শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫০ পূর্বাহ্ন

বেড়েছে পানিবাহিত রোগ, জায়গা হচ্ছে না হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৪৫ Time View
Update : রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব। ডায়রিয়া, চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, জ্বর ও আমাশয়সহ বিভিন্ন পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দিয়েছে শিশু ও বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের মাঝে।

সামর্থ্যবানরা ছুটছেন জেলা শহরে। সেখানে রোগীর ঠাসাঠাসি, সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্স। একটি স্যালাইন পুশ করার জন্য রোগীকে আধা ঘণ্টার বেশি লাইনে থাকতে হচ্ছে। শয্যার অভাবে অনেকে রাস্তা ও গাছতলায় ঠাঁই নিয়েছেন। সেখানে ডালে ঝুলিয়ে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।

অসুস্থদের বেশিরভাগ আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া, জ্বর, আমাশয়, এলার্জি ও নিউমোনিয়ায়। রয়েছে সাপেকাটা রোগীও। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রতিদিন মানুষ আসছেন জেলা সদরের ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে। এখানে লাফিয়ে লাফিয়ে রোগী বাড়লেও, বন্যায় ওষুধপত্র ও যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেবা মিলছে না।

সচ্ছলরা জেলা সদরের বেসরকারি হাসপাতালে যাচ্ছেন। তবে নিম্ন ও হতদরিদ্র বানভাসিদের শেষ ভরসা ফেনী জেনারেল হাসপাতাল।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের হাসপাতালে একটি শয্যার বিপরীতে ১৮ জনের বেশি ভর্তি হয়েছেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় বেগ পেতে হচ্ছে।

হাসপাতালের আরএমও ডা. আসিফ ইকবাল জানান, প্রতিদিনই বাড়ছে রোগী। বর্তমানে আট শতাধিক চিকিৎসাধীন। চিকিৎসক, নার্সসহ স্টাফ সংকট রয়েছে। মজুদ ওষুধ পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি অকেজো। পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

তিন মাস বয়সী তাসফিয়ার জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট। পরশুরাম থেকে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন রাহেলা বেগম। কয়েক ঘণ্টা লাইনে থেকে চিকিৎসক দেখান। ভর্তির পরামর্শ দিয়ে চিকিৎসক ওষুধ লিখলেও, তার কিছুই হাসপাতালে নেই। সামনে একটি গাছের নিচে মেয়েকে নিয়ে বসেছেন রাহেলা। বাইরে থেকে কিনে আনার পর গাছের ডালে স্যালাইনের প্যাকেট ঝুলিয়ে তাসফিয়ার শরীরে পুশ করা হয়েছে।

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এক বছরের শিশু ইব্রাহিমের বাবা মনসুর আলী বলেন, ছেলে আমার চোখ মেলছে না। পেটে কিছুই থাকছে না। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর এক নার্স দেখে স্যালাইন দিয়েছেন, জানি না আল্লাহ কপালে কী রেখেছেন?

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের দেওয়া তথ্য মতে, দিন-দিন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্ত:বিভাগ ও বহির্বিভাগে রেকর্ড পরিমাণ রোগী ভিড় করছে। এতে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স ও মেডিকেল এসিস্ট্যান্টরা।

বর্তমানে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ২০ সিটের বিপরীতে ভর্তি আছে ১৮৩ জন, এর মধ্যে শিশু রোগী ১২৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছে ২৫৬ জন জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ৩৬৭ জন। এ ছাড়া বন্যার কারণে শুক্রবার বন্ধের দিনেও চিকিৎসকরা বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন ৮০ জন রোগীকে। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালের বেডে ও মেঝেতে স্থান না পেয়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে সড়কের পাশে চিকিৎসা নিচ্ছে।

সোনালী বার্তা/এমএইচ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর