বাকি খেয়ে ক্যান্টিন-ডাইনিং সাবাড় ছাত্রলীগের
বছরের পর বছর ধরে রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের পদধারী নেতারা ক্যান্টিন ও ডাইনিংয়ে ‘বাকি ও ফাও’ খাওয়ার ফলে বিপাকে পড়েছেন ক্যান্টিন ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে কলেজ প্রশাসনের কাছে বারবার অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল পাননি ভুক্তভোগীরা। গত ৫ আগষ্টের পর বাকি ও ফাও খাওয়া নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দেওয়ায়, প্রায় দুই লাখ টাকা বকেয়া আদায়ও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় রাজশাহী কলেজেও বহুমুখী আধিপত্য কায়েম করেছিল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর রাজশাহী কলেজ ছাত্রাবাসের ছাত্রলীগের দখলে থাকা কক্ষগুলো থেকে উদ্ধার হয়েছে বিপুল দেশীয় অস্ত্র, মদ, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ যৌন উপকরণ।
তবে এখন অভিযোগ আসছে, ছাত্রাবাসগুলোর ক্যান্টিন ও ডাইনিং ব্যবসায়ীদের টাকা বকেয়া রেখে পালিয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। দলের প্রভাব দেখিয়ে ক্যান্টিন ও ডাইনিংগুলোতে বকেয়া ও ফাও খেতেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। টাকা চাইলে ছাত্রাবাস থেকে ক্যান্টিন উচ্ছেদের হুমকি দেওয়া হত।
কলেজ ক্যান্টিন ও ছাত্রাবাসের ডাইনিং পরিচালনাকারীরা অভিযোগে বলেছেন, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতাদের নামে প্রায় দুই লাখ টাকা পরিমাণ বকেয়া জমেছে। বিশেষ করে, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্তর নামে ৩ হাজার ৪৩০ টাকা, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জাফরের নামে ১৭ হাজার ৯৯৫ টাকা এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাঈমের নামে ১১ হাজার ১৭৪ টাকা বকেয়া রয়েছে ক্যান্টিনে। আরও ২৫ থেকে ৩০ জন নেতাকর্মীর নামে বকেয়া আছে বিভিন্ন অংকের টাকা।
রাজশাহী কলেজ ক্যান্টিন পরিচালনাকারী আবুল মাসুদসহ অন্যরা জানান, মুসলিম ছাত্রাবাসের ডাইনিংয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের বকেয়ার পরিমাণ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এখানে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পিয়াসের নামে ৬০ হাজার টাকা এবং মেহেদি হাসান ও রাফির নামে যথাক্রমে ১৫ হাজার ও ১০ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। ইমন, সিয়াম, সিজারসহ আরও অনেক নেতার নামে ২ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বাকি রয়েছে।
এদিকে রাজশাহী কলেজের বিভিন্ন ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরা অভিযোগে বলেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কক্ষ দখল করে রাখতেন বছরের পর বছর। কলেজ প্রশাসন কিংবা হোস্টেল সুপার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। ছাত্রবাসগুলোর বিভিন্ন কক্ষে বসে দিনে ও রাতে মদ্যপান ও গাঁজা সেবন, এমনকি ইয়াবা সেবন করতেন পলাতক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সরকার পতনের আগে একাধিকবার অভিযোগ দেওয়ার পর পুলিশ ছাত্রলীগ নেতাদের কক্ষগুলোতে অভিযান চালিয়ে মদ-গাঁজা ও ইয়াবা-ফেনসিডিল উদ্ধার করেছিল। তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কলেজ ছাত্রবাসের ক্যান্টিন ও ডাইনিংয়ে পলাতক ছাত্রলীগ নেতাদের বকেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ইব্রাহিম আলী জানান, এ বিষয়ে ক্যান্টিন ও ডাইনিং পরিচালনাকারীরা কোনো অভিযোগ দিয়েছিলেন কিনা- জানি না। তবে এখন শুনছি পলাতক ছাত্রলীগ নেতাদের বকেয়া আছে ক্যান্টিনে। যারা বকেয়া খেয়েছেন তারা এখন কলেজে আসে না। ফলে এর তাৎক্ষণিক সমাধান আমাদের হাতে নেই।
সোনালী বার্তা/এমএইচ