নির্দেশনা মানলে শতভাগ ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব- মেয়র তাপস
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি নির্দেশনা মেনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম যথাযথভাবে পালন করেন তাহলেই আমরা শতভাগ ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব। কিন্তু আজকে এখানে এসে পরির্দশনে দেখলাম; আমরা আমাদের সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যে মতবিনিময় করি, দায়িত্ব ভাগাভাগি করা করি সেই অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন হচ্ছে না।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরির্দশনে এসে এসব কথা বলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র।
তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা নিয়মিত পরির্দশনের অংশ হিসেবে শাহজাহানপুর ঝিল পরির্দশন করেছি। শাহজাহানপুর ঝিলকে নান্দ্যনিক পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছি। ঝিলের দুই পাশ দিয়ে হেটেঁ চলার পথ সৃষ্টির কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। ইনশাল্লাহ; এই বছরেরই সেখানে কাজ শুরু হবে। দরপত্র শুরু হয়েছে।’
ডেঙ্গু কার্যক্রম পরির্দশনে আসলেন, কি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছেন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ সামাজিক কেন্দ্র- কমিউিনিটি সেন্টারের জায়গা দখল করেছিল। দখলদার আমাদের কাছে সেটি হস্তান্তর করেছে। আমরা সেটা সংস্কারের জন্য পরির্দশন করেছি।
ঢাকাবাসী বিশেষ করে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য সেটি উন্মুক্ত করে দিব। পরে আমরা আমাদের নিয়মিত অভিযান শুরু করেছি এডিস মশার মৌসুমকে সামনে রেখে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার জন্য। তারই কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আজকে এখানে শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও মশক নিয়ন্ত্রণ অভিযান কর্মসূচি পরিচালনা করতে এসেছি।
আপনারা জানেন, আমরা ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। আমাদের মশককর্মীরা নিয়মিত সকাল-বিকালে কাজ করে চলেছে।’
মেয়র তাপস বলেন, আমরা মে মাসে সকল সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিয়ে মতবিনিময় করেছি। তাদেরকে যথাযথ নির্দেশনা দিয়েছি। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকেও নির্দেশনা দিয়েছে। তার ফলশ্রুতিতে যেহেতু বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেছেন এবার গত বছরের তুলনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হতে পারে। এই শঙ্কাকে আমলে নিয়ে আমরা আমাদের পরিকল্পনা আরো বিস্তৃত করেছি। যাতে করে আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও মশা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি।
ইতিমধ্যে আমাদের এই কার্যক্রমের সুফল ঢাকাবাসী পাচ্ছে। গতবছরের জুলাই মাস পর্যন্ত রোগীর যে সংখ্যা ছিল আমরা তারচেয়ে কম রাখতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু তারপরও আজকে এখানে এসে পরির্দশনে দেখলাম; আমাদের সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যে মতবিনিময় করি, দায়িত্ব ভাগাভাগি করা হয় সেই অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা ঢাকা সিটি দক্ষিণ করপোরেশনের মধ্যে সকল হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করেছি। সেখানে পরিষ্কার করে দিয়েছি। তেমনি ভাবে পুলিশের সকল ফাঁড়ি ও থানা পরিষ্কার করে দিয়েছি। এখন আমাদের বিশেষ অভিযান চলছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহে। যেহেতু পরীক্ষা চলছে তাই আমরা সূচি সেভাবেই করেছি, যাতে করে পরীক্ষা এবং শ্রেণিপাঠে বিঘ্ন না ঘটে। ছুটির দিন বেছে নিয়েছি। আজকে ছুটির দিন, পরীক্ষা হচ্ছে তাই এই ওয়ার্ডে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। প্রতিটি ওয়ার্ডের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির দিনে আমাদের কার্যক্রম চলছে।
মেয়র তাপস বলেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অভিযান টানা দুইদিন করেছি আজকেও করেছি। আরো দুইদিন এই কার্যক্রম চলবে। যাতে করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় স্থাপনা আঙিনা পরিষ্কার করে পুরোপুরিভাবে লাভামুক্ত করতে পারি। কিন্তু আজকে এখানে এসে দেখলাম আমরা যে, মতবিনিময় করে যে নির্দেশনা দিচ্ছি সেই নির্দেশনা পালন হচ্ছে না।
এখানে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের অধীনে যে নির্মাণাধীন শিক্ষা ভবন রয়েছে সেটার কিন্তু বেহাল অবস্থা। এখানে চৌ-বাচ্চা করা হয়েছে সেখানে পানিতে ভরপুর। অথচ আমরা সব সময়ে বলি, কোথায় যেন পানি না জমে থাকে। সব সময় যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান
এখানে নেই কোনো কর্তৃপক্ষের কোনো কর্মকর্তা এখানে নেই। কেউ কোনো দায়িত্ব গ্রহণ করছে না। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। কারণ নির্দেশনা মেনে তারা যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখেন তাহলেই আমরা শতভাগ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব। না হলে এটা অত্যন্ত দূরহ হয়। দায়িত্বহীনতা, অবহেলা-গাফিলতি এর কারণে ঢাকাবাসী ভুক্তভোগী হচ্ছে। আশা করব সংশ্লিষ্টরা পরিষ্কার পরিছন্ন রাখবেন এর জন্য যদি তেল, কেরোসিন, ব্রিসিং পাউডার লাগে আমাদের জানানোর সাথে সাথে নিতে প্রস্তুত। আমাদের কর্মীবাহিনী দিয়েই তাদের সহযোগিতা করতে পারি। কিন্তু তাদের সেই দায়িত্বটা অবশ্য নিতে হবে।
তিনি বলেন, বিশেষ অভিযান করছি মূলত সচেতনাবৃদ্ধি এবং তাদের দায়িত্বশীলতা যেন পরিপূর্ণ হয়। আমরা ইতিমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪০০টি বিদ্যালয়ে অভিযান সম্পন্ন করেছি। আরো বাকী যেগুলো আছে সেখানে অভিযান পরিচালনা হবে। মূলত আমরা আমাদের কার্যক্রম এই ভরা মৌসুমের আগেই যেন পরিষ্কার করতে পারি, লাভা যেন কমিয়ে আনতে পারি সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট যে কর্তৃপক্ষ রয়েছে বিশেষ করে যারা নির্মাণাধীন ভবন করছেন তারা যদি এগিয়ে না আসেন, দায়িত্বশীল ভ’মিকা পালন না করেন? এখানে এসে দেখেছেন কি অবহেলা দায়িত্ব গাফেলতি। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সেটা যদি সম্মিলিতভাবে করতে পারি তাহলেই পরিপূর্ণভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।
হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনদের আবাসনের জন্য সিটি করপোরেশন থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তা কোন পর্যায়ে রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, সব জায়গায় ভুমি দস্যুদের আগ্রাসন। আমাদের একশত ভাগ কর্মচারী হরিজন সম্প্রদায় ও অন্যান্য। জেনে খুশি হবেন শুধু মাত্র বাকী আছে সাড়ে ৪শত এছাড়া সবাইকে আবাসন দেয়া হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শতভাগ পুর্নবাসন প্রকল্প ও নির্দেশনাকে মাথায় রেখে আমলে নিয়ে বাস্তবায়নে আমাদের কর্মচারী কর্মকর্তাদের শতভাগ আবাসের ব্যবস্থা করছি। কিন্তু বিভিন্ন ভাবে ভূমি দস্যুরা জায়গা দখল করে রাখে। মাদকের আখড়া, অপরাধের আখড়া কিশোর গ্যাং লালন করছে। অথচ জায়ড়া দখল করে রাখা তাদের কোনো অধিকার নেই। বরং আমাদের কর্মচারীরা হরিজন সম্প্রদায়ের কর্মীদের জিম্মি করে রেখেছে। কর্মচারী ও এলাকাবাসীর সুবিধার্থে সেখানে আমরা আমাদের জমি ব্যবহার করে পুনবাসন করছি, সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করছি। আমি মনে করি- ভূমি দস্যু ভূমি দস্যু; অপরাধী অপরাধী তার কোনো সম্প্রদায় নাই, শ্রেনি নাই।
তার আসল মতলব হলো অবৈধভাবে তার দখলকে বজায় রাখবে এবং সেখানে একটি অপরাধ চক্র সৃষ্টি করবে। আমরা কোনোভাবেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জমি ব্যবহার করে অপরাধীদেরকে অপরাধ চক্রকে মাদকব্যবসায়ীদের জায়গা দিতে পারি না। এব্যাপারে কঠোর রয়েছি। মামলা চলমান আছে, আমরা মামলা মোকাবিলা করছি। আশাবাদী ভূমিদস্যু অবৈধ দখলকারীদের থেকে জমি উদ্দার করে কর্মচারীদের আবাসন এবং জীবনমান উন্নয়নে যা করণীয় তা নিশ্চত করতে পারব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেয়র হানিফ উড়াল সেতুর নিচে প্রায় ১১ কিলোমিটার জায়গা রয়েছে। ইতিমধ্যে ১১ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে পরার্মশক নিয়োগ করে নকশা করেছি। যেখানে যেটা প্রয়োজন যেমন গাড়ির পার্কি, গণচৌচারগার, অথবা নান্দ্যনিক পরিবেশ করছি, যাতে করে কারো দখলে না যায়। অবৈধভাবে দখল না হয়। আটটি ভাগে ভাগ করেছি, ছয়টি দরপত্র প্রায় সম্পন্ন বাকী দুটির দরপত্র করব। তাহলে এই ১১ উড়াল সেতুর নিচে জায়গাটা একটি ব্যবস্থাপনার মধ্যে চলে আসবে। এরপর ধারাবাহিকভাবে খিলগাও ফ্লাইওভার নিচের জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় উদ্যোগ নেব। ইতোমধ্যে মগবাজার ফ্লাইওভারে আমাদের অংশে সফল কার্যক্রম হচ্ছে
সোনালী বার্তা/এমএইচ