বাগমারায় আম বাগানের ৫০ লাখ টাকার গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ
রাজশাহী বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের কনোপাড়াগ্রামে এক ব্যক্তির আম বাগানের প্রায় ৫০ লাখ টাকার গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতারা। শত বছরের পুরোনো ৭০টি আমের গাছ দিনে দুপুরে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কাটা হয়েছে।
গাছ কাটার ব্যাপারে থানায় মামলা হলেও কোনো প্রতিকার হয়নি বা গাছ কাটা থামেনি। বরং অভিযোগকারীকেই উল্টো আওওয়ামী লীগ নেতারা হুমকি দিয়েছে। শুধু তাই নয়, গাছ খেকোরা জমির জাল দলিল করে দখলেরও চেষ্টা করেছেন। যদিও গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতা ও অস্ত্রধারী এসব ব্যক্তিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
জানা গেছে, বাগমারার গোয়ালকান্দি গ্রামের এনায়েতুল হক পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন। বাগমারার গোয়ালকান্দি মোজার ৬৫২ খতিয়ানে ৩টি দাগে ও কনোপাড়া মোজার ৯৯৮ নং খতিয়ানের ৮টি দাগে তার ৫৮৫ শতাংশ জমির রয়েছে। তিনি ঢাকায় থাকার সুবাদে এই জমিগুলো দেখাশোনা করেন তার কেয়ারটেকার ফজলুর রহমান।
আক্কাস আলী নামে এক ব্যক্তি তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে এনায়েতুল হকের কনোপাড়া স্কুলের উত্তরপাশের আম বাগানের গাছ কাটা শুরু করে। এসময় কেয়ারটেকার ফজলুর রহমান বাধা দিলে তাকে হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এক এক করে এনায়েতুল হকের ৭০টি আম গাছ কেটে বিক্রি করে দেয় আক্কাস আলী। যার মূল্য প্রায় ৫০লাখ টাকা। এছাড়াও সেখানে রয়েছে বড় পুকুরও। এই পুকুরটিও লোকজন নিয়ে দখলের চেষ্টা করে আক্কাস আলী। আক্কাস আলীর কালো থাবায় বর্তমান এনায়েতুল হকের বাগানে আর কোনো আম গাছ নেই বললেই চলে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আক্কাস আলী বাগমারার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের কনোপাড়া গ্রামের একটি স্কুলের শিক্ষক। তার বাড়ি বাগমারার দুলালীপাড়াগ্রামে। স্কুল শিক্ষক হলেও এলাকায় তিনি একজন প্রতারক, অস্ত্রধারী ক্যাডার হিসাবে পরিচিত। তার সহযোগি দুলালীপাড়ার বিপুল, ইয়ার আলী, রেজাউল ইসলাম, ছালাম প্রাং, সাহেল, জিয়া, খলিল। আক্কাস গ্যাংয়ের এসব ব্যক্তিরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অন্যের জমি দখল, পুকুর দখল, সরকারী বা ব্যক্তি মালিকানা জমির গাছ কেটে বিক্রি করা তাদের নিত্যনৈমিত্যের কাজ ছিল।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দাপট দেখিয়ে তারা এসব অপকর্ম করতো। আক্কাস আলী গ্যাংয়ের দৃষ্টি পড়ে এনায়েতুল হকের জমি, আম বাগান ও পুকুর উপর। তিনি দিনে দিনে এনায়েতুল হকের জমির গাছ কেটে সাবাড় করে দেয়। দখল নেয়ার চেষ্টা করে জমি ও পুকুর। কিন্তু গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনিসহ তার সঙ্গপঙ্গরা গা ঢাকা দিয়েছে। যদিও গাছ কাটার সময় সময় এনায়েতুল হকের জামাই শাকিল আলম বাদি হয়ে বাগমারা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ দুইজনকে আটক করলেও থামেনি গাছ কাটা।
এদিকে, আবারো ভিন্ন মহল থেকে কৌশলে এনায়েতুল হকের জমি দখলে নেয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এনায়েতুল হকের জামাই শাকিল আলমকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দিচ্ছে এমন অভিযোগ রয়েছে।
এব্যাপারে এনায়েতুল হকের জামাই শাকিল আলম জানান, আমার শ^শুরের জায়গা জমি দেখভালের জন্য একজন কেয়ারটেকার ছিল। আমরা তার মাধ্যমে জানতে পারি আক্কাস আলী আমাদের জায়গার আম বাগানের ফলস গাছ জোর করে কেটে নিচ্ছে। পরে আমি নিজে থানায় উপস্থিত হয়ে মামলা করি। কিন্তু মামলা করলেও গাছ কাটা বন্ধ হয় নি। তবে আবারো আমার শ^শুরের জায়গা জমি দখলের পাঁয়তারা করা হচ্ছে। বিভিন্নভাবে আমাকে ফোন দেয়া হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অরবিন্দ সরকার বলেন, আক্কাস আলী শিক্ষক হলেও তিনি একজন প্রতারক। জমি দখল, মানুষের জমিতে থাকা গাছ জোর করে কাটা, প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয়া তার ব্যবসা। এনায়েতুল হকের বাগানের গাছ কাটা বিষয়ে মামলা হলে দুজনকে আটক করা হয়। তারপর থেকেই অন্য আসামীরা পলাতক ছিল। এখন তো তাদের কোনো খোঁজই মিলছে না।
সোনালী বার্তা/এমএইচ