হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়
চৈত্রের তাপপ্রবাহে দুর্বিষহ জনজীবন। তাপমাত্রার পারদ স্তম্ভ বেড়েই চলছে, গলতে শুরু করেছে রাস্তার পিচ। অধিক তাপমাত্রা জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, বাড়ছে হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা। তীব্র গরমে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সকল স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
রোববার (২১ এপ্রিল) প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়।
প্রকৃতির এমন বৈরী পরিবেশে প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান কেউ কেউ। খবর পাওয়া যায় পর্যন্ত শনিবার চুয়াডাঙ্গা ও চট্টগ্রামের আনোয়ারায় মোট ২ জন হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন। হিটস্ট্রোকের প্রধান লক্ষণগুলো জানা থাকলে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
হিটস্ট্রোকের প্রধান লক্ষণ
হিটস্ট্রোকের প্রধান লক্ষণগুলো প্রচণ্ড গরমে যখন শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, শরীর থেকে পানি, তরল পদার্থ ও লবণও বেরিয়ে যায় ঘামের মাধ্যমে তখন আমাদের শরীরের রক্তের চাপ কমে যায়। সেই সঙ্গে নাড়ির গতি বেড়ে যায়। শরীর অবসন্ন লাগে, মাথা ঝিমঝিম করে। এ কারণে বমি-বমি ভাব লাগে ও বমিও হতে পারে। অনেকে চোখে আবছা দেখে। মাথা ঘুরতে থাকে। কেউ কেউ অসংলগ্ন কথা-বার্তাও বলে। এগুলো হচ্ছে হিট স্ট্রোকের প্রধান লক্ষণ।
হিট স্ট্রোক হলে কেউ কেউ জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারেন। জ্ঞান হারালে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়
এই গরমের মধ্যে যারা বাইরে বের হলে সঙ্গে একটু খাবার পানি রাখতে হবে এবং যাদের রোদের মধ্যে বেশিক্ষণ থাকার বাধ্যবাধকতা আছে, তারা যদি ওরস্যালাইন নিয়ে বের হন তাহলে ভালো হয়। এক্ষেত্রে একটু পর পর পানি ও ওরস্যালাইন খাবেন এবং প্রস্রাবের রঙ ও পরিমাণের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রস্রাবের রঙ বদলের পাশাপাশি পরিমাণ কমে গেলে পানিসহ তরলজাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
তাপপ্রবাহের সময়টাতে টাইট জামাকাপড় না পরে ঢিলেঢালা সুতি জামাকাপড় পরতে হবে। এ সময় ছাতা নিয়ে বের হলে ভালো হয়। আর যারা শ্রমজীবী, টানা রোদের মধ্যে কাজ করেন তাদের কিছুক্ষণ পর পর বিশ্রামের সঙ্গে পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। সম্ভব হলে ডাবের পানি পান করা ভালো। তবে রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় যে শরবত, পানিয় বিক্রি হয় তা খাওয়া যাবে না। কারণ এই শরবত যে পানি কিংবা বরফ দিয়ে বানানো হয় সেটা কোনোমতেই সুপেয় না।
বয়স্ক মানুষ, অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিশু ও দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভুগতে থাকা সংবেদনশীল মানুষদের নিতান্তই প্রয়োজন না পড়লে বাইরে বের না হওয়া ভালো।
গরমের ভেতর তৃষ্ণা নিবারণে ঠান্ডা পানি পানকরা একেবারেই উচিত না। কারণ, আমাদের গলায় শ্বাসনালীর ওপরের অংশে কিছু সুবিধাবাদী জীবানু বাস করে। সুবিধাজনক অবস্থা পেলেই এরা আক্রমণ করে। যখন চারপাশে গরম তখন হঠাৎ করে ঠান্ডা পানি গলায় গেলে গলার তাপমাত্রা অনেক কমে যায়। এই জীবাণুগুলো তখন সক্রিয় হয়ে ওঠে।
প্রচন্ড গরমে ব্যক্তিগত সচেতনতাই সবাইকে সুস্থ রাখতে পারবে।