বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের খায়েশ পূরণ হতে দেব না- ওবায়দুল কাদের

বিএনপি কোটা বিরোধী আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ দিতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘কোটা আন্দোলন নিয়ে আমরা পরিষ্কার করে বলেছি-এটা আদালতে বিচারাধীন একটি বিষয়, এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে আদালত। যদি কেউ রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায় সেক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন তিনি।
কোটা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের জন দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অবিলম্বে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার জন্য পুনরায় আহবান জানাচ্ছি। সর্বোচ্চ আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পুরোপুরি সমাপ্তি না হওয়া পর্যন্ত সকল পক্ষকে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। আমরা তারুণ্যের শক্তি এবং আবেগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল; কিন্তু এই শক্তি ও আবেগকে পুঁজি করে কোনো অশুভ মহল যদি দেশে অরাজক পরিস্থিতি ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায় তাহলে সরকার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
এসময় তারুণ্য কে ব্যবহার করে কেউ যেন ফায়দা লুটতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে বলেও মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।
এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলনে বিএনপি প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছে। তারা নিজেরা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে এখন কোটা বিরোধী আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ দেয়ার চেষ্টা করছে। আমরা তাদের সরকার বিরোধী আন্দোলনের সে খায়েশ পূরণ হতে দেব না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটা সংস্কারের বিষয়ে গতকাল (বুধবার) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেয়া রায়ের কার্যকারিতার উপর চার সপ্তাহের স্থিতাদেশ দিয়েছিলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে জারি করা সরকারের পরিপত্র অনুযায়ী সরকারি নিয়োগে এই মুহুর্তে কোনো প্রকার কোটা সংরক্ষিত নাই এবং আপিল বিভাগ শুনানী সাপেক্ষে বিষয়টি চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করবে।
আমরা গতকাল শিক্ষার্থীদের ধৈর্য্য সহকারে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছিলাম। একই সঙ্গে জন-দুর্ভোগ সৃষ্টি হতে পারে এই ধরণের রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহার করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে বিচারিক প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং এ বিষয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সুনিদিষ্টি যে নির্দেশনা আছে তার প্রতি কোনো প্রকার শ্রদ্ধাশীল না হয়ে আন্দোলনকারীরা পুনরায় তথাকথিত বাংলা ব্লকেড’ নামে কর্মসূচি দিয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। অন্য দিকে কোনো কোনো রাজনৈতিক মহল তাদের রাজনৈতিক স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের প্ররোচনা দিচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কোনো কোনো অশুভ মহল ছাত্র-ছাত্রীদের আবেগকে পুঁজি করে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে; এই ধরণের কর্মকান্ড রাষ্ট্র বা দেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর নয়। আমাদের সবাইকে রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে বল প্রয়োগের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। জন দুর্ভোগ সৃষ্টির রাজনীতি পরিহার করতে হবে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র সর্বজনীন এবং পবিত্র সংবিধানের আলোকেই রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রকে সকলের অধিকার সংরক্ষণ করতে হয়। কোটা মানে বৈষম্য নয় বরং বৈষম্য নিরসনের জন্য কোটা সংরক্ষণ প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়। সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় আসার পরে সরকার সকল জনগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, বিএনপিসহ কিছু দল শিক্ষার্থদের কোটা আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে। শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক ফাঁদে ফেলে নিজেদের আন্দোলনের ব্যর্থতা পেছনে রেখে নতুন আন্দোলন শুরুর পাঁয়তারা করছে তারা। ফখরুল বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটার দরকার নেই। তার কথায় প্রমাণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের সম্মান নেই। কোটা বিরোধিতা করে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী তার প্রমাণ আবারও দিয়েছে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনোয়ার হোসেন, কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ প্রমুখ।
সোনালী বার্তা/এমএইচ