‘দুই চোরের’ মুখ দেখে বিস্মিত মামলার বাদী
মিনা হামিদের বাবা আবদুল হামিদ একজন ঠিকাদার। ব্যারিস্টারি পড়ছেন মিনা। গেল জুনের শেষ দিকে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের ফ্ল্যাটের সিন্দুক থেকে হামিদের ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি হয়। এর পর বাবার সঙ্গে হন্তদন্ত হয়ে থানাসহ নানা জায়গায় ঘুরতে থাকেন মিনাও।
গত ৪ জুলাই হামিদ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। এ সময় তাঁর পাশেই ছিলেন মিনা। তবে পুলিশের তদন্তে যে তথ্য সামনে এসেছে, তা হামিদকে বিশ্বাস করানো কষ্টসাধ্য হচ্ছে! বাবার সিন্দুক থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরির মূল পরিকল্পনাকারী তাঁরই মেয়ে মিনা! এর সঙ্গে জড়িত মিনার স্বামী সাকিবুল হাসান শান্ত। তবে মিনা যে বিয়ে করেছেন, তা জানতেনই না তাঁর বাবা হামিদ। তাই পুলিশ ‘দুই চোরের’ মুখ চিহ্নিত করার পর বিস্মিত হন হামিদ।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র ও হামিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে সিরাজগঞ্জের তাড়াশের শান্তর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় মিনার। পরিবারের কাউকে না জানিয়ে গত বছরের শেষ দিকে বিয়ে করেন তারা। ছক কষে গত ২৭ জুন বাবার সিন্দুকের বিপুল অঙ্কের টাকা চুরি করে শান্তর হাতে তুলে দেন তিনি। মিনা ও শান্তর সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়ার পর বিস্মিত হন তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরাও। এরই মধ্যে শান্তর কাছ থেকে ৯০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
গত বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে মিনা ও শান্তকে। হামিদের দায়ের করা মামলায় এখন কারাগারে তাঁর মেয়ে এবং জামাই।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, তিতুমীর কলেজের ছাত্র শান্তকে বিয়ে করার বিষয়টি মিনার পরিবারের কেউ জানতেন না। ১৫ জুন ঈদুল আজহায় পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যান ঠিকাদার হামিদ। ২২ জুন তারা ফিরে এলে মিনা প্রথমে তাঁর মাকে বিয়ের বিষয়টি জানান। আরও অবহিত করেন, এখন অন্তঃসত্ত্বা তিনি।
বাবাকে বিয়ের কথা জানালে তিনি তা কোনোভাবেই মেনে নেবেন না– এমন চিন্তা থেকে বাসার সিন্দুক থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করার সিদ্ধান্ত নেন মিনা। অসচ্ছল পরিবারের সন্তান শান্তকে নিয়ে কোথাও পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। এ কারণে বাবার সিন্দুক থেকে টাকা চুরি করে তা শান্তর কাছে দেন। ২৭ জুন টাকা চুরি করার পর দু’দিন তা বাসার ভেতর লুকিয়ে রাখেন মিনা। ২৯ জুন স্বামীকে খবর দিলে মিরপুরের মেস থেকে মিনাদের বাড়ির কাছাকাছি একটি এলাকায় যান শান্ত। পরে টাকা ভর্তিব্যাগ নিয়ে সরাসরি তাড়াশ চলে যান তিনি।
আরেক তদন্ত কর্মকর্তা জানান, চুরির মামলা হওয়ার পর ওই বাসার নিরাপত্তাকর্মী, অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দা এবং মামলার বাদীর পরিবারের সদস্যদের সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছিল। এক পর্যায়ে প্রযুক্তিগত তদন্তে মিনার সঙ্গে শান্তর কথোপকথনের অনেক তথ্য সামনে আসে। ওই যুবকের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বেশ কিছু খুদে বার্তা ডিলিট করেন মিনা। এতে পুলিশের সন্দেহ বাড়ে। এ ছাড়া তদন্ত চলাকালে হঠাৎ এক দিন অসুস্থ হয়ে মিনা হাসপাতালে ভর্তি হলে তাঁকে অস্বাভাবিক বলে মনে করেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।
এর পর ব্যাপক জেরা করলে চুরির টাকা শান্তকে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। কৌশলে মিনাকে দিয়ে ফোন করানোর পর টাকা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফেরার পর সাকিবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। সূত্র জানায়, চুরির ঘটনটি ভিন্ন খাতে নিতে মিনা সিন্দুকের একটি নকল চাবি তৈরি করে তা বাসার মধ্যে ফেলে রাখেন।
ঈদুল আজহার আগে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বকেয়া টাকা পেয়েছিলেন ঠিকাদার হামিদ। ঈদের ছুটিতে ব্যাংক বন্ধ থাকায় তা জমা দিতে পারেননি। ওই টাকা মেয়ে মিনাকে দিয়ে গণনা করিয়ে সিন্দুকে রাখেন হামিদ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক মতিউর রহমান বলেন, বাদী মামলা না তুললে এতে তাঁর আপনজনদের আসামি করতে হবে। এখানে পুলিশের কিছু করার নেই। বাদী আবদুল হামিদ বলেন, চুরির যে তথ্য এসেছে, এটা কল্পনার বাইরে ছিল। মেয়ে এটা করতে পারে– বিশ্বাস হচ্ছিল না। তার বিয়ের কথাও জানতাম না।
সোনালী বার্তা/এমএইচ