মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৫১ পূর্বাহ্ন

ওমরাহ হজ্জ পালনের দিকনির্দেশনাসমূহ 

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৭২ Time View
Update : শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৪

ওমরাহ হজ পালনের ইচ্ছা আমাদের কমবেশি সকলেরই থাকে। ইসলামের ভাষায়, পবিত্র হজের সময় ছাড়া অন‍্য যে কোন সময় পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফসহ নির্দিষ্ট কিছু কাজ করাকে ওমরাহ বলে। ওমরাহ পালনের আগে আপনাকে প্রধানত চারটি কাজ করতে হবে। এদের মধ‍্যে দুটি হচ্ছে ফরয এবং পরের দুটি হচ্ছে ওয়াজিব। আজকের লেখায় আমরা এসব কাজ নিয়েই কম বা বেশি আলোচনা করবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক। 

ওমরাহ হজ্জ পালনের জন‍্যে করণীয় দিকনির্দেশনাসমূহ এর বিস্তারিত 

ওমরাহ পালনের আগে আপনাকে কিছু কাজ সম্পর্কে অবশ‍্যই সতর্ক থাকতে হবে। এই কাজগুলো করার জন‍্যে আপনাকে সর্বদা প্রস্তুত থাকা দরকার। নিচে এদের বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো: 

১. ইহরাম পরিধান করা 

ওমরাহ হজের প্রধান কাজ হচ্ছে ইহরাম বাঁধা। তবে ইহরাম বাঁধার আগে বেশ কিছু কাজ আছে। এদের মধ‍্যে অন‍্যতম হচ্ছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অর্জন, চুল-দাড়ি-গোঁফ কাটা, মহিলাদের চুলের আগা ছাঁটাই, নাভির দিকের চুল পরিষ্কার করা, পুরুষ ও নারী উভয়েই সেলাইবিহীন পোশাক পরিধান ইত্যাদি। 

ইহরামের আগে কেউ যদি ফরয গোসলের প্রয়োজনবোধ করে তাহলে সে করতে পারে। এছাড়াও ইহরাম বাঁধার পর যদি মনে করে শরীরে সুগন্ধি লাগানোর প্রয়োজন আছে তবে তা গায়ে লাগাবে। ফরয নামাযের সময় নামায পড়া, বেশি বেশি উচ্চস্বরে তাকবীর পড়া। পুরুষরা উচ্চস্বরে এবং মহিলারা নিম্নস্বরে, ধীরে ধীরে পড়বে। তাকবীরটি হচ্ছে: 

“লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাক।” 

২. তাওয়াফ করা

দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে, তাওয়াফ করা। পবিত্র কাবাঘরে সাতবার প্রদক্ষিণকে তাওয়াফ বলা হয়। ওমরাহর উদ্দেশ্যে মসজিদে হারামে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করে দোয়া পাঠ করতে হবে। দোয়াটি হচ্ছে: 

“বিসমিল্লাহি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। আউজু বিল্লাহিল আজিম ওয়া বি-ওয়াজহিহিল কারিম ওয়া সুলতানিহিল কাদিমি মিনাশ শায়তানির রাজিম। আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা।”

তাওয়াফের জন‍্যে হাজরে আসওয়াদের দিকে অগ্রসর হবে এবং ডানহাত দিয়ে এটিকে চুমু খাবে। যদি হাজরে আসওয়াদ সরাসরি ধরতে না পারে তাহলে হাতে চুমু খাবে। তাওয়াফের সময় কাবা শরীফ এবং হাজরে আসওয়াদকে বামে রেখে রোকনে শামি এবং রোকনে ইরাকি অতিক্রম করবে। এর পাশাপাশি যেই কাজগুলো করবে: 

  • তাওয়াফের শুরু থেকে শেষ পযর্ন্ত রমল করা। রমল কী? রমল হলো ছোট ছোট পদক্ষেপে দ্রুত হাঁটা। আর বাকি চার চক্করে কোন ধরনের রমল নেই। তাই সেখানে স্বাভাবিক গতিতে হাটলেও কোন ধরনের সমস‍্যা নেই। সাত চক্কর দেওয়ার পর তাওয়াফ শেষ করে ডান কাঁধ ঢেকে নিয়ে মাকামে ইবরাহীম বলা শুরু করবে। দোয়াটি হচ্ছে: 

 “ওয়াত্তাখিজু মিম মাকামি ইবরাহিমা মুসল্লা”। 

  • দুই রাকাত সালাত আদায় করা। এবং জমজমের পানি পান করা। জমজমের পানি পান করার সময় বলতে হবে: 

“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফি’আ, ওয়ারিজক্বাও ওয়াসি’আ, ওয়াশিফাআম মিন কুল্লি দা’ঈ।”

অর্থ: “ (হে আল্লাহ, আমাকে উপকারী জ্ঞান দান করুন! পর্যাপ্ত রিজিক দান করুন! সব রোগের শিফা দান করুন)।”

  • সাফা এবং মারওয়ায় সাঈ করা। সাফা-মারওয়াতে দৌড়ানোর পর নিচের এই দোয়াটি পাঠ করা শ্রেয়। দোয়াটি হচ্ছে: 

“ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআইরিল্লাহ। “

উপরোক্ত আয়াতটি শুধুমাত্র সাফার নিকটবর্তী হলে পড়বে। সাফা-মারওয়াতে প্রতিবার আয়াতটি পড়ার দরকার নেই। এর কিছুক্ষণ পরেই বলবে:

“নাবদাউ বিমা বাদাআল্লাহু বিহি।” 

অর্থ: আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন আমরাও তা দিয়ে শুরু করছি।” 

  • জিকির করা, দোয়া এবং কোরআন তেলওয়াত করা। 

৩. সাফা এবং মারওয়ায় সাঈ করা: 

ওমরার তৃতীয় অন‍্যতম কাজ হচ্ছে সাফা এবং মারওয়ায় সাঈ করা। জমজমের পানি ধীরে ধীরে পান করা এবং সাফা পাহাড়ে আরোহণ করা। সাফা এবং মারওয়া পাহাড় দুটিই কাবা শরীফের পাশেই অবস্থিত। এর পরপরই আপনি সাঈ করার স্থান পাবেন। যখনই আপনি সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী হবেন তখনই পড়বেন:

‘ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআইরিল্লাহ। ’

মনে রাখতে হবে, এই দোয়াটি শুধুমাত্র সাঈর শুরুতে সাফার নিকটবর্তী হলেই পড়বেন। সাফা-মারওয়া পার হওয়ার সময় প্রতিবার এটি পড়ার দরকার নেই। আয়াতটি হচ্ছে: 

“নাবদাউ বিমা বাদাআল্লাহু বিহি।”

 অর্থ: আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন আমরাও তা দিয়ে শুরু করছি।”

এরপর সাফা পাহাড়ে উঠবে যাতে করে কাবা শরীফ নজরে আসে। কাবা শরীফের দিকে তাকিয়ে পড়বে আলহামদুলিল্লাহি আল্লাহু আ’কবার। এরপর যদি কাবা’শরীফ নজরে আসে তাহলে কাবাকে সামনে দুহাত তুলে দোয়া করে পড়বে। দোয়াটি হলো: 

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহ। লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহ, আনজাজা ওয়াদাহ, ওয়া নাসারা আবদাহ, ওয়া হাজামাল আহজাবা ওয়াহদা। ’

নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়াসমূহ প্রদান করা হলো: 

  • সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী হলে পড়বে: 

সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী হলে তখন নিচের এই দোয়াটি পাঠ করবেন। দোয়া পাঠকালে বেশি বেশি জিকির করবে। জিকিরটি তিনের অধিকবার পাঠ করবে এবং এরই মধ‍্যে বেশি বেশি দোয়া করবে। 

দোয়াটি হলো: “ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআইরিল্লাহ।” 

  • কাবা ঘর নজরে এলে পড়বে: 

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহ। লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহ, আনজাজা ওয়াদাহ, ওয়া নাসারা আবদাহ, ওয়া হাজামাল আহজাবা ওয়াহদা। “

  • সাঈ এর সবুজ চিহ্নিত স্থানে এ দোয়া পড়বে: 

মক্কার সাঈ এর সবুজ চিহ্নিত স্থানে দাড়িয়ে এই দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করবেন। দোয়াটি হচ্ছে:

“রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতাল আ-আজজুল আকরাম। “

দোয়াটি পাঠ শেষ হলে সবুজ চিহ্নিত স্থানটি ধরে সকলেই স্বাভাবিক গতিতে হাটবে। এরপর মারওয়ার উপরে উঠে কিবলামুখী হয়ে দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। সাফা পাহাড়ের উপরে উঠে আপনি যা যা বলেছেন এবং পড়েছেন সেই সবকিছুই পড়বেন এবং বলবেন। এরপর মারওয়া থেকে হেঁটে সাফার উদ্দেশ্যে রওনা করবেন। স্বাভাবিকভাবেই সাফার উদ্দেশ্যে হেঁটে মারওয়া অভিমুখে রওনা হবেন। স্বাভাবিক নিয়মে সাফার উদ্দেশ্যে দৌড়ে যাবেন এবং মারওয়া থেকে নেমে দৌড়ানোর স্থানে দৌড়ে পার হবেন। সাফাতে পৌছানোর পর আগে যা যা করেছেন তাই করবেন। এভাবেই সাতটি চক্কর শেষ করবেন। সাফওয়া থেকে মারওয়াতে এলে এক চক্কর এবং মারওয়া থেকে সাফাতে এলে আরেক চক্কর। দুটি চক্করই আপনার জন‍্যে সেরা। এছাড়াও সাঈর মধ‍্যে একজন মহিলা বা পুরুষ তার ইচ্ছানুযায়ী দোয়া এবং ইস্তেগফার পড়তে পারেন। 

  • সাঈ শেষ হলে নিচের দোয়াটি পাঠ করবে: 

“রাব্বানা তাক্বাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আনতাস ছামিউল আলিম।”

৪. মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট রাখা: 

ওমরাহ করার অন‍্য আরেকটি বিশেষ কাজ হচ্ছে মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট রাখা। সাত চক্করের সাঈ শেষ করার পর আপনার এবং আমার প্রধান অন‍্যতম কাজ হচ্ছে মাথা মুন্ডন করা বা চুল ছোট রাখা। তবে একটি কথা মাথায় রাখতে হবে চুল ছোট করার ক্ষেত্রে সর্বাংশের চুল ছোট করতে হবে। মাথা মুন্ডন করা মাথার চুল ছোট করার চাইতেও অধিক উত্তম। নারীরা সবসময়ই এক কর পরিমাণ পর্যন্ত মাথার চুল ছোট করে রাখবে। 

শেষ কথা 

উপরের পদ্ধতিতে মুলত পবিত্র ওমরাহ হজ্জ্ব এর সকল কার্যাবলি শেষ হয়। আশা করি উপরের সমস্ত কাজ পাকাপোক্ত ভাবে শেষ করে আপনি আপনার সম্পূর্ণ ওমরাহের কাজটি শেষ করতে পারবেন। ওমরাহ মহান রাব্বুল আলামীন এর কাছ পাওয়া সারা মুসলমান জাতির জন‍্যে রহমতস্বরূপ। উপরের পদ্ধতিতে ওমরাহ পালন করুন এবং ওমরাহের সকল কার্যাবলি যেমন ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ, মাথা মুন্ডন বা মাথার চুল ছোট এই কাজগুলো নিঁখুতভাবে সম্পন্ন করা।

  


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর