সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:১০ পূর্বাহ্ন

সংস্কারের আগে নির্বাচন চান না ৮১% মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৫৬ Time View
Update : সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

রাষ্ট্র সংস্কার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ চান দেশের ৮১ ভাগ মানুষ। অন্যদিকে ১৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন অতিদ্রুত নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া উচিত। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) একটি জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

‘পালস সার্ভে ২০২৪: জনগণের মতামত অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক জরিপটি গত ২২ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর করা হয়েছে। গতকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে বিআইজিডির উদ্যোগে ‘অভ্যুত্থানের চল্লিশ দিন: মানুষ কী ভাবছে? শীর্ষক সভায় ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মির্জা এম হাসান জরিপের তথ্যগুলো তুলে ধরেন।

জরিপের ফলাফল তুলে ধরার পর প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফা ও উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক আসিফ মোহাম্মদ শাহান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য মামুন আব্দুল্লাহিল ও ভূঁইয়া আসাদুজ্জামান, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমীন, বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন।

জরিপে উঠে আসে, ৩৮ শতাংশ মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিন বছর বা তার বেশি সময় থাকা উচিত; ৯ শতাংশ দুই বছর; ৩৫ শতাংশ মানুষ এক বছর বা তার সময় থাকা উচিত বলে মনে করেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৭১ ভাগ মানুষ মনে করেন রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ সঠিক দিকে যাচ্ছে; অর্থনীতি সঠিক দিকে যাচ্ছে মনে করেন ৬০ ভাগ মানুষ।

দেশের ৪০ ভাগ মানুষ দেশের প্রধান সমস্যা অর্থনৈতিককে (মুদ্রাস্ফীতি/ব্যবসায়িক অস্থিতিশীলতা), ১৫ শতাংশ বন্যাকে, ১৩ শতাংশ রাজনৈতিক অস্থিরতা আর ৭ শতাংশ আইনশৃঙ্খলা (ল অ্যান্ড অর্ডার) অবনতিকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

জরিপের ফল অনুযায়ী দেশের ৭২ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ মনে করেন সাধারণ সময়ের তুলনায় আগস্ট মাসে অপরাধ বাড়েনি, ২৫ শতাংশ মনে করেন সাধারণ সময়ের তুলনায় অপরাধ বেড়েছে; আগস্ট মাসে সাধারণ সময়ের তুলনায় সহিংসতা বাড়েনি মনে করেন ৭৫ শতাংশ মানুষ, বিপরীতে ২৩ শতাংশ সহিংসতা বেড়েছে মনে করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে ৮৪ শতাংশ মানুষ মতামত দিয়েছেন; বিপক্ষে মত দিয়েছেন ৯ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করাকে সমর্থন করেন ৮১ ভাগ মানুষ; সমর্থন করেন না ১৪ শতাংশ মানুষ।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এর আগেও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে সেটি রাজনৈতিক দলগুলো অনুসরণ করেনি। ফলে আমরা সংস্কার করছি; কিন্তু এটি ফল না দিলে লাভ নেই। তাই কমিশন গঠন হলে আমরা অনেকের মতামত নেব। এর মাধ্যমে সংস্কার সুপারিশকে আমরা প্রতিনিধিত্বমূলক করতে চেষ্টা করব।

বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে সেটি ১/১১ এর পরে বাস্তবায়ন হলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। কাজেই সংস্কার বললেই হবে না, সেটি আলোর মুখ দেখতে হবে। আমরা পরিবর্তন চাচ্ছি, তবে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হচ্ছে কিনা সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কারের পাশাপাশি যারা অন্যায় করেছে, নির্বাচনী অপরাধ করেছে, তাদের বিচার হতে হবে। অন্যায় করে পার পেয়ে গেলে হবে না।

সামিনা লুৎফা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে বৈষম্য দূরীকরণ করে ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ করার কথা বলা হচ্ছে। তবে কোথায় বৈষম্যহীন বা ইনক্লুসিভের মধ্যে কারা আছেন—সেই জায়গাটি পরিষ্কার নয় জন-মানুষের কাছে। ইনক্লুসিভ বলতে কাকে বুঝব? এ থেকে মাজার কী বাদ? তিনি বলেন, শেখ হাসিনা চলে গেছে, বাকিরা তো আছে। তাদের ব্যাপারে কী ভাবনা সেটাও বলতে হবে।

মামুন আবদুল্লাহিল বলেন, জরিপ অনুযায়ী সরকারের প্রতি এখনো জনমানুষ আস্থাশীল। মানুষের আশা এবং হতাশা যে কোনো সময় আসতে পারে। কমিটমেন্ট যথাযোগ্যভাবে অ্যাড্রেস করতে না পারলে আস্থা আর থাকবে না।

আওয়ামী লীগের পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না এমন প্রশ্নে আসাদুজ্জামান বলেন, গণহত্যার যে ঘটনাটি ঘটেছে ফেয়ার ট্রায়ালের মাধ্যমে তার বিচার হতে হবে। তারপর তাদের সঙ্গে সংলাপ। আগে তাদের বিচার বা ক্ষমার বিষয়, পরে অন্য কিছু। তবে যে কোনো ধরনের ট্রায়াল আমরা চাই না। এটি ফেয়ার হতে হবে। ট্রাইব্যুনাল প্রশ্নবিদ্ধ হলে সংলাপ অনিশ্চিত হয়ে যাবে।

জরিপে ফোনে দেশের ৬৪ জেলার ৪ হাজার ৭৭৩ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২ হাজার ৩৬৩ জনের জরিপ করা হয়েছে, যা মোট নমুনার ৪৯ শতাংশ। এর মধ্যে নারী পুরুষের অনুপাত ৪৩:৫৭। উত্তরদাতাদের ৬৭ শতাংশ গ্রামের এবং ৩৩ শতাংশ শহরের বাসিন্দা। বিআইজিডির পূর্বের চারটি ভিন্ন গবেষণা থেকে নমুনা নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো—এশিয়া ফাউন্ডেশন ও বিআইজিডি সার্ভে ২০২৪, ইয়ুথ সার্ভে ২০২১, মাদ্রাসা সার্ভে ২০২০ এবং ছাত্র পোল ২০২৪। এতে সমাজের নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তের নানা পেশার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সোনালী বার্তা/এমএইচ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর