউনিয়নের কয়েকশ’ পরিবারের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে।
দুই দিন ধরে এসব পরিবারের সদস্যরা পানিবন্দি জীবন যাপন করছেন। বাধ্য হয়ে অনেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন। বসতভিটা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নৌকাতেই রান্না ও খাবার সেরে নিচ্ছেন। তবে বিশুদ্ধ পানি ও শৌচাগার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষজন। পানিবন্দি এসব পরিবারে শুকনো খাবারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
মূসার চরের বাসিন্দা মতিয়ার বলেন, পানিতে শ্যাষ হইয়া গেলাম ভাই। এলাকার বেশিরভাগ পরিবার উজানের দিকে গেছে। অহনও ২০/২৫ ঘর গ্রামে আছে। খাওন আর থাকনের কষ্ট।
ব্রহ্মপুত্রের উগরে দেওয়া পানিতে জেলা সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের কয়েকশ’ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নের কালির আলগা, গোয়াইলপুরির চর, পোড়ার চর সহ নিম্নাঞ্চলের বেশিরভাগ চরের বসতিতে পানি।
আলগা গ্রামের বাসিন্দা আমিনুর বলেন, গ্রামে সব বাড়িতে পানি। পরিস্থিতি খুব খারাপ। এদিককার অবস্থা কারও নজরে আসে না।
পুরান কালির আলগা গ্রামের বাসিন্দা পল্লি চিকিৎসক আনছার আলী বলেন, ‘অবস্থা খারাপ। প্রায় সব বাড়িঘরে পানি। পানি বাড়তেই আছে।’ ওই গ্রামে শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা বিতরণ জোরদার করা হয়েছে। জেলায় মোট ৪০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র এবং দুর্গতদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নৌযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলাগুলোতে ১৭৬ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা উপবরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী তা বিতরণ চলছে। নতুন করে আরও ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শিগগির উপজেলাগুলোতে তা উপবরাদ্দ দেওয়া হবে। সরকার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে দুর্গত মানুষদের পাশে থাকবে।
সোনালী বার্তা/এমএইচ