কী আছে পৃথিবীর রহস্যময় গভীর গর্তে
প্রকৃতির রহস্য প্রতিনিয়ত মানুষকে ভাবায়। কৌতুহূলী মানুষ প্রকৃতির রহস্য ভেদ করে নিত্যনতুন কিছু জানতে কখনো ডুবেছে সাগরের তলদেশে। আবার কখনো পাড়ি জমিয়েছে মহাকাশে। পৃথিবীকে অবাক করে দিয়ে বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ পৌঁছে গেছে সাড়ে ৫ কোটি কিমি দূরে মঙ্গল গ্রহে। বিশ্ব এখন অনেকটাই বিজ্ঞাননির্ভর হয়ে গেছে। তবে পৃথিবীর এমন অনেক রহস্য আছে যা বিজ্ঞান ভেদ করতে পারেনি।
এসব রহস্যের মধ্যে অন্যতম, পৃথিবীর গভীরতম গর্ত। কী আছে এর ভেতরে? পৃথিবী কত গভীর হতে পারে এ নিয়ে জল্পনা কল্পনা হয়েছে বেশ। গবেষণা এবং তার খনন কাজ গড়িয়েছে বহুদূর। তারপরেও পৃথিবীর রহস্য ভেদ করে, যাওয়া সম্ভব হয়নি অপর প্রান্তে।
আমরা বসবাস করি পৃথিবীর উপরিভাগে। এই উপরিভাগে রয়েছে মাটি, পানি, উদ্ভিদ এবং প্রাণী। তবে পৃথিবীর মাটির নিচের একদম গভীরে কী আছে তা কারও পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি এখনও। বলা হয় পৃথিবীর নিচে রয়েছে একটি আলাদা জগৎ। তবে পৃথিবীর কেন্দ্রে ও কেন্দ্রসংলগ্ন অঞ্চলে কি আছে তা এখনও জানা যায়নি।
ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬ ফুট নিচে পর্যন্ত কবরের জন্য খনন করা হয়। এর থেকে আর ১৩ ফুট গর্ত খনন করলে পাওয়া যাবে মিসরের ৩ হাজার বছর পুরোনো রাজা টুটান খামুনের মমি। প্রাচীন যুগে রাজাদের ৬ ফুট নিচে দাফন দেওয়া হতো। এর থেকে ৬৫ ফুট নিচে খনন করে পাওয়া যাবে প্যারিস কাটাটাম্ভস। এই টানেল টি প্যারিসে অবস্থিত। এই টানেলে প্রায় ৬ মিলিয়ন মৃতদেহ দাফন করা হয়েছিল।
১৭০ ফুট গভীরে খনন করে নির্মাণ করা হয়েছিল সবচেয়ে গভীরতম সুইমিংপুল। এই সুইমিংপুলটি দুবাইয়ে অবস্থিত, যার নাম ডিপডাইভ। এই সুইমংপুলে প্রায় ১৫ কোটি লিটার পানি রয়েছে। আর ৩৪৬ ফুট গভীরে রয়েছে পৃথিবীর গভীরতম মেট্রোস্টেশন। যেটি রয়েছে ইউক্রেনের কিয়েভ শহরে।
৯৪০ ফুট নিচে রয়েছে রেলওয়ে টানেল। এই টানেলটি জাপানের সাইকান টানেল নামে পরিচিত। এর চেয়ে নিচে ১২৮৬ ফুট গভীরে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর পানির কুয়া। এই কুয়াটি ইংল্যান্ডের উডিংডিং হাসপাতালের বাইরে রয়েছে। যেটি ১৮৬২ সালে চার বছর ধরে খনন করে তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৮০ ফুট নিচে রয়েছে সবচেয়ে গভীরতম গুহা। যেটি স্লেভেনিয়ায় অবস্থিত।
ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩১৮০ ফুট নিচে রয়েছে মানুষের খনন করা সবচেয়ে গভীরতম গর্ত। যেখান থেকে আকাশ দেখা যায়। জায়গাটির নাম বিনগাম কোপারমাইন। এরও নিচে গিয়ে পৌঁছেছে মানুষ ৫৩৮৭ ফুট নিচে রয়েছে বাইকাল নামের এক হৃদের তলদেশ। যেটি রাশিয়ায় অবস্থিত।
১০৩০০ ফুট খনন করলে পাওয়া যাবে আফ্রিকার মুয়াবকটাশং মাইন। ১১ হাজার ৮১১ ফুট নিচে পাওয়া গেছে জীবন্ত বহুকোষি প্রাণী। ১৩ হাজার ১২০ ফুট গভীরে আফ্রিকাতে রয়েছে এক সোনার খনি। এই খনির নিচে তাপমাত্র প্রায় ৬৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত জানা যায়।
মারিয়ানা ট্রেঞ্চ পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর খাদ। অবস্থান প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে। এর গভীরতম স্থানটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার নিচে অবস্থিত। এর থেকেও গভীরে বিজ্ঞানীরা প্রায় ৪০ হাজার ২৩০ ফুট নিচে একটি গর্ত খোঁড়েন এবং এটিই পৃথিবীর সব থেকে দীর্ঘতম গর্ত। এর থেকে গভীর গর্ত মানুষের পক্ষে করা সম্ভব হয়নি। এই গর্তটির নাম কোলা সুপার ডিপ বোরহল। এটি রাশিয়াতে অবস্থিত। এই গর্তটি বানাতে প্রায় ছাব্বিশ বছর সময় লেগেছিল।
১২ কিলোমিটার খোঁড়ার পরে নিচের উষ্ণতা এতটাই বেড়ে যায় যে, এর পরেও যদি মাটি খোঁড়া হয় তবে মাটি খোঁড়ার সব যন্ত্র গলে যাবে এবং সেই জন্যই এই প্রোজেক্টটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই গর্তটিকে ডিপেস্ট আরটিফেসিয়াল পয়েন্ট অন আর্থ বলা হয়। অর্থাৎ এর নিচে কী আছে তা কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয়।
এমআর