ঠাকুরগাঁও পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালিত
১৯৭১ সালের এই দিনে ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়েছিল। উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও তখন ছিল দিনাজপুর জেলার একমাত্র মহকুমা।
ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় জেলার ১০টি থানা মিলে ছিল এ মহকুমা। এ অঞ্চলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণান্তকর লড়াই ও মুক্তিকামী জনগণের দুর্বার প্রতিরোধে নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই পিছু হটতে শুরু করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। আসে চূড়ান্ত বিজয় আজকের এই দিনটিতে।
পাক হানাদাররা ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠাকুরগাঁওয়ের নিরীহ মানুষের ওপর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে। এ সময় পাক হানাদাররা নির্বিচারে শুরু করে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মত কর্মকান্ড। ১৫ এপ্রিল আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকবাহিনীর দখলে নেয় ঠাকুরগাঁও এবং ঠাকুরগাঁওয়ের বেশ কয়েকজন ছাত্রদের ধরে এনে পাক হানাদার বাহিনীর ঠাকুরগাঁও ক্যাম্পে আটক রাখে এবং তাদের হত্যা করে নদীর পাড়ে ফেলে রাখে। যেখানে বর্তমানে বধ্যভূমির স্মৃতি সংরণাগার গড়ে তোলা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও তখন ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। কমান্ডার ছিলেন বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার এম খাদেমুল বাশার। এ সেক্টরে প্রায় ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিল। ২৯ নভেম্বর এ মহকুমার পঞ্চগড় থানা প্রথম শক্রমুক্ত হয়। পঞ্চগড় হাত ছাড়া হয়ে গেলে পাক হানাদার বাহিনীর মনোবল ভেঙে যায় পরে তারা ঠাকুরগাঁওয়ে প্রবেশ করে।
ঠাকুরগাঁওয়ে ২ ডিসেম্বর রাতে প্রচুর গোলাগুলি হয়। ওই রাতেই শক্রবাহিনী ঠাকুরগাঁও হতে পিছু হাটতে বাধ্য হয় এবং অবস্থান নেয় ২৫ মাইল নামক স্থানে। সেই সাথে ঠাকুরগাঁও শহর ৩ ডিসেম্বর ভোরে শক্রমুক্ত হয়। হানাদার বাহিনী ঠাকুরগাঁও জেলার অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের ও নিরীহ গ্রামবাসীদের বিভিন্ন জায়গায় হতে ধরে এনে ধারালো অস্ত্র ও গুলি করে হত্যা করে। পাক হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা গণহত্যা চালায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা সহ বিভিন্ন গ্রামে।
ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক স্থানে গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, আলবদর ও আল শামসরা। এরই মধ্যে সু-সংগঠিত হতে থাকে ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিকামী মানুষ। তারা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গড়ে তুলে দুর্বার প্রতিরোধ।
পাকবাহিনীর পতনের পর ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর এ এলাকার সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উল্লাস। এদিন সকাল থেকেই ঠাকুরগাঁও শহরসহ জনপদ ও লোকালয়ে মানুষ জড়ো হতে থাকে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায়, করে আনন্দের মিছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে ঠাকুরগাঁও শহর।
সদর উপজেলা আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, আজকের এই দিনে রণাঙ্গনের শহীদ সহযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে বলেন, সবার আগে রিক্সা চালক শহীদ মোহাম্মদ আলী, শহীদ নরেশ চৌহানসহ সকল শহীদ, সুবেদার মেজর কাজিম উদ্দীন, ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ হোসেনের অবদানের কথা ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণারে লেখা থাকবে।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর করিম জানান, ১৯৭১ এর এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় মুক্তিকামী জনসাধারণের প্রতিরোধে প্রাণান্তকর লড়াইয়ের মুখে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর স্বাধীনতা বিরোধীরা প্রাণ ভয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা ছাড়তে বাধ্য হয়।
ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ঠাকুরগাঁও প্রেসকাব, সংস্কৃতিক শিল্পী গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি পালন করেছে।
এমআর/






