শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩৭ পূর্বাহ্ন

সারা দেশে চলছে লুটতরাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৪০ Time View
Update : শুক্রবার, ৯ আগস্ট, ২০২৪

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে চলছে লুটতরাজ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে দেশে অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হওয়ার পর গত দুই সপ্তাহ ধরেই ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকার’ করছে অপরাধী চক্র।

প্রাণ বাঁচাতে আত্মগোপনে চলে যান পুলিশ সদস্যরা। আক্রান্ত হয় দেশের প্রায় ৪০০ থানা। বন্ধ হয়ে যায় অনেক থানার কার্যক্রম। এই সুযোগে বেপরোয়া হয়ে ওঠে পেশাদার অপরাধী ও মহল বিশেষ।

চক্রের সদস্যরা চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ে তৎপর হয়ে পড়েছে। ৫ মে প্রধানমন্ত্রী ইস্তফা দিয়ে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার পর সুযোগ সন্ধানীরা অধিকতর তৎপর হয়ে ওঠে। উত্তেজিত জনতা থানা এবং পুলিশি স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করলে ঢাকাতেই অন্তত ৮০ পুলিশ সদস্য নিহত হন।

এদের রুখতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাড়া-মহল্লায় গড়ে তোলা হয়েছে ডাকাত প্রতিরোধ কমিটি। মসজিদে মসজিদে করা হচ্ছে মাইকিং। পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

পুলিশকে কাজে যোগ দিতে উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ছিনতাই এবং ডাকাতির ঘটনায় কোথাও কোথাও নিহত হওয়ার খবর ছড়ালেও তা সঠিক নয়। তিনি আরো বলেন, যারা ডাকাতি করছে তাদের বেশিরভাগ টোকাই এবং উঠতি বয়সি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কার্যক্রম শুরু করলে দ্রুতই এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সূত্র জানিয়েছে, গত দুই সপ্তাহে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ এসেছে এক লাখের বেশি। মিরপুর এলাকায় দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আমরা কয়েক হাজার অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। যতটুকু সম্ভব আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। থানার কার্যক্রম না থাকায় এ ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সেনাসদরে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানের উপস্থিতিতে নবনিযুক্ত পুলিশের আইজি, র‌্যাবের মহাপরিচালক এবং ডিএমপি কমিশনার সাক্ষাৎ করেন। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেনাবাহিনীর সহায়তায় দেশের সব থানার কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আরশিনগর, আটিবাজার, নয়াবাজার, বসিলা, বসিলা মেট্রো হাউজিং, মোহাম্মদপুরের কাদিরাবাদ হাউজিং, শেখেরটেক, জিগাতলা, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ এলাকা, শনিরআখড়া, মিরপুরের পল্লবী, মিরপুর ১০, ইসিবি চত্বর, উত্তরার ৮, ৯, ১০ ও ১১ নম্বর সেক্টরসহ বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় শতাধিক ডাকাতকে আটক করা হয়েছে।

এদের মধ্যে উত্তরার ঘটনায় হাতেনাতে আটক হয় ৯ ডাকাত। মিরপুরের ইসিবি চত্বর এলাকার বাসিন্দা মেরিনা মিতু বলেন, ইসিবি এলাকায় বুধবার রাত ৯টার দিকে ২-৩শ’ ডাকাত একসঙ্গে ৭০টি ভবনে ঢুকেছিল। এলাকাবাসী তাদের ধাওয়া করে সব এক্সিট গেটে অবস্থান নিয়ে ঘেরাও করে ১৭ জনকে আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে।

উত্তরা পশ্চিম (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, কয়েকদিন ধরে গভীর রাতে রাজধানীর উত্তরাজুড়ে ‘ডাকাত-সন্ত্রাসীরা’ প্রবেশ করেছে জানিয়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা আসছে। বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার পর থেকে উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরের মসজিদ থেকে এলাকায় ডাকাত ঢুকেছে জানিয়ে কিছুক্ষণ পর পর সতর্ক বার্তা প্রচার করা হয়। পরে ডাকাত-সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে ১১ নম্বর সেক্টরে উত্তরা পশ্চিম থানার সামনে জড়ো হয় সাধারণ মানুষ।

তুরাগের রানাভোলা, ফুলবাড়িয়া এলাকার একাধিক মসজিদের মাইক থেকেও এলাকায় ডাকাত-সন্ত্রাসী ঢুকে পড়েছে জানিয়ে সবাইকে সতর্ক অবস্থানে থাকার আহ্বান জানানো হয়। তুরাগের বাসিন্দা সজিব বলেন, মসজিদের মাইকে ঘোষণা শুনে ডাকাত প্রতিরোধে রাস্তায় বের হয়ে এসেছি। উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ডাকাত-সন্ত্রাসী প্রতিহত করতে আমরা তৎপর আছি। বিভিন্ন বাসাবাড়িতে লাইট জ্বালিয়ে মানুষ সতর্কাবস্থায় নিজ নিজ গ্যারেজে অবস্থান করছে। মাইকে ঘোষণা এলে সবাই রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছে।

বৃহস্পতিবার রাতে মোহাম্মদপুর কাদেরাবাদ হাউজিংয়ের বাসিন্দা নিয়াজ আহমেদ পাভেল বলেন, বুধবার রাতে আমরা কেউ ঘুমাতে পারিনি। রাত ১০টার দিকে কাদেরাবাদ হাউজিংয়ে ডাকাত ঢুকেছিল। খবর পেয়ে এলাকাবাসী রাস্তায় বেরিয়ে পড়লে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। পরে সেনাবাহিনীর লোকজন এসে এলাকায় টহল দেয়। এলাকাবাসী সারা রাত জেগে গোটা হাউজিং পাহারা দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মাইনুল হাসান বলেন, রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে আমরা আর্মড ফোর্সেস ব্যাটালিয়ন নিয়োগ করেছি। র‌্যাবও কাজ করবে। পুলিশকেও মাঠে নামানো হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই হচ্ছে বলে অমাদের কাছে তথ্য এসেছে। ৫ জুলাই হামলার কারণে আত্মরক্ষায় অনেক পুলিশ সদস্য কর্মস্থল ত্যাগ করেন। ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের কারণে অনেক থানার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় নতুন আইজিপি দায়িত্ব গ্রহণের পর বুধবার ২৪ ঘণ্টার সময় দিয়ে সবাইকে কাজে যোগদানের আহ্বান জানান। এই আহ্বানে যোগ দিয়ে অনেকেই কর্মস্থলে ফিরছেন। আশা করছি, দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বলেন, ডাকাতি এবং জননিরাপত্তাহানিকর কর্মকাণ্ড রোধে বিজিবি তৎপর আছে। অপরাধীদের তৎপরতা রোধে ঢাকায় দুটি হটলাইন চালু করেছি। হটলাইনে কোনো অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সোনালী বার্তা/এমএইচ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর