শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন

অজ্ঞাত আন্দোলনকারীদের নামে আরও ১১ মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১৯৭ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪

সরকারের পক্ষ থেকেই বলা হয়েছে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কোনো ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগে জড়িত ছিল না। সরকারের কথার সঙ্গে পুলিশের অভিযোগটি সাংঘর্ষিক। ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগকে আমরা সমর্থনই করি না। ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবু এমন অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে হচ্ছে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীর শাহবাগ থানায় আরও ১১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি মামলার বাদী পুলিশ। ২টি মামলার বাদী ছাত্রলীগের দুই নেতা। এসব মামলা ১২ থেকে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে হয়েছে।

পুলিশের করা ৯টি মামলার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, তাঁর জানামতে কোনো শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে মামলা হয়নি। আইন অনুযায়ী, মামলাগুলো তদন্ত করে আইনভঙ্গকারীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

এই কর্মসূচিকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের আগেই আকতারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মামলাটি হয় ১৮ জুলাই। এ মামলায় নাম উল্লেখ করা একমাত্র আসামি তিনি। অন্য আসামিদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। মামলার এজাহারে বলা হয়, অজ্ঞাতনামা বহুসংখ্যক কোটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের সমর্থনে আন্দোলনকারীরা।

শাহবাগ থানায় করা মামলাগুলোর কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, একটি মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র আকতার হোসেনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আকতার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক। তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ১৭ জুলাই গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেদিন দুপুরে ক্যাম্পাসে গায়েবানা জানাজা ও কফিনমিছিলের কর্মসূচি ছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের।

এর আগে ১২ জুলাই শাহবাগ থানায় আরও একটি মামলা হয়। ওই মামলায় বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ১১ জুলাই পুলিশের একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। সেদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ছিল। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অজ্ঞাতনামা ছাত্ররা জড়ো হন। পরে বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে অজ্ঞাতনামা ছাত্ররা শাহবাগ মোড়ে গিয়ে ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন। পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের মারধর করা হয়।

এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, ১১ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাখা পুলিশের এপিসি-২৫ ও জলকামান গাড়িতে উঠে পড়েন কয়েকজন। তাঁরা গাড়িতে ভাঙচুর চালান। তবে এই মামলাতেও আসামির তালিকায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।

আন্দোলনকারীদের নামে মামলার বিষয়ে গত মঙ্গলবার কথা বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সেদিন সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি নিয়ে গুলশানের নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তিনি। মামলার তথ্যাদি যদি তাঁরা (আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী) দেন, সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের নামে যদি কোনো মামলা হয়ে থাকে, তাহলে সেগুলো অবশ্যই দেখা হবে। শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং সব ছাত্রছাত্রীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার পরিবেশ নিশ্চিত করবে সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, অজ্ঞাতনামা ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ জন কোটা আন্দোলনকারীকে আসামি করে ১৭ জুলাই শাহবাগ থানায় মামলা করেন ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি।

এ মামলায় ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল দাবি করেন, কোটা সংস্কারের এক দফা দাবির আন্দোলনকে ঘিরে আন্দোলনকারীরা তাঁকে বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে আন্দোলনকারীরা ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের তাঁর কক্ষে (২৩২ নম্বর কক্ষ) ১৫ জুলাই বিকেল চারটায় প্রবেশ করেন। পরে কক্ষে থাকা তাঁর মালামাল, সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র পুড়িয়ে দেন। এ ছাড়া অজ্ঞাত আন্দোলনকারীরা সেদিন সাধারণ শিক্ষার্থীদের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করার জন্য ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলে প্রবেশ করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। পরে আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ২০ থেকে ২৫টি কক্ষ ভাঙচুর করেন। বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা হলের ভেতর ভাঙচুর করে তাঁদের ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা আটক করে রাখেন বলেও এজাহারে অভিযোগ করেন ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের এই নেতা।

রাজধানীর শাহবাগ থানায় ২১ জুলাই আরেকটি মামলা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মফিজুর রহমান। এজাহারে মফিজুর দাবি করেন, ১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য যাত্রাবাড়ী থেকে রওনা দেন তিনি। যখন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইউনিটের পূর্ব পাশে আসেন, তখন কোটা আন্দোলনকারীদের ব্যানারে থাকা ৫০ থেকে ৬০ জন ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী তাঁর মুঠোফোন পরীক্ষা করেন। পরে তাঁর মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। একপর্যায়ে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে বিকেল থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়।

আরেকটি মামলার এজাহারে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাইনুল ইসলাম খান উল্লেখ করেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ করেন। অপর দিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অপমান করার প্রতিবাদে বেলা তিনটায় ছাত্রলীগ তাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি শুরু করে। ছাত্রলীগের অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বিকেল চারটার দিকে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলে প্রবেশ করে ভাঙচুর শুরু করেন। পাশাপাশি আন্দোলনকারীরা অন্যান্য হলেও প্রবেশ করে ভাঙচুর করেন। তাঁরা ছাত্রলীগসহ সাধারণ ছাত্রদের হলে প্রবেশে বাধা দেন। ছাত্রলীগ ও সাধারণ ছাত্ররা হলে প্রবেশ করতে গেলে তাঁদের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। পাশাপাশি ইটপাটকেলও নিক্ষেপ করেন। এতে ২৫০ থেকে ৩০০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালনের সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশের উদ্দেশে ককটেল ছুড়ে মারেন।

সোনালী বার্তা/এমএইচ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর