গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ, বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ ও কারখানা খোলার দাবী
গাজীপুরের বড়বাড়ি এলাকায় ন্যাশনাল কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড কারাখানার শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তারা বন্ধ ঘোষনা কারখানা খোলার দাবীতেও বিক্ষোভ করছে। মহানগরের বড়বাড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় মহাসড়কের উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে বিভিন্ন স্থানে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাওয়া যাত্রীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। রবিবার (১৮ আগস্ট) সকাল ৯ টা থেকে বেলা ১১ টা পর্যন্ত দুই ঘন্টা শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষাভ করেন।
শ্রমিক নেতা জালাল হাওলাদার বলেন, ১৩ (১) ধারায় কর্তৃপক্ষ লে-অফ ঘোষনা করে কারখানা বন্ধ করে দেয়। কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করছে। শ্রমিকেরা ৭ মাসের বকেয়া বেতন পাবে। বন্ধ ঘোষনার পর থেকে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ছাঁটাই প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের পুনরায় নিয়োগ দেওয়ার দাবীও জানান তারা।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা জানায়, তাদের ২০২৩ সালের ২ মাস ১৯ দিনের লে-অফ কালীন বকেয়া বেতন, বাৎসরিক ছুটির টাকা, চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ০৯ তারিখ থেকে জুলাই মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত লে-অফ চলাকালীন বকেয়া পাওনা এবং বকেয়ার ১০% ঈদ বোনাসের টাকা পরিশোধের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়ে উভয় পাশে অবরোধ করে রাখে। দুই শতাধিক শ্রমিকের বেতন না দিয়ে কয়েক মাস আগে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। শ্রমিকেরা বিভিন্ন সময়ে তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কর্তৃপক্ষ তাঁদের কথার গুরুত্ব না দিয়ে সময় পার করছেন। শ্রমিকেরা গাজীপুর জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছেও অভিযোগ করেছেন। রবিবার সকাল থেকে বাধ্য হয়ে শতাধিক শ্রমিক কারখানার সামনে বকেয়া বেতন-ভাতা ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধের দাবিতে জড়ো হন। পরে তাঁরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বৈুদুতিক খুঁটি ফেলে বড়বাড়ি এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
ন্যাশনাল কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড কারাখানার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহফুজুর রহমান বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ০৯ তারিখ কারখানা লে-অফ ঘোষনা করে। এ কারখানার ২০৮ জন শ্রমিকের ৭ মাসের বেতন-বোনাস বকেয়া আছে। বেতন-ভাতা না দিয়ে ৬ মাস আগে গোপনে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করে কারখানা লে-অফ ঘোষনা করে বন্ধ করে দেন। তাদের বকেয়া বেতন-ভাতার ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। সেই সঙ্গে দ্রæত কারখানা চালু করে শ্রম আইন অনুযায়ী বেতন ভাতা পরিশোধের দাবি জানান। বেতন-ভাতা পরিশোধ করা না হলে তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরো বলেন, গত ৭ জুলাই বেলা ১১ টায় শ্রম ভবন ত্রিপক্ষীয় সভা হয়েছে। কিন্তু ন্যাশনাল কেমিক্যাল কারখানার মালিক এম এন এইচ বুলু সভায় উপস্থিত হয় নাই। শ্রমিকেরা বেতন না পেয়ে কষ্টে দিনযাপন করছে। অনেক শ্রমিকের ছেলে মেয়েকে বেতন বকেয়া থাকায় স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে। অনেকেই না খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তারা টাকার জন্য তাদের অসুস্থ মা বাবার চিকিৎসা করতে পারছে না। বাড়িওয়ালা ঘর থেকে বের করে দিতে চাইছে। দোকানদাররা বাকি টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। এসব কারনে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছে।
গাজীপুর নগরের গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের দাবির বিষয়টি কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করা হবে। বেলা ১১ টার দিকে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরানো হয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন বলেন, মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজ, ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এ আগে থেকেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা শিল্প পুলিশসহ সেনাবাহিনী শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়কের পাশে কারখানার সামনে নিয়ে আসলে বেলা সোয়া ১১ টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় পাশের যানচলাচল শুরু হয়।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর টঙ্গী গাজীপুরের শ্রম অধিদপ্তরের পরিদর্শক (সাধারণ) মাকসুদুর রহমান কারখানার সামনে শিল্প পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং শ্রমিকদের সাথে কথা বলে আগামী বুধবার (২১ আগস্ট) টঙ্গী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে একটি ত্রিপাক্ষিক মিটিং করার প্রতিশ্রæতি দিলে সকল শ্রমিকেরা সিদ্ধান্ত মেনে বেলা সোয়া ১২ টায় কারখানার সামনে থেকে চলে যায়।
সোনালী বার্তা/এমএইচ