শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০৬:০৭ অপরাহ্ন

গাজীপুরের আতঙ্কে নেতাকর্মীরা, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে বেপরোয়া সাইজুদ্দিন

গাজীপুর প্রতিনিধি / ২৫৯ Time View
Update : সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় এখন মূর্তিমান আতঙ্কের নাম সাইজুদ্দিন আহমেদ। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএনপির নাম ভাঙিয়ে দোকান-মার্কেট দখল, ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন করে আলোচনায় আসেন বিএনপির এই নেতা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় লিয়াজোঁ করে গড়ে তোলেন অপরাধ সাম্রাজ্য। গড়ে তোলেন নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীও। ক্ষমতা পরিবর্তনের পর এখন অনেকটাই বেপরোয়া তিনি। সাইজুদ্দিন ও তার লোকজনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বেশ কয়েকটি পরিবার।

জানা গেছে, ২০০৪ সালের ১৩ মার্চ গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক সাইদুর রহমান স্বপন বকশীকে প্রকাশ্যে হত্যা করে আলোচনায় আসেন সাইজুদ্দিন আহমেদ। দীর্ঘদিন কারাভোগ করে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে চলতে থাকেন তিনি। ২০২২ সালে বাগিয়ে নেন কালিয়াকৈর পৌর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদকের পদ। একদিকে বিএনপির পদ, অন্যদিকে

আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে গড়ে তোলেন অপরাধ সাম্রাজ্য, নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের দুঃশাসন ও নির্যাতনে বিএনপি নেতারা যখন ঘরবাড়ি ছাড়া, তখন সাইজুদ্দিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য করে চালাতে থাকেন ঝুট ব্যবসা, গুদাম দখলসহ নানা অপকর্ম। গত ৫ আগষ্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সাইজুদ্দিন আহমেদ।

৬ আগষ্ট চান্দরা সাহেবপাড়া এলাকার জহিরুল হক জনির বাড়িতে হামলা করে ব্যাপক ভাঙচুর করে ঘর থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন জনি। এ সেই থেকে দুই মাসের বেশি সময় বাড়িছাড়া জনি ও তার বৃদ্ধ মা। প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কালিয়াকৈর থানা এবং গাজীপুর সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা। এ বিষয়ে জনির মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বাড়ি ও জায়গা আমাগো। সাইজুদ্দিন জোর করে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ভাঙচুর করে টাকা-পয়সা সব নিয়ে গেছে। আমরা পরিবার নিয়ে ঘরছাড়া। এখন আমরা প্রশাসনের কাছে বিচার চাই।

উপজেলার সফিপুর বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের। প্রায় ৪০ বছর ধরে সফিপুর বাজারে সরকারি দোকান ইজারা নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন। ৫ আগস্টের পর তার দীর্ঘদিনের সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি দখল করে নেন সাইজুদ্দিন। এই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে একই বাজারের আরও চার ব্যবসায়ীর দোকান দখল করে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তার অনুসারী, কর্মীরা পূর্ব চান্দারা, বোর্ডমিল মিল ও পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায়

বনের জমি দখল করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব এলাকার বাজারগুলো থেকে তারা চাঁদা তুলছেন। পূর্ব চান্দরার বোর্ডমিল এলাকায় ক্লাবঘর নির্মাণের নামে বনের জমি দখল ও বাসাবাড়ি নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে সাইজুদ্দিনের ভাগিনা

তরিকুল ইসলাম বলেন, অনেকেই শতবিঘা বনের জমি দখল করেছেন, মামা তো সামান্যই করেছেন। এখানেই থেমে থাকেননি সাইজুদ্দিন। আনসার একাডেমির ৩ নম্বর গেটের বিপরীতে ৩২ শতাংশ জমিতে থাকা খালেক সুপার মার্কেট দখল করে দোকানদারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সেখানে নিজের নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন সাইজুদ্দিন। যার বাজারমূল্য ৪ কোটি টাকা। বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা জানান, বিএনপির পদে থেকে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করছেন সাইজুদ্দিন। তিনি ও তার অনুসারীদের কারণে ত্যাগী নেতাকর্মীরা হতাশ। এমন কর্মকাণ্ডের কারণে জনপ্রিয় দলটির ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল আলম বলেন, দলের পদে থেকে অপকর্ম করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে তারেক রহমানের পরিষ্কার বার্তা-কেউ অপকর্ম করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাইজুদ্দিনের বিষয়টি আমার কানে এসেছে দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সাইজুদ্দিন আহমেদের বাসায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘কোর্টে গিয়ে খোঁজ নেন, স্পটে গিয়ে দেখেন।’ পরে তিনি স্থানীয় এক সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে বলে লাইন কেটে দেন।

সোনালী বার্তা/এমএইচ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর