ছাত্রলীগের হামলা পাকিস্তানিদের চেয়ে কোন অংশে কম
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সোমবার একদিনে ছাত্রলীগ যা করেছেন তা পাকিস্তানিদের চেয়ে কোন অংশে কম? তারা হাসাপাতালে গিয়ে হামলা চালিয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ঘনিষ্ঠ সহচর ন্যাশনালিস্ট আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান যাদু মিয়ার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে ভাসানী অনুসারী পরিষদ।
স্বাধীনতার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানের ছাত্র সংগঠন এনএসএফ পৈশাচিক নির্যাতন করতো। বর্তমানেও আওয়ামী লীগ সরকারের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ সেটিই করছে। তারা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করছে। অথচ শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত। সুতরাং আজকে ঘৃণা এবং ক্ষোভের সঙ্গে বলতে হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ বর্বর হামলা চালিয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, শুধু ঢাকাতে নয় গোটা দেশে এই হামলা চালিয়েছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এখন তো সবার উচিত আন্দোলন করা। কাল আমাদের সন্তানদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। এই সময়ে রুখে দাঁড়াতে না পারলে দেশ ও জাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
তিনি বলেন, আমরা জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফেরত চাই। এটাই মূল সমস্যা। আমরা সুষ্ঠু ও জবাবদিহিমূলক সরকার চাই, ব্যবস্থা চাই। কিন্তু সরকার একের পর এক ইস্যু তৈরি করে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চেষ্টা করছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ এখন দেউলিয়া হয়ে গেছে। তারা আমলা নির্ভর ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। আমি গতকাল সম্পূর্ণ ফ্যাসিবাদী দেখেছি। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও আমাদেরকে অধিকার নিয়ে লড়াই করতে হচ্ছে। কোটা ব্যবস্থা তো প্রধানমন্ত্রীই বাতিল করেছিলেন। আবারও আদালতকে ব্যবহার করে একটা ইস্যু বানিয়েছে। এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। তবে একট কথা বলতে চাই, আমাদের সবাইকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এই সরকারকে আর সময় দেওয়া যাবে না।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবু ইউসুফ সেলিমের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, নূর মোহাম্মদ খান প্রমুখ।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, মশিউর রহমান যাদু মিয়ার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। তিনি আমার বাবার সহপাঠী ছিলেন। অনেকেই তাকে বিতর্কিত বলেন। কিন্তু আমি যা দেখেছি তা হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি গঠন করেছিলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলেন তখন তিনি একটা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সেসময় যে কয়েকজন রাজনীতিবিদ এসেছিলেন তাদের একজন মশিউর রহমান যাদু মিয়া। এমনকি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিকে বিলুপ্ত করে বিএনপিতে একীভূত করে দেন। তিনি আমাদেরকে পথ দেখিয়েছিলেন।
মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, মশিউর রহমান যাদু মিয়া ছিলেন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। ডান-বাম সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছেন তিনি। আজকে দেশে কী অবস্থা বিরাজ করছে? আমাদের পূর্বসূরীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। কারণ একটার পর একটা ইস্যু বানিয়ে সরকার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। গণচীন থেকে একরাশ গ্লানি নিয়ে দেশে ফিরেছেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে প্রধানমন্ত্রীর রক্ষা হবে না।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজাকার তো প্রধানমন্ত্রীই বলেছেন। যিনি রাগ করে কোটা বাতিল করেছিলেন তিনিই আবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন আবেগে নাকি কোটা বাতিল করেছেন! তাহলে বুঝেন কী অবস্থা? প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে তারা দেশটাকে নির্মমভাবে শাসন-শোষণ করছেন। আজকে একজনের সমালোচনা করার কারণে সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কী পরিমাণ সন্ত্রাস হয়েছে। এই স্বৈরাচার ও নৃশংস সরকারকে হটাতে হলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।
সবশেষে মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর যে বর্বর হামলা হয়েছে তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। আমি আন্দোলনকারী ও আহতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই।
সোনালী বার্তা/এমএইচ