সেতু নির্মাণে নদীতে ঠিকাদারের বাঁধ, পানির নিচে ২০ গ্রাম
সেতু নির্মাণে ধীরগতি ও ভরা মৌসুমে নদীতে বাঁধ দেওয়ায় ঝিনাইদহের অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি। নদীর বুকে দেওয়া ডাইভারশন বাঁধ তুলে নেওয়ার দাবি জানালেও কর্ণপাত করছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ও মহারাজপুর ইউনিয়নে মাঠের পর মাঠ পানিতে থই থই করছে। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর বোরো ধানের ক্ষেত। বিলের পানি বের হয় সিরিসকাঠ খাল হয়ে। সেই খালের সংযোগ ঘটেছে বেগবতী নদীতে। কিন্তু বেগবতী নদীর নলডাঙা বাজার ও কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা বাজারে সেতু নির্মাণের ডাইভারশন বাঁধ রয়েছে। নদীর পানি বের হওয়ার জন্য এ বাঁধে রাখা হয়েছে মাত্র ৩৫ ফুট চওড়া জায়গা। ওপরে দেওয়া হয়েছে কাঠের সেতু। পানির তীব্র স্রোত ও চাপ সৃষ্টি হলে যে কোনো সময় কাঠের সেতুটি ভেসে যেতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।
তবে নদীর বুকে ডাইভারশন বাঁধের কারণে প্রবহমান বেগবতীর উজানে ফুলে উঠেছে পানির স্তর। যার প্রভাবে নদীর স্বাভাবিক স্রোত বইছে না। ফলে নদী তীরের ফসলের মাঠ ও খালবিলের পানি ফসলের মাঠে আটকে আছে দিনের পরদিন। সদর উপজেলার গান্না, হরিপুর, মহারাজপুর, কুলবাড়িয়া, ভাদালডাঙ্গা, বেতাই, কুঠিদুর্গাপুর, ডেফলবাড়ি, বিষয়খালী, কেশবপুরসহ অন্তত ২০টির অধিক গ্রামের ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে।
জানা গেছে, সদর উপজেলার ডাকবাংলা, বাদপুকুরিয়া, মামুনশিয়া, নাথকুণ্ডু, রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামেও দেখা দিয়েছে প্লাবন। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বিল ও খালপাড়ের বাসিন্দারা।
মহারাজপুর গ্রামের কৃষক বিল্লাহ হোসেন বলেন, বিলের পানি নদীতে গেলেও নদীর পানি বইছে ধীরে ধীরে। বেগবতী নদীতে কোলা বাজারে ব্রিজ করার কারণে নদীতে বাঁধ দিয়েছে ঠিকাদাররা। যে কারণে নদী দিয়ে পানি নামছে না। আমরা ধান লাগিয়ে বিপাকে পড়েছি। পানিতে ধান তলিয়ে গেছে। জমিতে গলা সমান পানি।
দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক সুশান্ত কুমার বলেন, খালবিলের পানি নদী দিয়ে বেরিয়ে যাবে। এটাই হওয়ার কথা। এখন বর্ষাকাল, কিন্তু ব্রিজ বানাতে গিয়ে যদি নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়। তাহলে দেশে আইন থেকে কি লাভ? আমরা ধান লাগিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছি। হাজার হাজার কৃষক হাহাকার করছে।
জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার অন্যতম বৃহত্তম বিল হামোদর বিল। এ বিল ও বিল ঘেঁষা মাঠগুলোতে বোরো মৌসুমে অন্তত আড়াই থেকে তিন হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়। কিন্তু এ বছর বিলে জমা বৃষ্টির পানি বেগবতী নদী দিয়ে বের হতে পারছে না। জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নের কোলা বাজারে নির্মাণাধীন সেতুর ডাইভারশন বাঁধের কারণে নদীর স্রোত ও স্বাভাবিক পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বিলের পানি কমছে না।
মহারাজপুর কৃষক সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপক ইউনুস আলী বলেন, ‘বিলের পানি আগে সিরিসকাঠ খাল দিয়ে বের হয়ে বেগবতী নদীতে গিয়ে পড়তো। এখন খাল দিয়ে পানি কিছুটা নামলেও নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে দুই/তিন জায়গায়। বিলের পানি বের হওয়ার জন্য সাময়িকভাবে নদীর বাঁধ তুলে দেওয়ার বিকল্প নেই। কৃষকের কষ্ট আর দেখা যাচ্ছে না।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মিজানুর রহমান কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) আব্দুল খালেক ওরফে আলেক বলেন, ‘নদীতে ডাইভারশন করা হলেও পানি বের হওয়ার জায়গা আছে। তবে পানি একটু কম বের হচ্ছে। ধান যেমন লাগবে, ব্রিজও তো লাগবে।’
প্রবহমান নদীতে ডাইভারশন বাঁধ নির্মাণের নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘৪০ ফুট চওড়া কাঠের ব্রিজ বানানো হয়েছে। যার নিচ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। কিন্তু নদীর প্রস্থ প্রায় দেড়শ ফুট। পানি বের হওয়ার জায়গা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।’
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেদারুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষকরা নদীর ডাইভারশন বাঁধ সম্প্রসারণের জন্য দাবি জানিয়েছেন। আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। দ্রুতই সমাধান হবে বলে আশা করছি।’
এমআর/






