সংবাদ সম্মেলনে গজারিয়ার দুই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি
গজারিয়ার দুই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রীর ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয়রা কয়েকজন ভুক্তভোগী।
শনিবার (২৭ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আকুতি জানান গজারিয়ার গুয়াগাছি এলাকার শাহাদাৎ হোসেন সরকার, সাবেক ইউপি সদস্য হারুন ছৈয়াল, মোহাম্মদ লিখন মিয়া, স্থানীয় ব্যবসসায়ী শাহ আলমসহ স্থানীয় বহু ভুক্তভোগী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গজারিয়ার গুছিয়াগাছিয়া ইউনিয়নের শাহাদাৎ হোসেন সরকার।
লিখিত বক্তব্যে শাহাদাত হোসেন সরকার বলেন, স্থানীয় লিটন শিকদার ওরফে কসাই লিটন ও উজ্জ্বল ছৈয়াল মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। অস্ত্র ব্যবসার পাশাপাশি ভূমিদস্যুতা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, অবৈধ গ্যাস চুরি, হোটেল ব্যবসার আড়ালে অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে এলাকার সাধারণ মানুষের শান্তি নষ্ট করছে বহুদিন ধরে। গজারিয়াসহ নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর ও কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মাদক, পুলিশের উপর হামলাসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে মামলা থাকলেও পলাতক এই দুই সন্ত্রাসীকে অজ্ঞাত কারণে ধরছে না পুলিশ। এরা গজারিয়ার বিভিন্ন এলাকায় সরকারি গ্যাস লাইন থেকে অবৈধ পাইপ বসিয়ে গ্যাস সাপ্লাই দিয়েও কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছে। এছাড়া কক্সবাজার থেকে ইয়াবার বড় বড় চালান এনে গজারিয়া থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে কসাই লিটন ও উজ্জল ছৈয়াল।
অভিযোগ, লিটন শিকদার ওরফে কসাই লিটনের আর এক প্রধান সহযোগী উজ্জল ছৈয়াল। যিনি কসাই লিটনের মতই মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার পাশাপাশি করেন সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রন। সেই সাথে ভূমি দস্যুতা তো আছেই। কসাই লিটনের মতোই অনেক মামলা মাথায় নিয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ভূমি দস্যুতা এবং নারী নির্যাতন কারী হিসেবে এই লিটন শিকদার ওরফে কসাই লিটন ও উজ্জ্বল ছৈয়াল এলাকায় একটি ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এদের অপকর্মের কেউ বিরোধিতা করলে তার আর রক্ষা নেই, তাদের বিরুদ্ধে শুধু গজারিয়ায়ই নয়, দেশের বিভিন্ন থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করা হয়। স্থানীয়রা এই দুই সন্ত্রাসী ও তাদের পালিত সন্ত্রাসীদের হত থেকে রক্ষায় সরকারের প্রতি আহবান জানান। তাদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতারেরও দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গজারিয়ার ভয়েরচরের ফিরোজ শিকদারের পুত্র লিটন শিকদারের মাত্র ৭/৮ বছর আগে নুন আনতে পান্তা ফুরাতো। সেই লিটন শিকদার এখন শত কোটি টাকার মালিক। কোন আয়ের উৎস না থাকলেও এই কম সময়ে তিনি গড়েছেন গজারিয়ার ভবেরচর এলাকায় বাড়িসহ অর্ধ শত কোটি টাকার সম্পদ। শ্বশুর বাড়ি জামালপুরে ৩ তলা বাড়ি করেছেন ৫ কোটি টাকা খরচ করে।
লিটন শিকদার চলতি বছরের জুলাই মাসে মতলব উত্তরের এক ব্যবসায়ীকে হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাসী পাঠিয়েছিলো। পরে অস্ত্রসহ উক্ত সন্ত্রাসীদের আটক করেছিলো পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিদেশী পিস্তল ও ৫ রাউন্ড গুলি। আটক হওয়া সন্ত্রাসীরা পুলিশকে জানায় লিটন শিকদার ও উজ্জল ছৈয়াল, গোলজার খাঁসহ তাদের সহযোগিরা ঐ ব্যবসায়ীকে হত্যার উদ্দেশ্যে পিস্তল দিয়ে পাঠায়। এ বিষয়ে অস্ত্রসহ ধৃত ব্যক্তির জবানবন্দীর আলোকে মতলব উত্তর থানায় লিটস কসাই, উজ্জল ছৈয়াল ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো অভিযোগ করা হয়, সন্ত্রাসী উজ্জল ছৈয়াল, পিতা- আব্দুল মজিদ ছৈয়াল। উজ্জল এর জন্ম গজারিয়ার গুয়াগাছিয়ায়। সন্ত্রাসী কর্মের পাশাপাশি তার মূল আয়ের উৎস ভূমি দস্যুতা ও হোটেল এবং রিসোর্ট ব্যবসা, যার আড়ালে করেন নারী ও মাদক ব্যবসা। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে থাকা রেষ্টুরেন্টে করেন মাদক ও নারী ব্যবসা। এছাড়া মহাসড়কে গার্মেন্টস পণ্য লুটের নেতৃত্ব দেন উজ্জল ছৈয়াল।
অল্প সময়ে কোটিপতি হয়েছেন শূন্য থেকে। এলাকায় তারও সন্ত্রাসী বাহিনী আছে। তার আয়ের আর একটি উৎস হচ্ছে অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগ দেয়া। গজারিয়ার প্রায় ৬০ কি.মি এলাকা জুড়ে তার ও তার সহযোগিদের অবৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যবসা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার পলাতক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী লিটন শিকদার ও ভূমি দস্যূ উজ্জল ছৈয়াল এর মত শীর্ষ সন্ত্রাসী, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ীকে আটক করে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে দেয়ার আকুল আবেদন জানান ভুক্তভোগীরা।
সোনালী বার্তা/ এমএইচ