বৈধ পাম্পের আড়ালে অবৈধ তেল চোরাচালানী বাণিজ্য (পর্ব-২)
সরকার পতনের পর চোরাই তেলের ব্যবসা নতুন করে নিয়ন্ত্রণে
স্থানীয় যুবদল নেতার ইশারায় ৫০ হাজার লিটার তেল লুট
৪৫ লাখ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে নিজস্ব সিন্ডিকেটের কাছ থেকে ক্রয়
লাখ লাখ লিটার তেল জাহাজ থেকে নামিয়ে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ
ক্ষমতার পালাবদলের পর মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার মেঘনাঘাট এলাকার তেল চোরাকারবারী ব্যবসারও হাতবদল হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের একদিন পর মেঘনাঘাট এলাকায় যুবদলনেতা হেলাল উদ্দিন ভূইয়া তার দলবল নিয়ে মেঘনাঘাট এলাকার তেল চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে মারপিট করে বোরহানউদ্দিন সিন্ডিকেটকে হটিয়ে মেঘনাঘাট এলাকার অবৈধ তেল ব্যবসায় দখল নেন হেলাল উদ্দিন ভূইয়া ও মোখলেছ সিন্ডিকেট। একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে হেলাল-মোখলেছ সিন্ডিকেট মেঘনাঘাটের অবৈধ তেলের ব্যবসা তাদের নেতৃত্বে চলছে।
জানা যায়, ঐ দিন রাতেই হেলাল উদ্দিন ভূইয়ার সিন্ডিকেট একজোট হয়ে বিগত দিনের তেল চোরাচালানির প্রধান বোরহান উদ্দিনের জাহাজে হামলা করে রোরহানসহ তার লোকজনকে জিম্মি করে প্রায় ৫০ হাজার লিটার তেল লুট করে নিয়ে যায়! শুধু তেল লুট করেই হেলাল ভূইয়া ক্ষ্যান্ত হননি, পুর্বের সিন্ডিকেটের প্রধান গোপালী বোরহানকে বেধড়ক মারপিট করে তার কাছ থেকে জোরপূর্বক মুচলেকা আদায় করে এবং ভবিষ্যতে মেঘনাঘাট এলাকায় তেলের ব্যবসা করবেন না বলে একটি ভিডিও ধারণ করে নিজেদের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
মেঘনাঘাট এলাকার অবৈধ তেল ব্যবসা নিয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, যুবদল নেতা পরিচয়দানকারী হেলাল উদ্দিন ভূইয়া ও স্থানীয় যুবদল নেতা মোখলেসুর রহমান দুইটি জাহাজ নিয়ে গোপালী বোরহান উদ্দিনের লোকজনকে জিম্মি করে জাহাজ থেকে ৫০ হাজার লিটার ডিজেল জোরপূর্বক লুট করে নিয়ে যায় হেলাল উদ্দিন ভূইয়া ও তার সহযোগীরা। পরে মেঘনাঘাটে লুট করা ৫০ হাজার লিটার ডিজেল তার সিন্ডিকেটের সাথে রফাদফা করে একটি মূল্য নির্ধারণ করে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিজস্ব মালিকানাধীন মুন পেট্রোল পাম্পে মজুদ করে বিভিন্ন গাড়িতে বিক্রি করছে।
জানা যায়, হেলাল উদ্দিন ভূইয়া ৫০ হাজার লিটার তেল ৪৫ লাখ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে তার সিন্ডিকেটের কাছ থেকে ক্রয় করে। এই টাকা থেকে হেলাল উদ্দিন ভূইয়া যুবদল নেতা মোখলেসকে দেন সাত লাখ টাকা। অন্য আরেক গ্রুপকে ২০ লাখ টাকা এবং নিজের গ্রুপের জন্য রাখেন ১৮ লাখ টাকা।
আরো জানা গেছে, বৈধ পাম্পের আড়ালে দীর্ঘদিন যাবত হেলাল উদ্দিন ভূইয়ার বিরুদ্ধে চোরাই তেলের ব্যবসা করে আসার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। হেলাল উদ্দিন ভূইয়া নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল তেলের ডিপো থেকে এক গাড়ি তেল বৈধভাবে ক্রয় করার পর গোদনাইল এলাকার তেল চোরাকারবারীদের কাছ থেকে আরো তিন-চার গাড়ি তেল নিয়ে আসতেন নিজের পাম্পে। রাস্তায় পুলিশি ঝামেলা এড়াতে এক গাড়ির কাগজ দেখিয়েই দীর্ঘদিন যাবত চোরাই তেলের ব্যবসা করে আসছেন। শুধু চোরাই তেলের ব্যবসায়ই নয়, সংখ্যালঘুদের জমি দখলের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
কিছুদিন আগেও হেলাল উদ্দিন ভূইয়া ছিলেন ব্যাংক ডিফল্ডার; কিন্তু অল্প কয়েকদিনের মাথায় কোন আলাদ্দিনের চেরাগবলে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেলেন?
গজারিয়া থানার বিভিন্ন মৌজায় তার রয়েছে ৫০ বিঘারও বেশি জমি, তিনটি ভাসমান পাম্প, একটি পেট্রোল পাম্প, রাজধানী ঢাকাতে একাধিক ফ্ল্যাট, বাড়ি-গাড়ি-দোকানসহ অঢেল সম্পদ।
এদিকে, লুট হওয়া তেলের বিষয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অবগত করেছেন বোরহান উদ্দিন। এর সাথে লুট হওয়া ৫০ হাজার লিটার তেলের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ করছেন হেলাল উদ্দিন ভূইয়া গং।
দীর্ঘদিন যাবত মেঘনাঘাট এলাকার অবৈধ তেলের ব্যবসা প্রশাসনের অসৎ কিছু কর্মকর্তার সহযোগীতায় প্রকাশ্যে করে আসছিলো রোরহান উদ্দিন ও কাছড়া মিলন সিন্ডিকেট। সরকার পতনের পর হেলাল সিন্ডিকেট চোরাই তেলের ব্যবসা তাদের নিয়ন্ত্রণে নেন। এর সাথে প্রতিদিন লাখ লাখ লিটার তেল জাহাজ থেকে নামিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে চক্রটি।
অন্যদিকে, যুবদলনেতা পরিচয়দানকারী হেলাল উদ্দিন ভূইয়া ও মোখলেসুর রহমান গং লুট করে নিয়ে যাওয়া ৫০ হাজার লিটার তেলের বিষয়ে জানতে তাদের মোবইল ফোনে কল দিলে হেলাল উদ্দিন কল রিসিভ করেননি। অন্যদিকে মোখলেসুর রহমান কল রিসিভ করে জানান, আমি ছাত্রদল থেকে যুবদল করি। এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার দ্বায়িত্ব আমার।
তেল লুট ও বিক্রির সাত লাখ টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং মেঘনাঘাটে তার অফিসে আমন্ত্রণ জানান এবং সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।
সোনালী বার্তা/এমএইচ