মাদারীপুরে অস্তিত্ব সংকটে ৮ কিলোমিটারের বরিশাল খাল
মাদারীপুরে দখল আর দূষণে অস্তিত্ব সংকটে বরিশাল খাল। ময়লা-আবর্জনা ফেলায় ভরাট হয়ে গেছে খালের ৮ কিলোমিটারের বেশিরভাগ অংশ। এতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে পানিপ্রবাহ। ফলে দুর্গন্ধে বাড়ছে রোগ- বালাই।এতে করে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তবে, খালটি পুনরায় খননের আশ্বাস পানি উন্নয়ন বোর্ডের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, খালটি দেখে মনে হতে পারে এ যেন কোনো এক ময়লার ভাগাড়। কিন্তু না এটি মাদারীপুর শহরের ইটেরপুল থেকে পাথুরিয়ার পাড় এলাকাজুড়ে বরিশাল খালের চিত্র। এক সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনে এই খাল দিয়ে শহর থেকে সরাসরি নৌপথে বরিশাল যাতায়াত করতে হতো স্থানীয়দের। এজন্য এটির নাম হয় বরিশাল খাল। কিন্তু ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি দখল আর দূষণে ভরাট হয়ে গেছে বেশিরভাগ অংশ। যাও বা আছে, তাও আশপাশের লোকজন ময়লা আর আবর্জনা ফেলায় ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, বাড়ছে রোগবালাই। পানিপ্রবাহ না থাকায় অনেকেই ধানের চারাও রোপণ করেছেন খালের ভেতর। কোথাও আবার বেড়িবাঁধ দিয়েও খালটির মুখ আটকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় চাষাবাদে দেখা দিয়েছে পানি সংকট।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক বিভাগ এবং এলজিইডি’র যৌথ উদ্যোগে খালের দুই পাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পাশাপাশি খালের মধ্যে থাকা ময়লা-আবর্জনা, কচুরিপানাও পরিষ্কার করা হয়। সে সময়ে খালটি খননের উদ্যোগ নেওয়া হলেও অদৃশ্য কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। দুই যুগ আগেও এই খাল দিয়ে ছোট-বড় নৌযান চলাচল করত। কালের বিবর্তনে অস্তিত্ব সংকটে এই বরিশাল খালটি। শীঘ্রই এটি পুনরায় খনন করে নাব্য ফিরিয়ে আনার দাবি এলাকাবাসীর।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা কামাল হাওলাদার বলেন, পুরনো ঐতিহ্যবাহী বরিশাল খালটির বর্তমানে বেহাল অবস্থা, এত দুর্গন্ধ এর আশপাশে থাকাই যায় না। ময়লার স্তূপ হয়ে গেছে। প্রশাসন ও সরকারের কাছে দাবি, জরুরি ভিত্তিতে ময়লা অপসারণ করে আমাদের দূষণ থেকে রক্ষা করবেন।
ইটেরপুল জামে মসজিদের মোয়াজ্জেম মাসুদুর রহমান বলেন, অনেক আগে এই খাল দিয়ে নৌযান চলাচল করত। চোখের সামনে দেখতাম।কিন্তু খালটির বর্তমান অবস্থা খুবই করুণ। অথচ এই খালটির প্রতি কারও নজর নেই। খালের ভেতর থাকা ময়লা-আবর্জনায় মশা-মাছির সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বাড়ছে রোগবালাই। আমরা এর প্রতিকার চাই।
নতুন মাদারীপুর এলাকার বাসিন্দা কাজী মোজাচ্ছের হোসেন বলেন, এখানে বড় একটি খাল ছিল। এখান দিয়ে নৌযান চলাচল করত। কৃষকরা খাল থেকে পানি নিয়ে সেচে ব্যবহার করত। কিন্তু বর্তমানে পানি না থাকায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এটি পুনরায় খনন করলে এলাকাবাসী সবারই উপকার হয়।
স্থানীয় পরিবেশবাদী রাজন মাহমুদ বলেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা আর স্থানীয়দের প্রয়োজনের তাগিদে খালটি দ্রুত খনন প্রয়োজন। দীর্ঘদিন খালটির নাব্য বন্ধ থাকলে বৃষ্টির পানি না নামতে পারলে শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
খালটির মালিকানা জেলা পরিষদের হলেও এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি নন কর্মকর্তারা। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের খান জানান, ‘জেলা পরিষদ থেকে খননের একটি চিঠি পেলেই উদ্যোগ নেওয়া হবে। বর্তমানে খালটির অবস্থা খুবই খারাপ। পলি আর নোংরা আবর্জনায় ভরাট হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে পানিপ্রবাহ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এটি জরুরি ভিত্তিতে খনন করা প্রয়োজন। এর মালিকানা জেলা পরিষদের হওয়ায় সেখান থেকে একটি চিঠি হাতে পেলে খনন কাজে কোনো বাধা থাকে না। জেলা পরিষদ থেকে চিঠি না দিলে খালটি খনন করা সম্ভব না।
সোনালী বার্তা/এমএইচ