শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন

যুগ যুগ ধরে একই আঙিনায় চলছে নামাজ ও পূজা

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১০৬ Time View
Update : শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৪

৫৪ বছর ধরে এক আঙিনায় রয়েছে মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ ও মন্দির। পাশাপাশি চলছে নামাজ ও পূজা। হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এটি। টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলা সদরের চৌধুরী বাড়ির আঙিনায় এভাবেই দেখা মেলে অসাম্প্রদায়িক বন্ধনের।

জানা যায়, এই চৌধুরী বাড়িতে ৯২ বছর আগে বাংলা ১৩৩৯ সালে ওঝা ঠাকুর ও হরনাথ স্মৃতি কেন্দ্রীয় দুর্গা মন্দির প্রতিষ্ঠা করে শ্রী পরেশ চন্দ্র ও শৈলেশ চন্দ্র দাসয়ো। তারপর থেকে প্রতিবছরই ধুমধাম করে দুর্গাপূজা উদযাপন করেন এলাকার সনাতন ধর্মের লোকজন।

প্রতিবছরের মতো এবারো চৌধুরী বাড়িতে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পাশে মসজিদে আজান ও নামাজের সময় বন্ধ থাকছে ঢাক-ঢোলের বাজনা। দুই ধর্মের লোকজনই নিজ-নিজ ধর্মীয় আচার ও নিয়ম পালন করে আসছে। এতে কারো কোনো অসুবিধা নেই।

মন্দির প্রতিষ্ঠার প্রায় ৪০ বছর পর একই আঙিনায় নির্মাণ করা হয় নাগরপুর চৌধুরী বাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। একই স্থানে মসজিদ আর মন্দির নিয়ে কখনো কোনো দ্বন্দ্ব বা সাম্প্রদায়িক হানাহানি হয়নি। হিন্দু-মুসলিমরা যার যার ধর্ম পালন করে আসছেন।

মন্দিরে চলছে পূজা-অর্চনা, উলুধ্বনি ও ঢাকের বাজনা। পূজারি ও দর্শনার্থীরা প্রতিমা দেখতে এবং পূজায় অংশ নিতে আসছেন। নির্ধারিত সময়ে আজান শুরু হওয়ার আগেই ঢাকঢোল, মাইক ও বক্সের বাজনা বন্ধ করে দেওয়া হয়। মসজিদ থেকে ভেসে আসে আজানের সুর। এরপর মুসুল্লিরা আসতে শুরু করেন মসজিদে। নামাজ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার বেজে ওঠে মন্দিরের ঢাকঢোলের বাজনা।

স্থানীয় অনিল বলেন, আমরা ৫২ বছর ধেরে এখানে পূজা করছি। পাশাপাশি মসজিদ ও মন্দির। এতে আমাদের কোনো সমস্যা হয় না। মুসলিম ধর্মের মানুষ আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে। আমরাও নামাজ ও আজানের সময় পূজা বন্ধ রাখি। যুগ যুগ এই সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। হিন্দু-মুসলিম আমরা ভাই ভাই, একসঙ্গে মিলেমিশে থাকি। কোনোদিন দুই ধর্মের মানুষদের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি, ভবিষ্যতেও আশা করি ঘটবে না।

স্থানীয় বাসিন্দা ও মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান সোহেল বলেন, আমি মসজিদ ও মন্দির জন্মের পর থেকেই দেখছি। সনাতন ধর্মের লোকজন এখানে পূজা করেন। এখানে কোনো ভেদাভেদ নেই। আমরা তাদের সহযোগিতা করি। আমরা সবসময় লক্ষ্য রাখি যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়।

চৌধুরী বাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা আব্দুল লতিফ মিয়া বলেন, আমি ৩৭ বছর ধরে এই মসজিদের ইমামতি করে আসছি। আমাদের মধ্যে কোনো ঝগড়াঝাটি নেই। আজান-নামাজের সময়সূচি তাদের কাছে দেওয়া আছে। নামাজ ও আজানের সময় বাজনা বন্ধ রাখে। আমাদের নামাজে যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখে। আমরাও তাদের সার্বিক সহযোগিতা করি। নামাজ শেষে তারা আবার তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করে।

নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দীপ ভৌমিক জানান, বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এর একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত চৌধুরী বাড়ি। একই আঙিনায় মসজিদ ও মন্দির। তারা নামাজের সময় নামাজ আদায় করছে, পূজার সময় পূজা উদযাপন করছে। বিগত বছরের মতো এবছরও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপিত হচ্ছে।

সোনালী বার্তা/এমএইচ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর