শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৪৫ পূর্বাহ্ন

গাজীপুরে হকার হত্যায় গাছা থানায় শেখ হাসিনা কাদের-সহ ১১৫ জনের নামে হত্যা মামলা

কাজী মকবুল গাজীপুর / ৫৮ Time View
Update : শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৪

গাজীপুর মমহানগরীর গাছা থানা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হকার হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৩০০/৩৫০ জন আসামী করে আরো একটি হত্যা মামলা রুজু হয়েছে। মালাটি দায়ের করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত হকার মোঃ আরিফ বেপারীর পিতা মোঃ রজ্জব আলী।

নিহত মোঃ আরিফ বেপারীর (২৮) পিতা মোঃ রজ্জব আলী চাঁদপুর জেলার মতলব থানার টরকী কান্দা এলাকার বাসিন্দা। মোঃ আরিফ বেপারী তার পিতার সাথে গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানা এলাকায় পূর্ব কলমেশ্বর (মৃধাবাড়ী) হাজী সাইফুলের বাড়ীতে ভাড়া থেকে হকারী মালের ব্যবসা করতেন।

মামলায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো: জাহিদ আহসান রাসেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. আজমত উল্লা খান, সাবেক গাজীপুর সিটির মেয়র এ্যাড. মো: জাহাঙ্গীর আলমসহ ৮ জনকে হুকুমের আসামী করা হয়েছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, গাজীপুর মহানগর পুলিশের গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম। তিনি জানান, গত ২২ আগস্ট দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মামলাটি রুজু করা হয়েছে। মামলায় পরোক্ষ হুকুমে পরস্পর যোগসাজশে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করে সান্ধ্য আইন অমান্য করে জ্বালাও পোড়াও ভাঙ্গচুর করে ক্ষতিসাধন ও হত্যা করার অপরাধের অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, সাম্প্রতিক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যৌক্তিক দাবী নস্যাৎ করার উদ্দেশ্যে উল্লেখিত বিবাদীরাসহ তাদের সহযোগী আরো অজ্ঞাতনামা অনুমান ৩০০/৩৫০ জন সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোকজন খুবই খারাপ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যু, ও ছিনতাইকারী এবং খুনি প্রকৃতির লোক। বাদী তার পরিবারের লোকজনদের নিয়া গাছা থানাধীন পূর্ব কলমেশ্বর (মৃধাবাড়ী) এলাকায় হকারী মালের ব্যবসা করে আসছিলেন। বাদীর বড় ছেলে মোঃ আরিফ বেপারী (২৮) গাছা থানাধীন পূর্ব কলমেশ্বর (মৃধাবাড়ী) এলাকায় হকারী মালের ব্যবসা করতো।

গত ২০ জুলাই বিকাল অনুমান ৩টার সময় বাদীর বড় ছেলে মোঃ আরিফ বেপারী হকারী কাজের উদ্দেশ্য যাওয়ার পথে গাছা থানাধীন কলমেশ্বর সাকিনস্থ আই ইউ টি এর সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপরে অবস্থান করাকালীন অবস্থায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের সাম্প্রতিক কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করিয়া কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাবৃন্দের মদদে ও নেতৃত্বে সকল বিবাদীরাসহ অজ্ঞাতনামা ৩০০/৩৫০ জন বিবাদীরা বোর্ড বাজার আওয়ামী লীগ অফিস হতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রজনতা সহ সাধারণ জনগণের উপর হামলা করতঃ হত্যা করা, অন্তঘাতমূলক কার্য সংঘটন এবং জনমনে আতংক সৃষ্টি ও লুটতরাজের উদ্দেশ্যে কারফিউ ভঙ্গ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং নিষ্ঠুরভাবে এলোপাথারী গুলি বর্ষন করে।

একপর্যায়ে গাছা থানাধীন কলমেশ্বর সাকিনস্থ ঢাকা টু ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপরে ও বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নি সংযোগ করে এবং পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গার্মেন্টস, মার্কেট, দোকানপাটসহ বিভিন্ন সরকারী ও বে-সরকারি স্থাপনা ইত্যাদির ক্ষয়ক্ষতি, চুরি ও লুটপাট করার উদ্দেশ্যে লোহার রড, পাইপ, কাঠ ও বাঁশের লাঠি, ধারালো ছুরি, চাপাতিসহ দেশীয় মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র এবং আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বে-আইনীভাবে জনতাবদ্ধে গাছা থানাধীন বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ ভাংচুর ও লুটপাট করে। পরবর্তীতে বিবাদীরা হেলমেট পরিহিত অবস্থায় বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে মহাসড়কসহ সংলগ্ন অলিগলিতে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন ভবনের আড়াল হতে তাদের নিকট থাকা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা এলোপাথারী গুলিবর্ষণ করতে থাকে।

এই সময়ে বাদীর বড় ছেলে মোঃ আরিফ বেপারী গাছা থানাধীন পূর্ব কলমেশ্বর (মৃধাবাড়ী) এলাকায় হকারী ব্যবসার উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে গাছা থানাধীন পূর্ব কলমেশ্বর সাকিনস্থ মেশিন মার্কেট গলি রাস্তায় অবস্থান করা বিবাদীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়ে বিবাদীদের ছোড়া গুলি মোঃ আরিফ বেপারীর পেটে লেগে গুলিবিদ্ধ হয়। পরে উপস্থিত পথচারী লোকজন আরিফকে গুলিবিদ্ধ হয়ে সৃষ্ট গুরুতর রক্তাক্ত জখম প্রাপ্ত অবস্থায় গাজীপুর মহানগরীর গুটিয়া ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, লোক মারফতে সংবাদ পাইয়া বাদী পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে দ্রুত উক্ত হাসপাতালে গিয়ে ছেলেকে গুরুতর রক্তাক্ত জখম প্রাপ্ত অবস্থায় দেখেন এবং তার পেটে গুলির আঘাত দেখতে পাই। পরবর্তীতে ঘটনার দিন বিকাল সাড়ে ৪টার সময় আমার মোঃ আরিফ বেপারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।

বাদী জানান, আরিফের মৃত্যুর পর ছেলের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ী নিয়ে দাফন সম্পন্ন করে এবং দেশব্যাপী চলমান অস্থিরতা বিরাজমান অবস্থায় থানার কার্যক্রম স্থগিত থাকায় সুষ্ঠ ও সঠিক এবং ন্যায় বিচারের স্বার্থে বিবাদীদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনা করে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে সামান্য বিলম্ব হল।

সোনালী বার্তা/এমএইচ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর