ভোলায় লাইসেন্সকৃত ৯৭টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্য জমা পড়েছে ৮৪টি
ভোলায় লাইসেন্সকৃত ৯৭টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্য জমা পড়েছে ৮৪টি। কেনা হয়নি মোট ১১টি আগ্নেয়াস্ত্র। এর মধ্যে চুরি হয়েছে ১টি এবং ১টির মালিক কারাগারে থাকায় জমা পড়েনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে ভোলায় বিভিন্ন ধরনের ৯৭টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। লাইসেন্স দেওয়া ৯৭টি অস্ত্রের মধ্যে ১১টি অস্ত্র কেনা হয়নি। বাকি ৮৬টি অস্ত্র কেনা হলেও তার মধ্যে দুটি অস্ত্র নির্ধারিত সময়ে থানায় জমা হয়নি। ওই দুটি অস্ত্রের মধ্যে একটি অস্ত্র ২০২২ সালে চুরি হয়ে গেছে। আরেকটি অস্ত্রের মালিক কারাগারে থাকায় সেই অস্ত্রটি ঢাকায় র্যাবের কাছে জব্দ রয়েছে বলে জানা গেছে।
৮৬টি অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে শটগান ৪৩টি, পিস্তল ২২টি, রাইফেল ৫টি, একনলা বন্দুক ৭টি, দুইনলা বন্দুক ৮টি ও রিভলবার ১টি। ভোলা জেলা প্রশাসন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে ১টি, ২০১০ সালে ৩টি, ২০১২ সালে একটি, ২০১৩ সালে ৮টি, ২০১৪ সালে ৯টি, ২০১৫ সালে ১৪টি, ২০১৬ সালে ১২টি, ২০১৭ সালে ৮টি, ২০১৮ সালে ৫টি, ২০১৯ সালে ৩টি, ২০২০ সালে ৬টি, ২০২১ সালে ২টি, ২০২২ সালে ৪টি, ২০২৩ সালে ১৬টি ও ২০২৪ সালে ৫টিসহ মোট ৯৭টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে ভোলা সদর থানায়। ২০১৫, ২০১৬ ও ২০২৩ সালের ওই সময়গুলোতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামীপন্থি ব্যবসায়ী ও ঠিকাদাররা এসব অস্ত্রের লাইসেন্স নেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ মে পর্যন্ত ভোলা জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি থেকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য দেওয়া সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। এসব অস্ত্র ও গুলি ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে থানায় জমা দিতে বলা হয়। ২৫ আগস্ট জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফুজ্জামানের দেওয়া গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেউ থানায় বৈধ অস্ত্র জমা না দিলে ওইসব অস্ত্র অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসনের গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ভোলা সদর থানার ৪৭টি অস্ত্রের লাইসেন্সের মধ্যে জমা পড়েছে ৪৬টি। একটি অস্ত্রের লাইসেন্স থাকলেও তা কেনা হয়নি। বোরহানউদ্দিন থানায় ৯টি অস্ত্রের লাইসেন্সের মধ্যে জমা পড়েছে ৬টি অস্ত্র। বাকি ৩টি অস্ত্র ঢাকার বিভিন্ন থানায় জমা রয়েছে। লালমোহনে ১২টির মধ্যে ৬টি অস্ত্র জমা দেওয়া হয়৷ বাকি ৬টি অস্ত্র ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় জমা রয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর হুসাইন বলেন, লাইসেন্সকৃত আগেয়াস্ত্র থানায় জমা দিতে সরকারি বেসরকারিভাবে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়েছে। ভোলার সবকটি অস্ত্রই থানায় জমা পড়েছে। ভোলার কোথাও অবৈধ অস্ত্র থেকে থাকলে তা উদ্ধারে যৌথ বাহিনী মাঠে কাজ করবে।
চুরি হওয়া অস্ত্র সম্পর্কে তিনি জানান, ২০২২ সালে চুরি হওয়া অস্ত্রটি তজুমদ্দিন উপজেলার ডাইয়ার পাড় গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে সেনা সদস্য আব্দুল রশীদের। ২০১৬ সালে তাকে একটি শটগানের লাইসেন্স দেওয়া হয়। ২০২২ সালের দিকে অস্ত্রটি চুরি হলে তিনি আইনের দ্বারস্থ হন। তবে কীভাবে তার অস্ত্রটি চুরি হয়েছে, তা জানা নেই। চুরি হওয়া অস্ত্রের ঘটনায় আব্দুল রশীদ মামলা করেছেন। সে মামলা চলমান আছে। এ ছাড়াও একটি শটগানের মালিক কারাগারে থাকায় তার অস্ত্রটি ঢাকায় র্যাবের কাছে জব্দ আছে।
ভোলা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফুজ্জামান দৈনিক সোলালী বার্তা কে বলেন, ভোলা থেকে লাইসেন্স দেওয়া সবকটি অস্ত্র জমা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় থানার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন থানায় অস্ত্র জমা দিয়ে সেই কাগজ সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ অন্যান্য বিষয়ে যৌথ বাহিনী মাঠে কাজ করছে।
সোনালী বার্তা/এমএইচ