বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৯ অপরাহ্ন

বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের নতুন সিদ্ধান্ত জানাল সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৭০ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৪

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ চারবার অংশ নিতে পারবেন। বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যানসিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থায় সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর আলোকে ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’-এর ধারা-৫৯-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা, ২০১৪’ পুনর্গঠনপূর্বক বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ চারবার অংশ নিতে পারবে। এতে আরও বলা হয়, এই বিধি সংযোজনের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে উপদেষ্টা পরিষদ নির্দেশনা প্রদান করেছে।

এর আগে ২৪ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সর্বোচ্চ তিনবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল- বিসিএস পরীক্ষায় একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ তিনবার অংশ নিতে পারবেন। ওই বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সভায় ‘সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নব নন ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এই অধ্যাদেশের আলোকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিসিএস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা, ২০১৪ পুনর্গঠন করে বিসিএস পরীক্ষায় একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ তিন বার অবতীর্ণ হতে পারবে-এমন বিধি সংযোজন করবে। উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) সব ক্যাডারের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারিত হবে। বিসিএসের আওতা বহির্ভূত সব সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রেও একই বয়স নির্ধারিত হবে। আর স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার ক্ষেত্রে নিজ নিজ নিয়োগ বিধিমালা প্রয়োজনীয় সংযোজন সাপেক্ষে এই বয়সের বিষয়টি প্রযোজ্য হবে। তবে, প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগগুলো এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষেত্রে স্ব স্ব নিয়োগ বিধিমালা বহাল থাকবে।

এর আগে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স বাড়ানোর সুপারিশ করে সাবেক সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন কমিটি। ছেলেদের ক্ষেত্রে ৩৫ বছর ও মেয়েদের ৩৭ বছর নির্ধারণের সুপারিশ করে কমিটি। এ সুপারিশের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিল সরকার।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ সেপ্টেম্বর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিল সরকার। এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে এ কমিটি তাদের সুপারিশ জমা দেয়। কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোখলেস উর রহমান। সদস্য হিসেবে ছিলেন সাবেক যুগ্ম সচিব কওছার জহুরা, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইকবাল ও অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব) সাইফুল ইসলাম।

চাকরিতে আবেদনের বয়স বাড়ানোর সুপারিশের যুক্তি হিসেবে প্রধান তিনটি কারণ উল্লেখ করেছে কমিটি। প্রথমত, করোনা মহামারিতে সরকারি চাকরির নিয়োগ বন্ধ ছিল। এই ক্ষতি পোষাতে গত সরকার বয়সে ছাড় দিলেও আটকে থাকা নিয়োগে তেমন গতি ছিল না। নতুন নিয়োগের উদ্যোগও ছিল কম। দ্বিতীয়ত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় গত সরকার দেশের অর্থনীতি নিয়ে সমস্যায় ছিল। ফলে চাকরির সুযোগ সীমিত হয়ে এসেছিল। তৃতীয়ত, গত সরকারের মামলা-হামলার কারণে অনেক ছাত্র সংগঠনের হাজারো শিক্ষার্থী ঠিক সময়ে শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেননি। ফলে তারা চাকরি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।

জানা গেছে, বয়স বাড়ানোর বিষয়ে তৃতীয় কারণটিই কমিটির কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। কারণ, এর রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। কমিটি সূত্র জানায়, রাজনৈতিক বিভিন্ন মহলের সুপারিশও ছিল চাকরির আবেদনের বয়স বাড়ানোর জন্য। বিগত দিনে বিরোধী দলগুলো ও তাদের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা সরকারি দল ও পুলিশের হামলা-মামলার কারণে নিজ বাড়িঘরেই থাকতে পারেননি। বয়স ৩০ পার হয়ে গেলেও অনেকে সরকারি চাকরিতে আবেদন করা সুযোগ হারান। রাজনৈতিক কারণে বঞ্চিত সেই সব প্রার্থীর অধিকারের বিষয়টিও সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে।

কমিটির সুপারিশ গণমাধ্যমে আসার পর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক তৈরি হয়। একটি পক্ষ এই সুপারিশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাদের বক্তব্য হলো, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ সেশনজটের কারণে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে বয়স ২৭-২৮ পেরিয়ে যায়। সুপারিশের বিরোধিতাকারীদের যুক্তি হলো, তারুণ্য পেরিয়ে মাঝবয়সে চাকরিতে এসে এই চাকরিজীবীরা দেশকে আর নতুন কিছু দিতে পারবেন না। তারা বলেন, একটি বিসিএস শেষ হতে আড়াই থেকে তিন বছর লাগে, তাহলে ৩৫ বা ৩৭ বছর বয়সে আবেদন করে আদতে তারা ৪০ বছরে এসে চাকরিতে যোগ দেবেন।

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছর। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য তা ৩২ বছর। জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনে (বিজেএস) ও ডাক্তারদের আবেদনের বয়সসীমা ৩২ বছর। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকতায় ঢোকার বয়স ৩৫ বছর। আগে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ২৭ বছর। ১৯৯১ সালে তা বাড়িয়ে ৩০ বছর নির্ধারণ করা হয়। সরকারি চাকরিজীবীরা বর্তমানে ৫৯ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরি করেন। এর পর অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (পিআরএল) যান। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য এ বয়স ৬৫। উচ্চ আদালতের বিচারকরা ৬৭ বছর পর্যন্ত কর্মরত থাকেন। আগে সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়স ছিল ৫৭ বছর পর্যন্ত। ২০১১ সালে বয়স দুই বছর বাড়িয়ে ৫৭ থেকে ৫৯ করা হয়।

সোনালী বার্তা/এমএইচ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর