রাজশাহী-রংপুরে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এ দুই বিভাগের ১৬টি জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)। প্রতিষ্ঠানটি জানাচ্ছে, সোমবার থেকে জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তারাও গ্রাহককে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ দিতে পারছেন না।
তারা এ-ও বলছেন, লোডশেডিং বাড়লে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে যায়। ফলে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে। রংপুরের জেলাগুলোতে প্রতি তিন ঘণ্টা পর এক থেকে দেড় ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। রাজশাহীর পরিস্থিতিও একই। জেলার কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। তাদের অবস্থা আরও খারাপ। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পিকআওয়ারে চাহিদার ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎও মিলছে না বলে সমিতি জানিয়েছে।
রাজশাহী নগরের শালবাগান আসাম কলোনির বাসিন্দা আনোয়ার আলী নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, তাঁর এলাকায় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় বিদ্যুৎ যায়। তারপর বিদ্যুৎ আসে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে। অনেক দিন পর একটানা সাড়ে ৫ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে থাকলেন বলে তিনি জানিয়েছেন। একই অবস্থা ছিল নগরের দড়িখড়বোনা-উপশহর এলাকাতেও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার নগরের বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুতের এমন লোডশেডিং হয়েছে। ভ্যাপসা গরমের মধ্যে এমন লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। রাজশাহী জেলার কয়েকটি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। তাদের লোডশেডিং নেসকোর চেয়ে আরও বেশি। এতে সেচ সংকটে পড়েছেন গ্রামের কৃষক।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রাজশাহী জেলার জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক রমেন্দ্র চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নিই না। আমাদের বিদ্যুৎ আসে রাজশাহীর কাটাখালী উপকেন্দ্র থেকে। সেখান থেকেও আমরা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পিকআওয়ারে বড়জোর ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। বাকি সময়ও লোডশেডিং করতে হচ্ছে।’ তিনি জানান, দিনে তাদের বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ৪৫ থেকে ৫০ মেগাওয়াট। আর রাতে পিকআওয়ারে চাহিদা থাকে ৬০ থেকে ৭০ মেগাওয়াট।
নেসকোর রংপুর জোনের প্রধান প্রকৌশলী (অপারেশন) আশরাফুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘গতকাল থেকে পরিস্থিতির খারাপ হয়ে গেছে। আমাদের ৮ জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। জাতীয় গ্রিড থেকে এখন আমরা পাচ্ছি প্রায় ৭০০ মেগাওয়াট। প্রতি ৩ ঘণ্টা পর পর সব এলাকায় এক থেকে দেড়ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়লে চাহিদা কমে না; বাড়ে। ফলে আমরা চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছি। পরিস্থিতির কবে উন্নতি হবে বলতে পারছি না। কেন এই অবস্থা সেটাও জানি না।
নেসকোর রাজশাহী জোনের প্রধান প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলাতেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। প্রতি ঘণ্টায় ১০৭ থেকে ১১০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে।’ তিনি জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াট। জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ পাওয়া যায় ১ হাজার ১৭০ মেগাওয়াট। বাকিটা লোডশেডিং করতে হয়েছে।
জাকির হোসেন বলেন, আমরা জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। উৎপাদন কম হচ্ছে বলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সম্ভবত আরেকটা পাওয়ার স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। তাই সমস্যা বেশি হচ্ছে। কবে সমস্যার সমাধান হবে সেটা আমরা বলতে পারি না।
সোনালী বার্তা/এমএইচ