অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে মাদকা শক্তিদের সেবা, রয়েছে নির্যাতনের অভিযোগ

মাদক পাচারের রুট বলে খ্যাত রাজশাহীতে মাদকের ছড়াছড়ি। ফলে ক্রমন্বয়ে মাদক সেবিদের সংখাও আশংকা জনক বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু তেমন কোন উন্নত মানের মাদক নিরাময় কেন্দ্র গড়ে উঠেনি রাজশাহীতে। হাতেগোনা কয়েকটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র থকলেও সেগুলোর প্রতি রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। অবিভাবকে ও রোগীদের নিকট পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, অধিকাংশ কেন্দ্রের রোগী রাখার পরিবেশ নেই বললেই চলে,এছাড়া নিম্নমানের খাবার, আলো-বাতাসহীন পরিবেশ,রোগীদের চিকিৎসার পরিবর্তে ঘুমের ঔষধ ব্যাবহার ও নির্যাতন করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহী রিহ্যাব থেকে বের হওয়া এক রিকভারি পেসেন্ট বলেন,সেন্টারটির পরিবেশ গোয়াল ঘরের মতো,আলোবাতাস ঢোকেনা,খাবার মানও খুব খারাপ। এছাড়া সুস্থ হওয়া রোগীদের সেন্টারে টানতে কৌশলে মাদক খাওয়ায় কতৃপক্ষ। তার অভিযোগে এসব ভয়ংকর তথ্য বেরিয়ে আসে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে,রাজশাহীতে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে সরকারীভাবে মাত্র একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র আছে।সেখান নিদৃস্ট কিছু মাদক সেবিদের চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। যা মাদকাসক্ত চিকিৎসার জন্য অতি নগন্য।
জানা গেছে,কিছু মাদক সেবি সুস্থ হয়ে নিজ উদ্যোগে রাজশাহী শহরে গড়ে তুলেছেন মাদক নিরাময় কেন্দ্র গুলো। নগরীরত ৯ টি মাদক নিরাময় কেন্দ্রের মধ্যে ১টি মাত্র সরকারী ভাবে পরিচালিত। বাকি ৮টি পরিচালিত হয় ব্যাক্তি মালিকানায়। বেসরকারি ভাবে পরিচালিত মাদক নিরাময় কেন্দ্র গুলো হলো, ১)নগরীর কোট স্টেশন সংলগ্ন টুলটুলি পাড়ায় “আপন ভূবন”,২)কাশিয়া ডাংগায় “আপস”,৩) কাজি হাটায় “বাঁচতে চায়”,৪)শিরোইলে “নতুন ভূবন”,৫)সপুরায় “সোনালী আলো”৬)ভদ্রা আবাসিক এলাকায় “ক্রীড়া”,৭) মেহেরচন্ডিতে “রাজশাহী রিহ্যাব”,৮) নওহাটায় “সূর্য্যদ্বয়”।
জানা গেছে এই মাদক নিরাময় গুলো নিয়ন্ত্রন করে থাকেন মাদকদ নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর। লাইসেন্স প্রদান,পরিবেশ, চিকিৎসা ও খাবার মান নিয়ন্ত্রন৷ ও দেখভালও করে থাকেন দপ্তরটি।তবুও এসব মাদক নিরাময় কেন্দ্রেগুলোর প্রতি আছে পাহাড় সমান অভিযোগ।
একাধিক অভিযোগের সূত্রধরে, সরেজমিনে গিয়ে অভিযোগ গুলের সত্যতা দেখাগেছে। মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত লাইসেন্সের নিয়োম কানুনের ধার ধারেনা তারা। এমন কয়েকটি নিরাময় কেন্দ্রের উপর সুনিদৃষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে।এর মধ্য রয়েছে,নগরির শিরোইল এলাকার “নতুন ভূবন”,মেহের চণ্ডীর “রাজশাহী রিহ্যাব” ও সপুরার “সোনালী আলোর”।
নতুন ভূবন:
নগরীর শিরোইল দোসর মন্ডল মোড়ে একটি ভাড়া বাসায় পরিচালিত হয় ” নতুন ভূবন ” নামের মাদক নিরাময় কেন্দ্রটি।জানা গেছে নিরাময় কেন্দ্রটি পরিবেশ গোয়াল ঘরের মতো,আলো বাতাস হীন স্যাঁতশেতে পরিবেশ। খাবার মান ও চিকিৎসা নিয়েও আছে অভিযোগ। এছাড়া লাইসেন্সের নির্ধারিত রোগীর সংখা ২০ জন থাকার কথা থাকলেও , সেখানে দ্বিগুন( ৪০)এর বেশী রোগী গদা গদি করে রাখা হয়। এছাড়া নিয়মবহির্ভূত ভাবে কেন্দ্রের বাইরে রাখা হয় রোগী।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয়, কেন্দ্রটির পরিচালক আলমগীর কাইসার রাসেলের সাথে।তিনি অভিযোগ গুলো অস্বীকার করে বলেন,প্রাপ্ত লাইসেন্সের সকল নিয়োম মেনেই তিনি সেন্টার চালিয়ে আসছেন।তবে রোগীর সংখার ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে কিছু তার তম্য হয়ে থাকে। সিটের তুলনায় হটাৎ করে বেসি রোগী রাখার কারন হিসেবে তিনি বলেন, অনিচ্ছা সত্বেও মাঝে মধ্যে রোগীর অবিভাবকদের কড়জোড় অনুরোধে অতিরিক্ত রোগী রাখতে বাধ্যহন।তবে তা সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে রাখেন। একই কারনে তিনি কেন্দ্র সংলগ্ন বাসায় কয়েকজন রোগী রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন,বিষয়টি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরকে অবহিত করেছেন।
রাজশাহী রিহ্যাব:
এই মাদক নিরাময় কেন্দ্রটি নগরটির উপকণ্ঠ মেহের চন্ডিতে অবস্থিত।কেন্দ্র টির বিষয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।সু্স্থহয়ে ফিরে যাওয়া রোগীকে কৌশলে মাদকাসক্ত করা,নিম্ন মানের খাবার,কাউন্সিলিং নাই চিকিৎসাও নই। নির্যাতনই রোগীদের চিকিৎসা।
অন্যদিকে গোয়াল ঘরের মতো কেন্দ্রটির ২০ জন্য রোগীর অনুমোদন থাকলে সেখানে রয়েছ ৩৫ জন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য কেন্দ্রটির পরিচালক রবিউল ইসলামের ০১৭৮৫৪৯১৯৯৫ মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।ফলে তার কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এছাড়া আপস,ক্রীয়,সূৃর্যদ্বয়,সোনালী আলোর কেন্দ্রের প্রতি রয়েছে একই অভিযোগ।
তবে, সরজমিনে প্রায় সবগুলো কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে ”আপন ভূবন”,”বাঁচতে চায়”,”সূর্য্যদ্বয়” মাদক নিরাময় কেন্দ্রের পরিবেশ,খাওয়ার মান, কাউন্সিলিক ও চিকিৎসা সেবার মান অনান্য কেন্দ্রের চেয়ে অনেকট ভালো।
আপন ভূবন কেন্দ্রের পরিচালক দিদারুল ইসলাম উজ্জ্বল বলেন,আমি একটা সময় নেশা করতাম। নেশায় আসক্তদের করুন সমস্যা গুলো অনুধাবন করে ব্যবসা নয়, সেবার লক্ষেই তিনি কেন্দ্রটি গড়ে তুলেছেন।তার কেন্দ্র থেকে যখন কেউ সুস্থ হয়ে ফিরে যাই, তখন আমি সবচেয়ে বেশি আনন্দ পায়।
তিনি বলেন রাজশাহীতে হাতের নাগালে মাদক পাওয়ায় প্রতি নিয়ত মাদকাসক্তির সংখ বৃদ্ধি পাচ্ছে।সে-তুলনায় রাজশাহীতে উন্নত মাদক নিরাময় কেন্দ্র গড়ে উঠনি।
তিনি আরো বলেন,পদ্মার চরে বহু সরকারি খাস জমি রয়েছে। সেখানে সরকার তাদের যায়গা বরাদ্দ দিলে খোলামেলা যায়গায় মানসম্মত মাদক নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তোলা যেতো। এবিষয়ে তিনি সরকারের ও সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
এছাড়া আপসের পরিচালক আবুল বাশারের সাথে ০১৭১১৫৭৮৩০২, বাঁচতে চায় এর পরিচালকের সাথে ০১৭১৭০১৪৪০৯ ও ক্রিয়ার পরিচালকের সাথে ০১৯১৩১৮৬২৬৭ নাম্বার মুঠোফোনে কথা হয়ে তাদের সেন্টারের বিষয়ে।
তারা সবাই বলেন,সেন্টারের ভাবমূর্তি ও সেবার মানের উপর সেন্টারে রোগীআসা নির্ভর করে।বন্ধু সূলভ আচরন ও নিয়মিত কাউন্সিলিংয়ে সুস্থ হয় মাদকাসক্তি রোগীরা বলে তারা জানান।
৭ জানুয়ারি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের উপপরিলক আলমগীর হুসাইনের নিকট ০১৭১৮৪৩৩০৪৮ নং মুঠোফোনে নগরীর মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলো সার্বিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন,রাজশাহীতে ব্যাক্তি মালিকানায় ৮ টি রিহ্যাব সেন্টার পরচালিত হচ্ছে।
রিহাব সেন্টার পরিচালনার পূর্ন অভিজ্ঞতা ও মানসম্মত পরিবেশ সরেজমিনে তদন্ত ও নিয়মকানুন মেনেই লাইসেন্স দেয়া হয়ে থাকে।এছাড়া রাজশাহীতে বেসরকারি ৮টি রিহ্যাব সেন্টারের সবগুলোই লাইসেন্স প্রাপ্ত।
তিনি বলেন,আমরা সেন্টার গুলো নিয়মিত পরিদর্শন,মাসিক প্রতিবেদনসহ মতবিনিময় করি।যাতে কেন্দ্র গুলোর রোগীরা ভালো পরিবেশে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত ও ভালো পরিবেশে থাকতে পরে।
কেন্দ্রের অনিয়ম বিষয়ে তিনি বলেন, আকস্মিক কেন্দ্র গুলো পরিদর্শনের সময় কোন কেন্দ্রে অনিয়োম পেলে তাৎক্ষণিক সতর্কতায় নোটিশ প্রদান করা হয়।
তবে সময়-সময় রোগী কমে বেশি হয়।তবে নির্ধারিত রোগীর চেয় দ্বীগুন ও সেন্টারের বাইরে রোগী থাকার বিষয়টি তাদের জানা নাই, তবে এটি কোন সেন্টার করে থাকলে সে সেন্টারে লাইসেন্স কালো তালিকা ভুক্ত করা হবে।
উপপরিচালক আরো বলেন,রাজশাহীতে ২৫ শয্যার একটি মাত্র সরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্র আছে ।এটিকে ২০০ পর্যায় উন্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে।
এমআর/