রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২০ পূর্বাহ্ন

আজ শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৯১ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪

আজ ১৬ জুলাই। শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ভোরে আজকের এই দিনে ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীনের নেতৃত্বাধীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার ধানমন্ডির বাসভবন ‘সুধা সদন’ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার মধ্য দিয়ে এইদিন মূলত বাংলাদেশের গণতন্ত্রকেই অবরুদ্ধ করেছিল সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধয়াক সরকার।

শেখ হাসিনার গ্রেপ্তার ছিল জনগণের কণ্ঠস্বর রোধ করে দেওয়ার, জনগণের অধিকার হরণের এক প্রক্রিয়া। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে তৎকালীন ভীতসন্ত্রস্ত পরিস্থিতির মুখেও আওয়ামী লীগের নিবেদিত নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। সেদিন ভোরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় দুই সহস্রাধিক সদস্য সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ধানমন্ডির বাসা ঘেরাও করে।

এমতাবস্থায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ফজরের নামাজ আদায় করেন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা শেখ হাসিনাকে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে সুধা সদন থেকে বের করে নিয়ে আসে এবং যৌথ বাহিনীর সদস্যরা বন্দি অবস্থায় তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে। গ্রেপ্তারের আগে তার নামে ১৩ টি মামলা দেয়া হয়। আদালত প্রাঙ্গণে প্রিয় নেত্রীকে একনজর দেখতে সমবেত হন হাজারো কর্মী-সমর্থক। আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা আগেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জামিন আবেদন আইনবহির্ভূতভাবে নামঞ্জুর করে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। আদালত শেখ হাসিনাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

নির্দেশ মোতাবেক শেখ হাসিনাকে সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগারে বন্দি রাখা হয়। ওই কারাগারেই মিথ্যা মামলায় দীর্ঘ ১১ মাস বন্দি থাকেন শেখ হাসিনা। ২৪ জুলাই মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সামনে শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। এছাড়াও জেলে বন্দি অবস্থায় শেখ হাসিনার সঙ্গে দীর্ঘদিন স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ রাখা হয়। তার চিকিৎসা প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। গ্রেনেড হামলায় আহত কান ও চোখ চিকিৎসার অভাবে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে।

মানসিকভাবে শক্ত থাকলেও, শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তাকে স্লো-পয়জনিং করা হচ্ছে বলেও আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তার অসুস্থতা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে যায়। অবশেষে তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা টানা ২০ দিন চিকিৎসার পর তাকে আপাতত স্বাভাবিক করে তোলেন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দেন। ২০০৮ সালের ২৩ মে, আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলের ৭২টি সাংগঠনিক শাখার তৃণমূল নেতারা শেখ হাসিনার প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেন এবং তাকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্য দেশজুড়ে চলমান আন্দোলন জোরদার করার ঘোষণা দেন। ২৭ ও ২৮ মে, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত হয়- শেখ হাসিনাকে নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে হবে। আওয়ামী লীগের এই ঘোষণার পর দেশজুড়ে শুরু হয় গণগ্রেপ্তার। প্রায় ২০ হাজার মানুষকে জেলে ঢোকানো হয়।

কিন্তু তবুও শেখ হাসিনার পক্ষে গণজোয়ার থামানো যায়নি। বিশেষ কারাগারের পাশেই সংসদ ভবন চত্বরে অস্থায়ী আদালত স্থাপন করে আজকের প্রধানমন্ত্রীর বিচার প্রক্রিয়াও শুরু করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সেই ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। দলের সাধারণ কর্মীদের উত্তাল আন্দোলন ও শেখ হাসিনার প্রতি দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন-অকৃত্রিম ভালোবাসার কারণে তৎকালীন অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ১১ জুন সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ কারাগার থেকে মুক্তি পান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

২০০৬ সালের ৬ অক্টোবরে অষ্টম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বিএনপি সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে টালবাহানা শুরু করে। দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি হয়ে উঠে উত্তপ্ত। পরবর্তীতে দেশে এক অনিশ্চয়তার পরিস্থিতি সূচনা হলে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ সারাদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন। একই সঙ্গে বিএনপি মনোনীত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড.ফখরুদ্দীন আহমদকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। সে সময়কার সেনাবাহিনীর প্রধান মঈন ইউ আহমেদও ছিলেন বিএনপির মনোনীত সেনাপ্রধানই। বিএনপির নিজেদের লোকদের ক্ষমতায় বসানোর উদ্দেশ্য ছিল আবার ক্ষমতায় আসার পথ সুগম করা ও শেখ হাসিনাকে রাজনীতিতে কোণঠাসা করে ফেলা। এদিকে ১৩ মার্চ ২০০৭ ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে ভিসা নেন শেখ হাসিনা।

