প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে সতর্ক নজর ভারতের
চারদিনের সফরে চীন যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। এসময় দু’পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আজ সোমবার (৮ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা থেকে বেইজিংয়ের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন তিনি।
সরকারপ্রধান হিসেবে এ নিয়ে পঞ্চমবার এবং টানা চতুর্থ মেয়াদে পুননির্বাচিত হওয়ার পর এটি শেখ হাসিনার প্রথম চীন সফর। তার এই সফরের দিকে প্রতিবেশী ভারত সতর্ক নজর রেখেছে বলে জানাচ্ছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। ভারত বুঝতে পারছে, চীন থেকে বাংলাদেশে আরও অর্থ প্রবাহিত হলে বেইজিংয়ের ওপর ঢাকার নির্ভরতা কেবলই বাড়বে।
আজ সোমবার কলকাতার ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত সফরের দু’সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে এবার চীন যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তার এই সফর এমন একটি সময়ে হচ্ছে, যখন ঢাকা চীনের দিকে ‘উল্লেখযোগ্যভাবে ঝুঁকে পড়ার’ লক্ষণ দেখাচ্ছে।
টেলিগ্রাফের দাবি, শেখ হাসিনার সফরকালে চীন-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক একটি ‘ব্যাপক কৌশলগত-সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বে’ উন্নীত হতে পারে, যেটিকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে তৃতীয়-সর্বোচ্চ স্তরের সম্পর্ক হিসেবে বিবেচনা করে চীন। ভারতের একজন সাবেক কূটনীতিক দ্য টেলিগ্রাফকে বলেছেন, নয়াদিল্লিকে ‘নিবিড়ভাবে’ এই সফরের ফলাফল দেখতে হবে।
ঢাকায় জল্পনা রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) হতে পারে। পাশাপাশি, একাধিক খাতে ২০ থেকে ২২টি সমঝোতা স্মারক সই এবং দুই হাজার কোটি ডলারের ঋণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে।
ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, শেখ হাসিনার চীন সফরের আগে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। চীনের এক্সিম ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল প্রস্তাবিত দুই হাজার কোটি ডলারের ঋণ নিয়ে আলোচনার জন্য গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করে, যার মধ্যে চীন থেকে আমদানির অর্থ পরিশোধের সুবিধার্থে ৫০০ কোটি ডলার ইউয়ানে দেওয়ার কথা রয়েছে।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগীয় প্রধান লিউ জিয়ানচাও-ও সম্প্রতি ঢাকা সফর করেছেন।
ঢাকার সূত্র বলছে, শেখ হাসিনার এই সফরের পর ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে পরিবর্তন ঘটবে, যার প্রতিফলন দেখা যাবে যৌথ বিবৃতিতে।
এদিকে, বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রোববার বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্ধু এবং চীন উন্নয়নের।
দ্য টেলিগ্রাফের ভাষ্যমতে, ওবায়দুল কাদেরের এই কথায় দিল্লির উদ্বেগ কমার সম্ভাবনা কম। কারণ ভারত বুঝতে পারছে, চীন থেকে বাংলাদেশে আরও অর্থ প্রবাহিত হলে বেইজিংয়ের ওপর ঢাকার নির্ভরতা কেবলই বাড়বে।
ভারতীয় সূত্রের মতে, চীন-বাংলাদেশের মধ্যে সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির রূপ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ভারত।
সূত্রটি বলেছে, আমরা বাংলাদেশি পণ্যগুলোকে ভারতে বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার দেই এবং সেখানকার বাজারে প্রবেশের জন্য আমাদের পণ্যগুলোকে শুল্ক দিতে হয়। চীনা পণ্য বাংলাদেশে শুল্কছাড় পেলে তা সত্যিই (ভারতের জন্য) উদ্বেগের বিষয় হবে।
তার কথায়, ‘সামুদ্রিক স্থান’ বা ‘প্রতিরক্ষা সহযোগিতায়’ ঢাকা এবং বেইজিং যা কিছু করবে, সেটিও ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয় হবে। উদাহরণস্বরূপ, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মোংলা বন্দরের কথাই ধরুন। সেখানে সব উন্নয়ন কার্যক্রম ঘটছিল ভারতীয় ঋণের আওতায়। এখন চীনারা জেটি এবং একটি কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণে আগ্রহী।
তাছাড়া, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী সামরিক সরঞ্জামের জন্য মূলত চীনের ওপর নির্ভরশীল। তাই, আমাদের তাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার গতিপথে লক্ষ্য রাখতে হবে।
তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের সম্ভাব্য চুক্তিটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে রয়েছে। এ অবস্থায় তিস্তার সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে (নদী খনন ও একটি জলাধার নির্মাণ) প্রবল আগ্রহ দেখাচ্ছে চীন। শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরকালে নরেন্দ্র মোদীও তিস্তা প্রকল্পে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গত রোববার বলেছেন, চীনের সঙ্গে আলোচনার এজেন্ডায় তিস্তার নাম নেই।
সোনালী বার্তা/এমএইচ