ঠাকুরগাঁওয়ে ব্যাপক ভুট্টা চাষ, বীজের মূল্যবৃদ্ধিতে কৃষকেরা বিপাকে

ঠাকুরগাঁওয়ে ভুট্টা আবাদে বাংলাদেশে তৃতীয় অবস্থানে থাকায় জেলার কৃষকরা এ ফসল চাষে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এ জেলার ভুট্টা চাষে নির্ধারিত ল্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ভুট্টা চাষের ল্যমাত্রা ছিল ৪০ হাজার হেক্টর জমি, তবে আবাদ হয়েছে ৪৪৯৮০ হেক্টর জমি।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, সদর উপজেলায় ১৩৫৮০ হেক্টর, বালিয়াডাঙ্গীতে ৫৩১০ হেক্টর, পীরগঞ্জে ১০৩০০ হেক্টর, রানীশংকৈলে ৭৫০০ হেক্টর ও হরিপুরে ৮৫৬০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে অধিক ফলনে আশা কৃষকদের মধ্যে উৎসাহ ল্য করা যাচ্ছে। তবে, ভুট্টার বীজের মূল্যবৃদ্ধিতে কৃষকেরা বিপাকে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ৫০০-৭০০ টাকার বীজ এখন ১০০০ থেকে ১৩০০ টাকায় পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে কলোনিতে আগুন, নিহত ২
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বরুনাগাঁও গ্রামের কৃষক মফিজুল জানান, আগে আমরা সহজে বীজ কিনতাম। এখন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভুট্টা চাষে খরচ বেশি মুনাফা কম। রানীশংকৈল উপজেলার কৃষক সামসুল আলম জানান, বীজের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকারের প্রতি দাবী তাদের।
অনুসন্ধানে জানাযায়, দেশের চাহিদার প্রায় সবটাই ভারত, থাইল্যান্ডসহ বিদেশি বীজ আমদানি করে পূরণ করতে হয়। দেশীয় পর্যায়ে বীজ উৎপাদন সীমিত। যা হাতে গোনা কয়েকটি ফার্ম বীজ সরবরাহ করে থাকে।
বীজ সরবরাহের ঘাটতি, কৃষি নীতির দুর্বলতা এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য এই সংকটকে আরোও বাড়িয়ে তুলছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে, যা কৃষকদের জন্য বাড়তি চাপ। বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইডগজও) উদ্ভাবিত উন্নতজাতের বীজ ও প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে সঠিকভাবে পৌঁছায় না বলে কৃষকদের দাবী।
আরও পড়ুন: গাছ কমায় সোনারগাঁয়ে খেজুরের রস সংগ্রহে ভাটা
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোঃ আলমগীর কবির জানান, আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। তবে, স্থানীয়ভাবে বীজ উৎপাদন বৃদ্ধি কৃষকদের জন্য সহজলভ্য করার বিষয়ে আরোও উদ্যোগ প্রয়োজন।
কৃষিবিদদের মতে, ভুট্টার বীজ সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি রোধে দ্রুত কার্যকর পদপে নেওয়া প্রয়োজন। দেশীয়ভাবে বীজ উৎপাদনের সমতা বাড়ানো, মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারি ভর্তুকি প্রদানে কৃষকদের স্বস্তি বয়ে আনতে পারে। সরকারী ভাবে পদপে গ্রহণে কৃষকরা আরোও উৎপাদনশীল হবে এবং দেশের ভুট্টা উৎপাদনও বাড়বে। অন্যথায় কৃষকেরা ভুট্টা চাষে আগ্রহ হারাবে, যা সামগ্রিক কৃষি ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের দ্রুত পদপে গ্রহণ করা জরুরি। কৃষকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং ভুট্টা চাষকে টেকসই করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
এমআর/