ওই সময় তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত গীতা পাসির সঙ্গে কথা বলেন। তিনি এক মাসের জন্য ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন এবং ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাবেন। এ ছাড়া তিনি কানের চিকিৎসাও করাবেন। যুক্তরাষ্ট্রে রওনা দেওয়ার আগে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী ধানমন্ডির সুধা সদনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। ১৫ মার্চ বিকেলে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পথে লন্ডন রওনা হন। শেখ হাসিনা ঢাকা ছাড়ার সময় জানিয়েছিলেন যে এক মাসের মধ্যেই তিনি ফিরবেন। ২৩ এপ্রিল তাঁর ঢাকা ফেরার কথা। দেশে ফিরে তাঁর বিরুদ্ধে আনা মামলার মোকাবিলা করবেন বলে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন।

ফেরার পথে লন্ডনে তাঁর যাত্রাবিরতির কথা ছিল। কিন্তু ১৮ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেসনোটে ২৩ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে শেখ হাসিনার দেশে ফেরার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। প্রেসনোটে বলা হয়, তাঁর ফিরে আসা দেশের আইনশৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা, জননিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আইন উপদেষ্টা মইনুল হোসেন বলেন, প্রেসনোটের বক্তব্য হচ্ছে হাসিনার দেশে ফেরার ক্ষেত্রে একধরনের নিষেধাজ্ঞা। মইনুল বলেন, ‘তাঁকে বারবার অনুরোধ জানানো এখন আপনার দেশে ফেরার প্রয়োজন নেই। আপনি সময় নিয়ে আসুন।

এখানে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে। তারপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যেসব বক্তব্য দিয়ে আসছেন, এটি এখানে একধরনের উসকানির সৃষ্টি করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তিনি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে আসছেন।’ প্রশ্নের জবাবে মইনুল বলেন, ‘আমরা এয়ারলাইনসগুলোকে অনুরোধ করেছি তাঁকে না নিয়ে আসার জন্য।’ সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও হাসিনা ২৩ এপ্রিল ঢাকা ফেরার ঘোষণা দিয়ে ১৯ এপ্রিল বিকালে লন্ডনে পৌঁছান। ২০ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের ‘অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের’ (এপিপিজি) সঙ্গে তিনি দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন।

বৈঠকে হাউস অব লর্ডসের নেতা ব্যারোনেস ইমোস, ব্যারোনেস জেনিটাং, ব্যারোনেস রয়াল লর্ড এভবারি, ব্যারোনেস পলা মঞ্জিলা উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন। ব্যারোনেস মঞ্জিলা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এপিপিজি বাংলাদেশের বন্ধু। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সংস্কারমূলক কাজগুলো সমর্থন করে, আবার একই সঙ্গে শেখ হাসিনার বক্তব্যের ব্যাপারেও তারা সচেতন। এর আগে ১১ এপ্রিল ২৮ অক্টোবর (২০০৬) পল্টনে সহিংসতার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৪ দলের ৪৬ জন নেতা-কর্মী এবং জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছিল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

২২ এপ্রিল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। শেখ হাসিনা ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ফিরতে চাইলে লন্ডনের হিথরো এয়ারপোর্টে তাঁকে বোর্ডিং পাস দেওয়া হয়নি। ২৪ এপ্রিল ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ব্যবস্থাপক জেমস ফরস্টার এক লিখিত ব্যাখ্যায় বলেন, বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি লিখিতভাবে জানানোয় তাঁকে বোর্ডিং পাস দেওয়া হয়নি। ২৪ এপ্রিল শেখ হাসিনার পক্ষের আইনজীবীরা তাঁর দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে জারি করা প্রেসনোটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ ও তাঁর দেশে ফেরার বাধা দূর করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদনের অনুমতি চান।

হাইকোর্ট ২৬ এপ্রিল রিট দায়েরের অনুমতি দেওয়ার কথা জানিয়ে ২৯ এপ্রিল এর ওপর শুনানি হবে বলে জানান। কিন্তু তার আগেই সরকারি সিদ্ধান্ত পাল্টে যায়। ২৬ এপ্রিল বিকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চারজন উপদেষ্টা ও উচ্চপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে শেখ হাসিনার দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ৭ মে ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ভোরে গ্রেপ্তার করা হয় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। বঙ্গবন্ধুকন্যাকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে অবরুদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালায় তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। শেখ হাসিনা আদালতের গেটে দাঁড়িয়ে তৎকালীন অবৈধ সরকারের হীন-রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। গ্রেপ্তার পূর্ব মুহূর্তে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে একটি চিঠির মাধ্যমে দেশের জনগণ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গণতন্ত্র রক্ষায় মনোবল না হারিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনার সেই নির্দেশে দেশবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীরা জেগে উঠলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ষড়যন্ত্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন ও গণতন্ত্রপ্রত্যাশী দেশবাসীর ক্রমাগত প্রতিরোধ আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুকন্যার আপসহীন ও দৃঢ় মনোভাব এবং দেশবাসীর অনড় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ১১ জুন দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগ ও নানামুখী ষড়যন্ত্রের পর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। আর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার মুক্তির মধ্য দিয়ে এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরায় ফিরে আসে। যুগপৎভাবে বিকাশ ঘটে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের। আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হারানো স্বপ্ন ও সোনার বাংলা বাস্তবায়িত হচ্ছে তারই সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে। এরপর কারামুক্তি পেয়ে প্রথমেই শেখ হাসিনা ভিশন-২০২১ প্রকাশ করেন যা জনগণ সাদরে গ্রহণ করে।

এর শুরুটা হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবর, যখন প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার গঠন করে। বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পরপরই দেশে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা দেশব্যাপী হত্যা, লুণ্ঠন, লুটতরাজ, নিপীড়নের নারকীয় উৎসব শুরু করে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নাভিশ্বাস ওঠে জনগণের। এক স্বপ্নহীন, নৈরাশ্যের যুগের সূচনা হয় দেশে। বিএনপি সরকার দেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র, একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেলে।

সে সময়ই বাংলা ভাইয়ের মতো জঙ্গির উত্থান হয়। নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে আহসানউল্লাহ মাস্টার, শাহ এম এস কিবরিয়ার মতো আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতাদের জঙ্গি স্টাইলে হামলা করে হত্যা করে তারা। কিন্তু যতদিন জনগণের কণ্ঠস্বর, গণতন্ত্রের প্রতীক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে থাকবেন ততদিন দেশকে পাকিস্তান বানানোর স্বপ্ন ও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার স্বপ্ন সফল হবে না বুঝতে পেরে বিএনপি-জামায়াত গণতন্ত্রের ‘সুরক্ষা কবচ’ শেখ হাসিনাকে হত্যার নীল নকশা তৈরি করে। এ উদ্দেশ্যে তারা ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে। এ হামলায় ২৪ জন নিহত হন যাদের মধ্যে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানে স্ত্রী; আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নারী নেত্রী আইভী রহমানও ছিলেন। তবে সেদিন সৌভাগ্যজনক ভাবে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। এরপর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

পরবর্তীতে ২০০৮ এর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনতা নিরঙ্কুশ রায় দেয় শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের পক্ষে। নির্বাচনে এই বিজয় লাভই প্রমাণ করে শেখ হাসিনা জনতার মধ্যে কতটা জনপ্রিয় এবং তাকেই মানুষ নিজেদের স্বপ্ন পূরণের ‘জাদুকর’ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ আছে ক্ষমতার আসনে। বিশিষ্টজনদের মত, শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বেই আজ শক্তিশালী অবস্থানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম দলগুলোর একটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাসহ দেশের যত অর্জন আর ইতিহাস, সব সফলতার বাঁকে বাঁকে জড়িয়ে আছে দলটির নাম। অসাম্প্রদায়িক আর সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যুগে যুগে বহু নেতা তৈরি হয়েছে এই দলে। তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা এসব নেতাকে ধীরে ধীরে দল পরিচালনায় অন্তর্ভূক্ত করে সফল হয়েছে আওয়ামী লীগ। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে ৪৩ বছর অতিবাহিত করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরে শেখ হাসিনা গত ৪ দশকেরও বেশি সময় ধরে এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এই দলের নেতাকর্মীদের প্রেরণার উৎস এবং তা সংগঠনকে করেছে সমৃদ্ধ। শেখ হাসিনার আপসহীন, সুদক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে স্বৈরতন্ত্রের চৌহদ্দি পেরিয়ে গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছিল বাংলার জনগণ। কালের বিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজ ডিজিটাল বাংলাদেশের পথ পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বাপ্নিক অভিযাত্রী আওয়ামী লীগ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এখন তার বড় মেয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশবাসীকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে উন্নত, স্মার্ট দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার। দলের পাশাপাশি রাষ্ট্রপরিচালনা উভয় ক্ষেত্রেই সফলতার পতাকা হাতে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ১৯ বার নিশ্চিত মৃত্যুকে জয় করে এখন তিনি অকুতোভয় একজন বিশ্ব রাষ্ট্রনায়ক। তিনি শুধু বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের প্রতীক নন, তিনি বিশ্বের সব নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের মুক্তির প্রতীক হিসেবে আলো ছড়াচ্ছেন। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা।

১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন তিনি। শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ও রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে সজীব ওয়াজেদ জয় (পুত্র) ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (কন্যা) নামে দুই সন্তান রয়েছেন। স্বামী ওয়াজেদ মিয়া ২০০৯ সালের ৯ মে মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। যার হাত ধরে বাঙালি পেয়েছিলো স্বাধীনতা। যার হাত ধরে বিশ্বের বুকে উড়েছে লাল-সবুজের পতাকা-সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয় সপরিবারে।

ঘাতকের নৃসংসতা থেকে রেহাই পায়নি পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য শেখ রাসেলও। নির্মমতা পৌঁছায় চরমে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা সময় শেখ হাসিনা ও তার ছোটবোন শেখ রেহানা সেসময় পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান তারা। পরবর্তীকালে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে ৬ বছর ভারতে অবস্থান করেন। তবে দলের পুনর্গঠনে প্রয়োজন ছিল তার দেশে ফেরা। বঙ্গবন্ধু কন্যাও ছিলেন দ্বিধান্বিত। সব দ্বিধাকে পেছনে ফেলে ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরেই শুরু হয় দল গোছানোর কার্যক্রম, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই। এতে তিনি পড়েন শাসকগোষ্ঠীর রোষাণলে। বারবার করা হয় কারাগারে বন্দি। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সামরিক সরকার তাকে আটক করে ১৫ দিন কারাগারে রাখেন। ১৯৮৪ সালের দু’বার গৃহবন্দি, ১৯৮৫ সালের ৩ মাস, ১৯৮৬ সালের ১৫ দিন গৃহবন্দিসহ বিভিন্ন সময় তাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে তাকে লক্ষ্য করে পুলিশের গুলিবর্ষণ চলে বেঁচে যান তিনি। ১৯৮৮, ১৯৯১, ২০০০, ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলাসহ হত্যার জন্য কমপক্ষে সশস্ত্র হামলা করা হয় ১৯ বার। তবুও দমে যাননি শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তবে আবারও ক্ষমতা হাতছাড়া হয় ২০০১ সালে। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত সরকার ক্ষমতা দখল করে আবারও গ্রেপ্তার করেন শেখ হাসিনাকে।

মাইনাস ফর্মুলা দেওয়া হয়েছিল। সেই মাইনাস ফর্মুলার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে নির্বাসনে পাঠানোর ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্রকেও প্রতিহত করেন শেখ হাসিনা এবং তার বিশ্বস্ত সহচররা। এভাবে প্রতিটি দুর্যোগে, প্রতিটি সঙ্কটে আওয়ামী লীগ বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আর এই ঘুরে দাঁড়ানোটাই যেন আওয়ামী লীগের সৌন্দর্য। সঙ্কট কখনও আওয়ামী লীগকে পরাজিত করতে পারে না। বরং সঙ্কটকে জয় করেই আওয়ামী লীগ আজকের এই অবস্থায় এসেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পনেরোই আগস্টে মর্মান্তিক হত্যাকা-ের শিকার হওয়ায় সুখী, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক চেতনায় সমুন্নত বাংলাদেশ তিনি দেখে যেতে পারেননি। জাতির পিতার এই অসম্পূর্ণ স্বপ্নই এখন পূরণ করে চলেছেন শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনিই গণতন্ত্রের চালিকাশক্তি ও হৃদপি-।

শেখ হাসিনা ছাড়া উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা মুখ থুবড়ে পড়বে। এ কথা অনস্বীকার্য, শেখ হাসিনাই বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে দিয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নাম লিখিয়েছে। শেখ হাসিনার আপসহীন, সুদক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে স্বৈরতন্ত্রের চৌহদ্দি পেরিয়ে গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছিল বাংলার জনগণ। কালের বিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজ ডিজিটাল বাংলাদেশের পথ পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বাপ্নিক অভিযাত্রী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ফলে শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য খুবই প্রয়োজন।

সোনালী বার্তা/এমএইচ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর