রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৮:২১ পূর্বাহ্ন

ফের শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রে জড়ান শিশুসাহিত্যিক টিপু

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৩৭ Time View
Update : বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

শিশুসাহিত্যিক পরিচয় আড়ালে তিনি আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফি অপরাধী চক্রের সঙ্গে যুক্ত টিপু কিবরিয়া। এ অপরাধে জড়িত থাকার কারণে অনেক দেশে তিনি শিশু পর্নোগ্রাফি অপরাধী হিসেবে তালিকাভুক্ত।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার

এর আগে, মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে কামরুল ইসলাম নামে এক সহযোগীসহ টিপু কিবরিয়াকে গ্রেফতার করে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের একটি টিম। মো. আসাদুজ্জামানসিটিটিসি বলছে, শিশু পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট তৈরি ও পাচারের অভিযোগে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ২০১৪ সালের জুনে প্রথম টিপু কিবরিয়াকে গ্রেফতার করে। ২০২১ সালে তিনি কারামুক্ত হন। এরপরও স্বভাব বদলায়নি টিপু কিবরিয়ার।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘রাজধানীর গুলিস্তান, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানের ছিন্নমূল শিশুদের অর্থের প্রলোভনে পর্নোগ্রাফিতে যুক্ত করতেন টিপু কিবরিয়া। কখনও বাসায় নিয়ে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে আন্তর্জাতিক চক্রের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। কখনও চক্রের চাহিদা অনুযায়ী শিশুদের বন-জঙ্গলে নিয়েও ভিডিও ধারণ করতেন। তার বাসায় পর্নোগ্রাফির ভিডিও এডিটিং প্যানেল আছে। সেখানে এডিট করে মেইলে পাঠাতেন, যা পরে বিভিন্ন পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইটে আপলোড করা হতো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে ই-মেইলে ভিডিও পাঠালেও পরে মেগা ও টোটেনা নামে অ্যাপসের মাধ্যমে চক্রেরে কাছে কনটেন্ট পাঠানো হতো। টিপু কিবরিয়ার কাছ থেকে যে ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে তাতে ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিসহ আরও অনেক দেশের গ্রাহকের তালিকা পাওয়া গেছে। যাদের কাছে তিনি ভিডিও কনটেন্ট পাঠিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা পেতেন। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা সব ডিভাইস ফরেনসিক করে আমরা এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার ছবি ও ১ হাজার ভিডিও পেয়েছি। ফরেনসিক বা ফিল্টারিংয়ের কাজ শেষ হলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।’

এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ছবি বা ভিডিও ধারণের বিনিময়ে তিনি শিশুদের মাত্র ৫০০ বা ১ হাজার টাকা দিতেন। কামরুল ছাড়া তার আরও অনেক সহযোগীর নাম আমরা পেয়েছি। তাদের দুজনকে গ্রেফতারের সময় ভুক্তভোগী এক শিশুকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

কনটেন্টের বিনিময়ে টিপু কিবরিয়া কী পরিমাণ টাকা পেতেন, কীভাবে পেতেন জানতে চাইলে ডিএমপির এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘অর্থের লেনদেন হতো ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও কিছু মোবাইল ফিন্যানসিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে। তিন থেকে চারটি ছোট ছোট ভিডিও পাঠালে তিনি পেতেন হাজার ডলার। দেশের বিভিন্ন স্থানে তার এজেন্ট রয়েছে। আমরা বেশ কয়েকজন এজেন্টকে শনাক্ত করেছি। পাশাপাশি ২৫ থেকে ৩০ জনের মতো শিশু শনাক্ত হয়েছে। ভুক্তভোগীরা সব ছেলে। সংখ্যা অনেক।’

সিটিটিসি জানায়, টিপু কিবরিয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষে কিশোর কবিতা, গল্প ও ছড়া ছাড়াও নব্বইয়ের দশকে ‘হরর ক্লাব’ নামে কিশোরদের জন্য সিরিজ গল্প লিখে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সেবা প্রকাশনী থেকে তার এসব লেখা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতো। একসময়ের জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক তিনি। ২০০৫ সালের দিকে শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৪ সালে গ্রেফতার হয়ে ২০২১ সালে কারাগার থেকে বের হন। এরপর আবার জড়ান একই অপরাধে।’

২০১৪ সালে গ্রেফতারের পর সিআইডি কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, টিপু কিবরিয়া টাকার বিনিময়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশের অন্তত আট আন্তর্জাতিক পর্নোগ্রাফি চক্রের কাছে পর্নো ভিডিও ও স্থিরচিত্র পাচার করে আসছিলেন।

ওই সময় ইন্টারপোলের বরাত দিয়ে সিআইডি জানিয়েছিল, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পর্নো ব্যবসায়ী চক্রের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই জড়িত টিপু কিবরিয়া। ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশের শিশু পর্নোগ্রাফি বিদেশে পাচার হচ্ছিল। দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগটির বিষয়ে নজরদারি করে টিপু কিবরিয়াকে শনাক্ত করে ইন্টারপোল। ওই সময় তার বাসায় অভিযান চালিয়ে শতাধিক পর্নো সিডি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্টিল ও ভিডিও ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর