রাজশাহীতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের সাথে বাজার তদারকিতেও শিক্ষার্থীরা
রাজশাহী মহানগরীর মোড়ে মোড়ে হাতে লাঠি, মুখে বাঁশি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন শিক্ষার্থী। হাতের ইশারায় সবকিছু নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছেন। রাজশাহী নগরজুড়ে এভাবে শিক্ষার্থীরা মিলে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছেন।
শুধু তা-ই নয়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে লুট হওয়া জিনিসপত্র ফেরত, রাত জেগে পাহারা দেওয়ার মতো কাজেও রয়েছেন তারা। সবশেষ শুক্রবার বাজার তদারকিতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন এই শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার দুপুরে রেলগেট, তালাইমারি, লক্ষ্মীপুর ও সাহেবাজার জিরোপয়েন্টসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন মোড়ে দেখা গেল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে রয়েছে আনসার সদস্যদেরও। শিক্ষার্থী ও আনসার সদস্যরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। বৃষ্টি হলে কেউ কেউ ভিজছেন। তাদের হাতে চকলেট থেকে শুরু করে দুপুরের ভারী খাবার পর্যন্ত নগরবাসী পৌঁছে দিচ্ছেন।
প্রথম শ্রেণীর শিশু সাফিয়া জান্নাত সেজদা ও নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিরাতুল জান্নাত রুকু নামের দুই বোন নগর ভবনের সামনে নিয়ে এসেছে খাবার। তার নগরের কাদিরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। সেখানে দায়িত্ব পালন করছে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
রায়হান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষার্থীরা যে বিজয় এনেছেন, তা শিক্ষার্থীদেরই ধরে রাখতে হবে। এখানে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে মূলত শিক্ষার্থীরাই মাঠে রয়েছেন। তাদের সাধারণ মানুষ খুবই প্রশংসা করছেন। তারা চান সবাই মিলে দেশটাকে সাজাতে।
এদিকে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীদের একটি দল রাজশাহী নগরের সাহেববাজার এলাকায় বাজার তদারকি করেছেন। তারা দোকানে দোকানে গিয়ে ক্রয়মূল্য ও বিক্রয়মূল্য দেখেছেন। কয়েকটি দোকানে বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রি করার বিষয়টি নজরে এলে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীদের পণ্যের বিক্রয়মূল্যের তালিকা ঝোলানোর নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে, রাতের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে ‘সেভ রাজশাহী’ -এর শিক্ষার্থীরা। তারা নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্তরে নিরাপত্তা দিচ্ছেন। একটি দল পাহারা দিচ্ছে এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান। পাহারা দেওয়ার পাশাপাশি পশু-পাখিরও খাবারের ব্যবস্থা করছে তারা। এছাড়াও কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ দল রাতে টহল দিচ্ছে।
তাওকীর ইসলাম বলেন, রাজশাহীর নিরাপত্তায় ছাত্র-জনতাসহ সব শ্রেণির মানুষ যোগ দিয়েছেন। শুধু রাতের বেলায় নয়, দিনের বেলায়ও কোথাও কোনো সমস্যা হলে তাদের টিম চলে যাচ্ছে। কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্যোগে রাজশাহী নগর ভবন, নগর পুলিশ সদর দপ্তর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক, এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যানের লুট হওয়ার জিনিপত্র ফিরিয়ে আনছেন।
এদিকে নগরের দেয়াল লিখনের কাজও করছেন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দল। একদিকে দেয়াল পরিষ্কার করছেন তাঁরা, আবার রংতুলিতে নানা স্লোগানও ফুটিয়ে তুলছেন। ‘বর্ণিল রাজশাহী’ নামে শিক্ষার্থীরা নগরের শাহমখদুম কলেজের সামনের দেয়ালে বিভিন্ন স্লোগান লিখছেন।
এখানে ৫ আগস্ট সংঘর্ষে নিহত হন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবিব আনজুম নামের একজন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজশাহী কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী আলী রায়হান। এই এলাকায় তাঁদের স্মরণে গ্রাফিতি আঁকা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ফুটিয়ে তুলছেন ‘নিজের আওয়াজ নিজে তুলি, গণতন্ত্র বজায় রাখি’, ‘দেশকে ভালোবেসে আগলে রেখো’ ইত্যাদি স্লোগান।
দেয়ালজুড়ে নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণ করা হবে বলে জানালেন রাজশাহী কলেজের গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সোমাইয়া আনোয়ার। তিনি বলেন, রাজশাহীর এই জায়গায় তাদের দুই ভাই শহীদ হয়েছেন। এখানে তাদের স্মরণ করা হবে।
এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন এলাকায় দেয়ালে দেয়ালে তারা নতুন বাংলাদেশের আহ্বানে নানা রকম স্লোগান, ছবি আঁকবেন। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রয়েছেন।
সোনালী বার্তা/এমএইচ