তিন জিম্মির বিনিময়ে ১৮৩ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিলো ইসরায়েল

আরও তিনজন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস। বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী ১৮৩ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। মুক্তিপ্রাপ্ত ইসরায়েলিরা হলেন- এলি শারাবি, ওহাদ বেন আমি ও অর লেভি। শনিবার তাদের রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তারা ইসরায়েলে নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে একত্রিত হন।
তবে তাদের সুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যুক্তরাজ্যে থাকা শারাবির পরিবার তাকে অস্থিচর্মসার অবস্থায় দেখা কষ্টের বলে বর্ণনা করেছে।
অন্যদিকে, ফিরে আসা ফিলিস্তিনিদের নিয়ে পশ্চিম তীরের রামাল্লায় উৎসব চলছে। তাদের প্রতিনিধিরা বলছেন, তাদের সবার স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত বা সুনির্দিষ্ট আর কিছু বলা হয়নি।
গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ২১ জন ইসরায়েলি জিম্মি ও ৫৬৬ জন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: ট্রাম্প আসলেই কানাডা দখল করতে চান: ট্রুডো
যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ শেষ হওয়া পর্যন্ত ৩৩ জন জিম্মি ও ১ হাজার ৯০০ জন ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইসরায়েল অবশ্য জানিয়েছে, ৩৩ জিম্মির মধ্যে আটজন মারা গেছেন।
এদিন শারাবি, বেন আমি ও লেভিকে মধ্য গাজায় দেইর আল-বালাহ এলাকায় রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় সশস্ত্র যোদ্ধারা কয়েক সারিতে সমবেত জনতাকে ঘিরে রাখে। হামাস ও ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়ানো হয় সেখানে।
একজন হামাস কর্মকর্তা ও রেড ক্রস প্রতিনিধি কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে জিম্মি হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ করেন। এরপর জিম্মিদের মঞ্চে আনা হয়। এ সময় সশস্ত্র ব্যক্তিরা তাদের ঘিরে ছিল। তিন জিম্মি হাতে সার্টিফিকেট নিয়ে পোজ দেন এবং একটি মাইক্রোফোন নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এরপর রেড ক্রসের গাড়িতে ওঠার আগে হাত নাড়ান।
রোববার বিবিসি আরবি বিভাগকে হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাশেম বলেন, ইসরায়েলি জিম্মিদের ভদ্র আচরণের মাধ্যমেই মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
তবে শারাবির শ্যালক স্টিভ ব্রিসলি বিবিসিকে বলেন, তিনি জীবিত আছেন এটি নিশ্চিত হতেই তারা গত ১৬ মাস কাজ করছেন। তাকে এমন অস্থিচর্মসার অবস্থায় হামাসের প্যারেড করানোর দৃশ্য দেখাটা খুবই কঠিন ছিল।
নেতানিয়াহুর বন্দি ও নিখোঁজ ব্যক্তি বিষয়ক সমন্বয়ক বলেন, তারা এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছেন এবং এটি যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যস্থতাকারীদের কাছে উপস্থাপন করবেন।
দ্য হোস্টেজ ও মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম এক বিবৃতিতে বলেছে, যেসব অস্বস্তিকর ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে এটি নিশ্চিত যে, জিম্মিদের জন্য আর অপচয় করার মতো কোনো সময় নেই। তাদের সবাইকে বের করে নিয়ে আসতে হবে, একেবারে শেষ জিম্মি পর্যন্ত।
এদিকে, ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি) মুক্তি কার্যক্রম ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। তারা বলছে, আমরা মধ্যস্থতাকারীসহ সব পক্ষের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি যাতে সামনে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি মর্যাদাকর ও গোপনীয় হয়।
আরও পড়ুন: ট্রাম্প-মোদির বৈঠকে উঠতে পারে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
এদিন ইসরায়েল যে ১৮৩ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে, তার মধ্যে ৭০ জন যাবজ্জীবন কিংবা দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ডে দণ্ডিত ছিলেন। ১১১ জনকে গাজা যুদ্ধের সময় আটক করা হয়েছিল।
ফিলিস্তিন প্রিজনার্স ক্লাব এএফপিকে জানিয়েছে, মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে সাতজনকে রামাল্লার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে, মুক্তি পাওয়া সব বন্দিকেই স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা দিতে হবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আচমকা হামলা চালায় হামাস ও সহযোগী সংগঠনগুলো। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। জিম্মি করা হয় ২৫১ জনকে। এরপর থেকে গাজায় বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ শুরু করে ইসরায়েল। এতে এরই মধ্যে ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে উপত্যকার বেশিরভাগ ঘরবাড়ি।
শুক্রবার হামাস গাজায় মানবিক সহায়তা আনার বিষয়ে অঙ্গীকার রক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগ করেছে। গাজায় হামাসের মিডিয়া অফিসের প্রধান বলেন, ইসরায়েলি বাধার কারণে মানবিক পরিস্থিতিতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
এমআর/