শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন

বিএনপির ‘প্রেসক্রিপশনে’ ইসিতে বদলি-পদায়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক / ২৪৫ Time View
Update : রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪

দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব সংস্থায় ব্যাপক রদবদল করে। নির্বাচন কমিশনেও আসে রদবদল। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পুরো কমিশন পদত্যাগ করেন। এরপর ইসির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পরিবর্তন আনা হয়। অভিযোগ উঠেছে, এই রদবদলে ইসির এক কর্মকর্তা প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন। তার মতামতের বাইরে গিয়ে কোনো পদায়ন বা বদলি করা যাচ্ছে না। ফলে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বহু ইসি কর্মকর্তা।

অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন। তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তারকে দিয়ে পদোন্নতির জন্য ইসি সচিব শফিউল আজিমকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিধিবহির্ভূত হওয়ায় সচিব তা প্রত্যাখ্যান করেন বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসি কর্মকর্তারা বলেন, বিএনপির প্রেসক্রিপশনেই এখন বদলি ও পদায়ন হচ্ছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের মাধ্যমে ইসি সচিব শফিউল আজিমকে ফোন দিয়ে এসব করানো হচ্ছে। চাপে পড়ে বিএনপি সিন্ডিকেটের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য হচ্ছেন সচিব।

তারা আরও অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশনের দীর্ঘদিনের সিস্টেমকে নষ্ট করে ফেলছে এই গ্রুপ। তারা তদবির করে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো বাগিয়ে নিচ্ছে। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা ভালো ভালো পদ পাচ্ছে। যা অতীতে কখনোই ছিল না। বর্তমানে নিয়ম অনুযায়ী কোনো পদায়ন বা বদলির আদেশ হচ্ছে না। এর ফলে আগে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তা ও তালিকায় আগে থাকা কর্মকর্তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর নির্বাচন কমিশনে যেভাবে জ্যেষ্ঠতা না মেনে বদলি-পদায়ন হয়েছে, অতীতে এভাবে কখনো হয়নি। এগুলো খারাপ দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এ নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপ-সচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন। সরকার পরিবর্তনের পর তিনিই সচিবকে বলেছেন, বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তারের রেফারেন্সে সচিবকে চাপ প্রয়োগ করেন তিনি। আব্দুস সাত্তার নিজেও সচিবকে ফোন দিয়ে মনির হোসেনের পক্ষে নির্দেশনা দেন।

এ বিষয়ে এ বি এম আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ এবং অপপ্রচার। আমার হস্তক্ষেপের প্রশ্নই আসে না। আমি অলরেডি সচিবকে বলেছি, চাইলে আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমি সচিবকে বলেছি, তার (মনির হোসেন) কোনো সুপারিশ যেন আর বিবেচনায় না নেওয়া হয়। আমাদের কথা বললে আর আমলে নেবেন না বরং আমাকে জানাবেন।’

আব্দুস সাত্তার বলেন, অবৈধ নির্বাচনের সময় যারা আওয়ামী দোসরদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে এবং যারা আওয়ামী লীগের সময় সুবিধা পেয়েছে তাদের সুবিধা পাওয়ার এখন নৈতিক অধিকার নেই। আমাদের দাবি যারা আওয়ামী লীগের সময় অপরাধ এবং অন্যায় করেছে, তাদের শাস্তি পেতে হবে। সেটা যেকোনো ধরনের শাস্তি হতে পারে। এটাই আমাদের নীতি।

বেগম জিয়ার একান্ত সচিব বলেন, আমাদের একটা দাবি ছিল এবং আছে। জনপ্রশাসনসহ অন্যান্য দপ্তরগুলোর শীর্ষ পদে যারা আছেন, যারা বিগত নির্বাচনে দোসর ছিলেন, তাদের আমরা দেখতে চাই না। শীর্ষ পদে দেখতে চাই না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একাধিক জেলা নির্বাচন অফিসার, উপ-সচিব ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, মনির হোসেন ছিলেন রাঙ্গামাটির সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে এ বি এম আব্দুস সাত্তারের মাধ্যমে তদবির করে বদলি হয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে নির্বাচন পরিচালনা-২ শাখার উপসচিবের পদ দখল করেন তিনি। এরপর বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়কও হন নিজের ইচ্ছায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানান, সচিবালয়ে বদলি হয়েই মোহাম্মদ মনির হোসেন গোপনে ২৪ জন অফিসারকে টপকে জোর করে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতির ফাইল তোলেন। কিন্তু ইসি সচিবের কাছে গিয়ে তা আটকে যায়। কারণ, ইসি কর্মকর্তাদের উপ-সচিব হওয়ার পর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা হতে হয়। তারপরই কেবল যুগ্ম-সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেতে পারেন। কিন্তু তিনি উপ-সচিব থেকে সরাসরি যুগ্ম-সচিব হতে চেয়েছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী, পদোন্নতি না চাওয়ায় সচিব তার ফাইল ফেরত পাঠিয়ে দেন।

এছাড়া সুপারনিউমারারি পদে ষষ্ঠ গ্রেডে জেলা ও অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ৩১ জন, পঞ্চম গ্রেডে সিনিয়র জেলা ও পরিচালক সমমান পদে ২৮ জন এবং চতুর্থ গ্রেডে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির ফাইল আউয়াল কমিশন অনুমোদন করে গেলেও তা আটকে দেন উপ-সচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন। ওই ফাইলে জুনিয়র আরও ৩০০ অফিসার যুক্ত করে পদোন্নতির জন্য জনপ্রশাসনের কাছে পাঠান। যা আজও জনপ্রশাসনে পড়ে আছে।

উপ-সচিব মনির হোসেনের প্রভাব বিস্তার প্রসঙ্গে ইসি সচিব শফিউল আজিম বলেন, ‘৫ আগস্টের পর একরকম পরিস্থিতি ছিল। আমি খুব কনফিডেন্টলি বলতে পারি, এগুলো যে বা যারা করতে চেয়েছিল এবং যাদের তিনি (মনির হোসেন) ইউজ (ব্যবহার) করতে চেয়েছিলেন বিষয়টি তাদেরও নজরে এসেছে। ওনাদের নলেজে গেছে। কিছু কিছু বিষয়ে তাদের সহকর্মীরাই মনে হয় তার (মনির হোসেন) উপর বিরক্ত। এখন আর সেই দিন নেই। সে সময় তো (৫ আগস্টের পর) সব জায়গায় অন্যরকম পরিস্থিতি ছিল। ওদের (মনির হোসেন) সহকর্মীদের মধ্যে অ্যাসোসিয়েশনের বিষয়ে বিরোধ ছিল। একটা অ্যাসোসিয়েশন হলেও কিন্তু গণতান্ত্রিকভাবে হতে হয়। গায়ের জোরে বা আরকজনের শক্তিতে বেশিক্ষণ নেতাগিরি করতে পারবেন না। আমার মনে হয়, এটা ওর (মনির হোসেন) রিয়েলাইজেশনে আসবে।

সোনালী বার্তা/এমএইচ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর