রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

দুই শিশু সন্তানকে হত্যা করে কোরআন তেলাওয়াত করছিল মা

মাদারীপুর প্রতিনিধি / ১০৬ Time View
Update : বুধবার, ১০ জুলাই, ২০২৪

মাদারীপুরে দুই শিশু সন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে এক মানসিক ভারসাম্যহীন মা। ঘরের দরজা বন্ধ করে দুই শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যা করার পর লাশের পাশে বসেই কোরআন তেলাওয়াত করছিল ওই মানসিক ভারসাম্যহীন মা তাহমিনা তাবাচ্ছুম (২২)। বুধবার (১০ জুলাই) বিকেলে শহরের লঞ্চঘাট সবুজবাগ এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পরে পরিবারের লোকজন টের পেয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করে। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে দরজা ভেঙ্গে লাশ উদ্ধার করে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর শহরের লঞ্চঘাট সবুজবাগ এলাকার হালিম খান ও তাহমিনা তাবাচ্ছুম দম্পত্তির দুই শিশু সন্তান। একজন ৩ বছর বয়সী কন্যা জান্নাতুল ফেরদাউস অপরজন ছেলে ১ বছর বয়সী মেহেরাজ। স্বামীর সঙ্গে পারিবারিক ঝামেলার পর তাহমিনা তাবাচ্ছুম মাদারীপুরে বাবা তারা মিয়ার ভাড়া বাড়িতে চলে আসেন। এর পরেই তাহমিনা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। পরে ঢাকার একটি মানসিক হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল। এর মধ্যে সুস্থ হলে কোরবানি ঈদের সময় তাকে বাড়িতে আনা হয়। বুধবার ঘটনার দিন দুপুরে তাহমিনার নারগিস বেগম ছাদে কাপড় শুকাতে গেলে মা তাহমিনা দুই সন্তানসহ তার ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়।

পরে দপুর আনুমানিক ১টার দিকে জান্নাত ও মেহরাজ দুই শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যা করে তাহমিনা। ঘটনার পরে বিকেল আনুমানিক ৪টার দিকে পরিবারের লোকজন যখন বাচ্চাদের সাড়াশব্দ পাচ্ছিলনা তখন তাদের মনে সন্দেহ হয়। পরে ডাকাডাকি করতে থাকে। কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরের দরজা খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে দরজা ভেঙ্গে খাটের ওপর থেকে দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে। পরে মা তাহমিনাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায়।

তাহমিনা তাবাচ্ছুমের বাবা তারা মিয়া বলেন, মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর থেকেই স্বামীর সংসারে ঝামেলা চলে আসছিল। প্রায় সময় মেয়ের জামাই টাকা পয়সা চাইত। তা দিতামও। কিন্তু কয়েক বছর হল মেয়ের জামাই আমাদের কাউকে না জানিয়ে সৌদি চলে যায়। এরপর থেকে আর কোণ যোগাযোগ করেনি আমাদের সাথে।

আমার মেয়ে তাঁর স্বামীর বাড়িতে গেলেও নানা অত্যাচার করতো ওর শশুর শাশুড়ি। তাই সেখান থেকে চলে আসে আমাদের কাছে। এসব অত্যাচার র সন্তানদের কথা ভেবে ভেবে আমার মেয়েটা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরে। পরে ঢাকার একটি মানসিক হাসপাতালে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা করাই। সুস্থ হলে এই কোরবানি ঈদের সময় বাড়িতে নিয়ে আসি।

বাড়ির মালিক জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী মাকসুদা আক্তার বলেন, তারা আমাদের বাসায় ভাড়া আসছেন মাত্র এক মাস দশদিন হয়। ঘটনার সময় আমি স্কুলে ছিলাম। আমি প্রাইমারী স্কুলে জব করি। বাসায় পুলিশ এসে আমাকে যখন ফোনে জানালো তখন আমি তাদের ঘরের দরজা ভেঙ্গে ফেলার কথা বলি। পরে বাসায় ফিরে ঘটনা জানার জন্য বাড়ির নীচতলায় ওই ভাড়া ফ্লাটে যাই। ওই রুমে গিয়ে ঘটনা জানার চেষ্টা করি। এসময় আমাকে তাহমিনা তাবাচ্ছুম মারধর করা শুরু করে।পরে পুলিশের সহযোগিতায় আমাকে উদ্ধার করা হয়। তবে এই মেয়েটা যে মানসিক ভারসাম্যহীন সেটা আমি কিছুদিন আগে বুঝতে পারি তাঁর আচার আচরনে। তবে এরকম ঘটনা কেউ আসা করেনি।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচ এম সালাউদ্দিন জানান, শিশু দুইটির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া মা তাহমিনা তাবাচ্ছুমকে আটক করে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।

সোনালী বার্তা/এমএইচ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর