রাজশাহীর রিকশাচালক মুক্তার, শখ করে শিখেছেন কাচ খাওয়া
কথায় আছে, শখের দাম লাখ টাকা। তবে কখনও কখনও অনেকে শখ পালন করতে গিয়ে আত্মঘাতীও হয়ে ওঠেন। এমনই একজন রাজশাহীর চন্দ্রিমা থানার চকপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. মুক্তার হোসেন (৫৩)। পেশায় তিনি একজন রিকশা চালক।
সম্প্রতি সময়ে কাচের বাল্ব খেয়ে আলোচনায় আসেন হতদরিদ্র এই রিকশা চালক। তবে এই কাচ খাওয়াকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে মানসিক চিকিৎসার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে রিকশাচালক মুক্তার হোসেন জানান, কাচ খাওয়া আমার শখ ও সাধনা। প্রায় ৩০ বছর আগে ঢাকার মিরপুরের শাহ আলীর দরবারে আমার পীর মুর্শিদ ওয়াজ ভান্ডারীর কাছ থেকে আমি কাচ খাওয়া শিখেছিলাম। আমার মুর্শিদ নিয়মিত কাচের বাল্ব খেতেন। এটা দেখার পরে আমিও শিখতে চাই। সেখানে তিন বছর সাধনা করার পর আমি কাচের বাল্ব খাওয়া শিখেছিলাম। তারপর থেকে আমি নিয়মিত একটানা ২৫ বছর ধরে কাচের বাল্ব খেয়েছি। তবে গত ৫ বছর ধরে আর খাই না।
তিনি আরও জানান, আমার কাচের বাল্ব খাওয়ার বিষয়টি আমি গোপন রেখেছিলাম। এটা ছিল আমার গোপন সাধনা। কিন্তু এক বছর আমার এক বন্ধু এই বিষয়টি জেনে ফেলে। এরপর থেকে আমাকে বারবার বলতো, তোমার কাচ খাওয়া দেখবো। এ কারণে তার সামনে কাচের বাল্ব খেয়েছিলাম। আর সে ভিডিও করে ফেসবুকে দিয়ে দিয়েছে। এ কারণে এলাকার মানুষ বিষয়টি জেনে গেছে। তবে কাচের বাল্ব খেয়ে এখন পর্যন্ত আমার শারীরিক সমস্যা হয়নি। আমি অনেক সাধনার পর কাচ খাওয়ার কৌশল রপ্ত করেছি। এটা ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও শখের বসে এটা খাই, এটা খেতেও ভালো লাগে। আমি সাধারণত নষ্ট হওয়া ৬০ থেকে ১০০ ওয়াটের বাল্বগুলো খাই। এর চেয়ে মোটা কাচ খেতে পারি না। কারণ, দাত দিয়ে এগুলো ভাঙা যায় না।
মুক্তার হোসেন আরও জানান, তিনি পীরের মুরিদ। রাজশাহী নগরীর ভদ্রা জামালপুর এলাকার হজরত শাহ ওলি আহম্মেদের (রহ) মুরিদ তিনি। মাজার শরিফে নিয়মিত আসেন।
এদিকে, মুক্তার হোসেনের এই কাচ খাওয়া নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে। অনেকেই এটির কঠোর সমালোচনা করে ‘হিরোইজম’ প্রদর্শন করে ভাইরাল হওয়ার চেষ্টা বলে আখ্যা দিচ্ছেন। তবে অনেকে তার এই সাধনাকে মূল্যায়নের দাবিও জানাচ্ছেন।
নগরীর ভদ্রা জামালপুর এলাকার রাশেদুজ্জামান রাইস বলেন, এটা আনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এতে তার শারীরিক সমস্যা হয় না বলেই জানাচ্ছেন, এমনই যদি হয়ে থাকে, তাহলে তার সাধনাকে মূল্যায়ন করাও যেতে পারে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শঙ্কর কে বিশ্বাস জানান, ‘কাচের বাল্ব কোনও খাদ্য নয়। এটা অখাদ্য। আর এটা খাওয়া উচিত নয় এবং এটা খাওয়ায় যায় না। উনি গলাধঃকরণ করছেন। এটা আসলে একটি মানসিক রোগ। রক্তশূন্যতা, অটিজম সহ নানা কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। উনি হয়তো দীর্ঘ সময় ধরে এটি খেয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। কিন্তু এটা তার মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ক্যানসার সহ নানা রোগ হতে পারে। সুতরাং এ মুহূর্তে তার চিকিৎসা প্রয়োজন।
সোনালী বার্তা/এমএইচ