সচিবালয়ে ‘বিএনপিপন্থী’ কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর তিন দিন পেরিয়ে গেলেও প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় এখনো স্বাভাবিক হয়নি। মন্ত্রণালয়ে উপস্থিতি খুবই কম। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়েনি। তবে কর্মচারীদের উপস্থিতি তুলনামূলক ভালো ছিল।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, সরকার পতনের পর থেকে তাঁরা অফিসে আসছেন না। এ মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের (এপিডি) অতিরিক্ত সচিব নাজমুছ সাদাত সেলিম, আরেক অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানার চেয়ার তিন দিন ধরে ফাঁকা।
গতকাল সকাল থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দেন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পদোন্নতিবঞ্চিতরা। অন্তত পদোন্নতিবঞ্চিত দুই শতাধিক কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হন। কেউ জনপ্রশাসন মন্ত্রীর রুমে, কেউ সচিবের রুমে, কেউ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের রুমে অবস্থান নেন। এ সময় তাঁদের মিছিল করতেও দেখা যায়। তাঁরা সচিবের রুমে ঢুকে নিজেদের ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
এদিকে ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের পর গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে ঢুকছেন বিএনপিপন্থী কর্মকর্তারা। গত মঙ্গলবার পদোন্নতিবঞ্চিত ২০ জন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে। তাঁদের কয়েকজন গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেছেন। তাঁরা এখন সচিবালয়ের বাইরে বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থায় কর্মরত। যদিও তাঁদের ব্যাচমেটরা কেউ এখন সচিব, কেউ অতিরিক্ত সচিব, কেউ যুগ্ম সচিব।
মন্ত্রণালয়ের রুটিন কাজ করতে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তাদের জনপ্রশাসনে ন্যস্ত করে মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর বাইরে আরও কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
সরেজমিন দেখা যায়, কর্মকর্তারা ভাগ হয়ে ব্যাচভিত্তিক পদবঞ্চিতদের তালিকা করছেন। কোন ব্যাচে কতজন পদোন্নতি পাননি, সে তালিকা করে জনপ্রশাসনসচিবের কাছে জমা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
জানতে চাইলে পদোন্নতিবঞ্চিত এক কর্মকর্তা বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে কিংবা বিভাগীয় মামলা আছে, তাঁদের বাইরে অন্যদের পদোন্নতি দেওয়া হবে বলে জনপ্রশাসনসচিব তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন। তাঁরা দ্রুত পদোন্নতি তালিকা চূড়ান্ত করে সচিবের কাছে জমা দেবেন।
প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বদলি হওয়া এসব কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন, কারও বাড়ি বগুড়া, কারও পরিবার সরাসরি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, কারও মা ছিলেন বিএনপির সংসদ সদস্য। এসব অভিযোগে দীর্ঘদিন তাঁরা ছিলেন পদোন্নতিবঞ্চিত। তাঁদের কেউ ছিলেন সচিবালয়ের বাইরে কম গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে, কেউ ছিলেন বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি)।
বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন একটি সংস্থার উপপরিচালকের মা সাবেক সংসদ সদস্য। ট্যুরিজম বোর্ডের এক উপপরিচালকের বাবা বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য। এ ছাড়া টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) উপপরিচালক কে এম আলী আযমের বাড়ি বগুড়ায়, কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল আলমের বাড়িও বগুড়ায়। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তা সেলিম উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের ওপর বৈষম্য ও অন্যায় হয়েছে। তাঁরা এখন পদোন্নতি চান।
সরকার না থেকেও কীভাবে এসব কর্মকর্তাকে বদলি করা হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী গতকাল তাঁর দপ্তরে প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাহী ক্ষমতায় বদলি করতে পারেন। নিয়মের মধ্যে তাঁদের বদলি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বদলি হওয়া এসব কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন, কারও বাড়ি বগুড়া, কারও পরিবার সরাসরি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, কারও মা ছিলেন বিএনপির সংসদ সদস্য। এসব অভিযোগে দীর্ঘদিন তাঁরা ছিলেন পদোন্নতিবঞ্চিত।
সোনালী বার্তা/এমএইচ