সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:১৪ অপরাহ্ন

এডিস মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি- মেয়র তাপস

নিজস্ব প্রতিবেদক / ২০০ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪

এডিস মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা ক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, ‘নাগরিকরা যি নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে, সকলে যি জনসম্পৃক্ত থাকে যে, এডিস মশার বিস্তার রোধে সবাই যদি এগিয়ে আসে তাহলেই আমরা পরিপূর্ণ সুফল পাব। সবাই যদি আসে, জনগণ যদি সম্পৃক্ত হয় দায়িত্ব পালন করে তাহলে এডিস মশার বিস্তার আমরা শূন্যের কোঠায় আনতে পারব, সেটাও অসম্ভব নয়।

কিন্তু পরিস্থিতি ও বাস্তবতা ভিন্ন। সে কারণে আমাদেরকে কাজটি যথাযথভাবে করতে কষ্টকর হয়ে যায়। তবে আমাদের মশক কর্মীরা, সুপারভাইজার, আঞ্চলিক কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে এডিস মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নগর ভবনের শীতলক্ষ্যা হলরুমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম সরাসরি পর্যবেক্ষণ এবং তদারকি সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের শুভ উদ্বোধন করেন মেয়র তাপস।

ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আমরা সরাসরি মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে তদারকি করার লক্ষ্যে যে প্রকল্প চালু করি তা যথাযথভাবে পৌছে দিতে ‘নিয়ন্ত্রণ কক্ষ’ এর শুভ উদ্বোধন করছি। সকালকে আমারে কাউন্সিলর মহোয়ের নেতৃত্ব আঞ্চলিক কর্মকর্তারাসহ মশক কর্মীরা যে কাজ শুরু করে থাকে; সেটার ধারাবাহিকতায় আজকেও সকাল কে ডেঙ্গু রোগির সন্ধান পেয়ে রোগির যে ঠিকানা পেয়েছি সেই লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে চলেছে। ইতিমধ্যে সকালের লার্ভি সাইডিং বিতরণ হয়েছে আবার বিকালে অন্যান্য কার্যক্রম করা হবে। আমরা যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ সাবির্ক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘এবার আমাদের কার্যক্রমকে আরো বিস্তৃত করেছি। গত বছরের অভিজ্ঞার আলোকে কর্মপরিকল্পনা বিস্তৃত করেছি এবং সেটার সুফল ইতিমধ্যে ঢাকাবাসী পেতে শুরু করেছেন। লার্ভি সাইডিং এর যেখানে আখড়া পেয়ে গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে সেগুলোকে আগেই চিহিৃত করেছি। সেই প্রেক্ষিতে সকল সংস্থা ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য চিহিৃত করেছি। তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ব্যাপক অভিযান করে চলেছি। ইতিমধ্যে সকল হাসপাতালে এক দফায় পূর্ণভাবে লাভিং সাইডিং ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছি। যা ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে লাভিং সাইডিং কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। দ্বিতীয়ত সকল থানা এবং পুলিশ ফাঁড়িতে যেসব জায়গায় বৃষ্টি হলেই পানি জমে সেই সব জায়গায় ব্যাপক ভাবে অভিযান করেছি। তারাও আমাদের সহযোগিতা করেছেন।

মেয়র তাপস বলেন, ‘এই পর্যন্ত ৪৮৫টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবন, স্থাপনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও লাভিং সাইডিং করেছি। ঢাকা ক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক ব্যিালয়ে পর্যায়ক্রমে এ অভিযান পরিচালনা করা হবে। এর ফলশ্রুতিতে যদিও গত বছরের সঙ্গে তুলনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শঙ্কা প্রকাশ করেছিল যে, গত বছরের তুলনায় এবার আরো ব্যাপক হারে এডিস মশার বিস্তার ও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়বে। আমরা সেই আশঙ্কা কে আমলে নিয়ে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে জরিপ দিয়েছিল সেই জরিপ অনুযায়ী যে ওয়ার্ডগুলো চিহিৃত করেছিল যে এতো অতি ঝুকিপূর্ণ। জরিপ পাওয়ার সাথে সাথেই আমরা সকল ওয়ার্ডে ব্যাপক চিরুনি অভিযান চালিয়েছি।

যার ফলশ্রুতিতে গত বছরের জুলাই মাসে প্রায় ১৩৩৭ জন ডেঙ্গু রোগি চিহিৃত হয়েছিল ঢাকা ক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায়। এখন আমি আনন্দিত; সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছি- জুলাই মাসের ১৪ তারিখের মধ্যে যে তথ্য পেয়েছি তাতে দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১০৬ জন। তবে আজের পেয়েছি ২২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগি।

অবশ্য আমরা যে তথ্য পাই সেই তথ্যকে যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিক পর্যায়ে তালিকা করা হয়। ফলে এই ২২ জনের মধ্যে সঠিক তথ্য হচ্ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ জন। এই ১৪ জন রোগিকে আমরা সরাসরি তদারকি করছি। এছাড়া কিন্তু অন্যান্য ওয়ার্ডে নিয়ম মাফিক প্রতিদিনের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এই কার্যক্রমের ফলে ঢাকাবাসী সুফল পেতে শুরু করেছে। আমরা আস্থার সঙ্গে বলতে পারি গত বারের তুলনায় এবার এডিস মশার বিস্তার ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত সহনশীল জায়গায় রাখতে পারব।

তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা আমাদের কার্যক্রম সরাসরি তদারকি করছি। দায়িত্বরত কর্মীরা সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, ঠিক মত খোজ খবর নিচ্ছে কিনা তা এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। এই তদারকি কার্যক্রম চলমান থাকবে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে। যা টানা তিনমাস ব্যাপী চালু থাকবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বলেন, আমরা মনে করি এডিস মশার এটি পূর্ণ মৌসুম। পূর্ণ মৌসুমে এডিস মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম হয়েছি। ধারাবাহিতা বজায় রেখে যাতে করে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ তদারকি করতে পারি। যাতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগির স্যংখা বৃদ্ধি না পায়; সেজন্য তিন মাসব্যাপী সরাসরি তদারকি কার্যক্রম এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে চলমান থাকবে। তবে মৌসূম শেষ হলেও আমাদের কার্যক্রম বিস্তৃত থাকবে। কারণ গত দুই বছরে মৌসুম শেষ হলেও আশ্বিন মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত সংখ্যা উর্ধ্বমুখী পেয়েছিলাম। তাই এবার কর্ম পরিকল্পনার ব্যাপ্তি বিস্তৃত করেছি।

তিনি বলেন, ‘পানি জমে থাকে ছোট্ট জায়গাও আমরা ছেড়ে যাচ্ছি না। লাভিং সাইডিং, পরিষ্কার ও পরিচ্ছনাসহ অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত রেখে চলেছি। কারণ ছোট্ট জায়গাতেও পানি জমে এডিস মশার লাভা থাকতে পারে। তাই আমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও জমির মালিক, ঠিকাদার সকলকে সচেতন করতে চাই।’

ঢাকাবাসীকে উদ্দেশ্য করে মেয়র তাপস বলেন, ‘আপনারা আঙিনা অবশ্যই পরিষ্কার রাখবেন। প্রতিদিন জমা পানি ফেলে দিবেন। কোনো পানি জমতে দিবেন না। তার সাথে সাথে যদি লক্ষ্য করেন প্রতিবেশি বা আপনার আশে পাশে স্থাপনায় কোন জায়গায় পানি জমে থাকছে সেখানে লাভা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাহলে আমারে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সরাসরি যোগাযোগ করে তথ্য নিবেন। এতে মশক কর্মীরা ১৫ মিনিটের মধ্যে সেখানে উপস্থিত হয়ে লার্ভি সাইডিংসহ সাবির্ক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রস্তুত রয়েছে।

কাজেই আপনারা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন। তাহলে আমরা আরো কার্যকরভাবে এই এডিস মশার বিস্তার ধ্বংস করতে পারব। মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম আরো সফলভাবে করতে পারব। ঢাকাবাসী তার যথার্থ সুফল ইনশা আল্লাহ পাবে।’

সোনালী বার্তা/এমএইচ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর