নিউইয়র্কে হবে না ড. ইউনূস-মোদির বৈঠক
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মাঝে কোনও বৈঠক হবে না।
যদিও উভয় নেতাই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন কয়েকজন ব্যক্তি ও সূত্রের বরাত দিয়ে গতকাল বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে দেখা করবেন না। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ব্যক্তিরা বুধবার এই তথ্য জানিয়েছেন।
হিন্দুস্তান টাইমসের দাবি, এই মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা হয়েছিল। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ব্যক্তিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে তা দূর করতে সাহায্য করবে এই আশায় ঢাকা এই বৈঠকের বিষয়ে আগ্রহী।
ভারতীয় এক কর্মকর্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির নিউইয়র্কে সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে কিছু দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. ইউনূসের সাথে কোনও বৈঠক তার শিডিউলে নেই।
সংবাদমাধ্যমটির দাবি, সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্য এবং ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের প্রায় প্রতিদিনের মন্তব্যে ভারতের সমালোচনা নয়াদিল্লির ভালো লাগেনি।
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস ভারতে নির্বাসনে থাকাকালীন বাংলাদেশের বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইতে পারে। তিনি আরও বলেছিলেন, হাসিনার দল আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য সকল রাজনৈতিক দলই “ইসলামপন্থি”, এমন বয়ানের বাইরে যাওয়া উচিত ভারতের।
অবশ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আপাতত বৈঠক করতে চাচ্ছেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাদের মতে, এখন যদি ড. ইউনূসের সঙ্গে মোদিকে সরাসরি বৈঠক করতে হয় তাহলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাপারেও আলোচনা করতে হবে। আর মোদি এখন হাসিনাকে নিয়ে কথা বলতে চাইছেন না। কারণ আলোচনা হলে সেখানে অবশ্যই হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়টি উঠবে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ে কথা বললে ভারতকে এমন কিছু বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে। যেটি তারা এখন আলোচনায় রাখতে চাইবে না।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।
এছাড়া সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল জানায়, শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সোনালী বার্তা/এমএইচ