বিলুপ্তির পথে বাঁশ ও বেত শিল্প

আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের বাঁশ, বেত শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকেরা নিরুপায় হয়ে তাদের এ পেশা পাল্টাতে শুরু করেছেন অনেকেই। এ পেশায় নিয়োজিত শ্রমিকরা বর্তমান বাজারের প্লাষ্টিক ও প্লাষ্টিক জাতীয় সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারায় নির্বিকারে ধাবিত হচ্ছে। ফলে এ শিল্পের ঐতিহ্য হারানোর পাশাপাশি বিলুপ্তির পথে এগুচ্ছে কুটির শিল্প।
একসময় গ্রামীণ পল্লীতে বাঁশের তৈরী ঘরের সিলিং, কুলা, ডালা, চাটাই, টুকরি বা ঢাকি, চালুনি, মাছ ধরা পলই, খলই, ঝুঁড়ি, হাঁস ও মুরগীর খাঁচাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করতে দেখা যেতো। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের এ শিল্পে অবদান কম নয়। স্থানীয় বাজারে, এমনকি বাড়ী বাড়ী ফেরি করে এসব বাঁশ ও বেতের পণ্য বিক্রি করতে দেখা যেতো। কালের বিবর্তনে এ শিল্পের মূল উপকরণ বাঁশের মূল্য বৃদ্ধিতে বাঁশ ও বেতের কারিগররা তাদের এ শিল্প ধরে রাখতে নানান ভাবে ভোগান্তিতে পরছে। ফলে বেকার হয়ে পড়ছে গ্রামীণ কারিগররা।
আরও পড়ুন: মাদারীপুরে তারুণ্যের উৎসবে শিক্ষার্থীদের মন মাতানো পিঠা
৩০ জানুয়ারি জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্লাষ্টিক সামগ্রীর ব্যবহারে বাঁশ ও বেতের কুটির শিল্পের চাহিদা বা বাঁশের তৈরী পণ্যের ব্যবহার তেমন চোখে পরেনা। এ শিল্পের কাঁচামাল বাঁশ ও বেত এখন সহজ লভ্য নয়। বাজারগুলো প্লাষ্টিক ও এ্যালুম্যানিয়াম দখল করেছে। সে কারণে দীর্ঘদিনের বাপ দাদার এই ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে অন্য পেশার দিকে ঝুকে পড়তে দেখা যাচ্ছে।
বিভিন্ন প্রতিকুলতার মধ্য দিয়েও কুটিকয়েক পরিবার আজোও পৈত্রিক এই শিল্প পেশাটি আকড়ে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জেলার বরুনাগাঁও বাশিয়াদেবী গ্রামের সবিতা, জীবন, সেবা রাণী সহ আরোও অনেকেই বলেন, এটি বাপ দাদার পেশা, তাই আকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ পেশায় আমাদের সন্তানেরা কাজ করার আগ্রহ দেখায় না। এতে পরিশ্রম বেশি, মুনাফা সামান্য। বাঁশের তৈরী পণ্যের কদরও নেই বললেই চলে। বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূলের উর্দ্ধগতির কারণে স্বল্প আয়ের এ পেশায় টিকে থাকাটাই কঠিন। সরকারী অনুদান পেলে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে পারবে বলে দাবী তাদের।
আরও পড়ুন: নরসিংদীতে আ.লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ৩
বাজারে বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র বিক্রি করতে আসা কারিগর স্বাধিন জানান, তারা নিজেরাই দীর্ঘদিন ধরে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন পণ্য বিভিন্ন বাজারে বিক্রিয় করছেন। অতীতে বাজার যেভাবে চলছিল তা ভালোই চলছিল। বর্তমানে বাজারে বাঁশের তৈরি পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় এতে তেমন কোনো লাভ নেই। তাই জীবনধারণ করা অনেক কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র স্থানীয় পাইকারী ক্রেতা বিমল চন্দ্র রায় জানান, এক সময় প্রত্যেক বাড়ীতেই বাঁশের তৈরি আসবাবপত্রের ব্যপক ব্যবহার ছিল এবং চাহিদাও ছিল ব্যাপক। বর্তমান প্লাষ্টিকের তৈরী পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়ছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প।
এমআর/